Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Manali Flood

ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে গাড়ি, ট্রাক

পর্বতারোহণের উদ্দেশ্যে দুর্গাপুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন পাঁচ জন। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হল তাঁদের। কেমন অভিজ্ঞতা, লিখছেন এক পর্যটক।

মনালিতে ধসের জেরে ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। ছবি: পর্যটক সৌজন্যে

মনালিতে ধসের জেরে ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। ছবি: পর্যটক সৌজন্যে

উদিত চট্টোপাধ্যায়
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩২
Share: Save:

১০ জুলাই পাহাড়ে প্রথম শুরু হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি। তার পরে এক মাসে আরও কয়েক বার। কার্যত ধ্বংস হয় চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়কের বড় অংশ। বেশি ক্ষতি হয় মান্ডি এবং মানালির। একাধিক জাতীয় সড়ক ধুয়ে দেয় বিয়াস নদী, যাকে বাঙালি ভালবেসে বিপাশা নামে ডাকে। তীব্র স্রোত নদীর গতিপথ বদলে দেয়। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা বাড়ি-হোটেল। ভাসিয়ে নিয়ে যায় গাড়ি-ট্রাক, বাস, গবাদি পশু। মৃত্যু হয় অনেকের। এ সবই দেখেছিলাম টেলিভিশনের পর্দায়। মানালি গিয়ে সেই বিপর্যয়ের বর্ণনা শুনলাম স্থানীয়দের কাছে।

আমার ক্লাব ‘দুর্গাপুর মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জাঁসকর হিমালয়ের লাদাখ অঞ্চলে পর্বতাভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে শৃঙ্গটিকে বেছে নেওয়া হয়, তার নাম ‘ইউটি কাংরি’। উচ্চতা ৬০৬৪ মিটার। আমরা পাঁচ জন পর্বতারোহী ২ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর থেকে রওনা দিই। ট্রেনে চণ্ডীগড়। সেখান থেকে লাদাখের লেহ্‌-র কাছে পৌঁছই মান্ডি আর মানালি হয়ে।

মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে এখন সময় লাগছে ছ’ঘণ্টা! মানালির প্রায় ১০০ কিলোমিটার আগে মান্ডিতে সব গাড়ি থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাত ১০টার পরে একে একে ছাড়া হচ্ছে। মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত প্রকৃতির ধ্বংসলীলা দেখেছি। আমাদের মতো সমতলের বাসিন্দারা তো দূরের কথা, কুলু-মানালি অঞ্চলের বহু প্রবীণ মানুষও জানিয়েছেন, এত বড় বিপর্যয় তাঁরা আগে দেখেননি।

সময় বাঁচাতে পাহাড়ের উপর দিয়ে বিকল্প পথ ধরেছিলাম। তাতেও মানালি পৌঁছতে লেগে যায় প্রায় ১৪ ঘণ্টা। অন্য সময়ে এই পথ পেরোতে সাত-আট ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়, জানালেন আমাদের গাড়ির চালক রাহত খান। ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মানালি পৌঁছই। পর দিন সকালে সেখান থেকে বেরিয়ে যাই বেস ক্যাম্প রুমৎসের উদ্দেশে।

আমাদের ক্লাব বহু সফল অভিযান করেছে হিমাচলের নানা পর্বত শৃঙ্গে। মানালি কার্যত আমাদের কাছে 'সেকেন্ড হোম'। সেই মানালির এমন বিধ্বস্ত চেহারা দেখে কষ্ট পেয়েছি। ইউটি কাংরি শৃঙ্গ জয় করে মানালি ফিরি ৯ সেপ্টেম্বর রাতে। ঘণ্টা তিন বিশ্রামের পরে বেরিয়ে পড়ি।
যেখানে রাস্তার সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেখানে গিয়ে দেখি, নির্মাণ শ্রমিকেরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। আমিও কাজে হাত লাগাই ওঁদের সঙ্গে। তারের খাঁচা তৈরি করা, বিশাল আকারের পাথর সরাতে যে কত পরিশ্রম করতে হয়, তা ওঁদের থেকে বুঝতে পেরেছি!

আমার জীবনে এই শহরের অবদান রয়েছে। প্রায় ৩০ বছর আগে এই শহরেরই এক ‘মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’-এ শিখতে এসেছিলাম পাহাড়ে চড়ার কৌশল। জয় করেছিলাম প্রায় ১৭৩০০ ফুট উচ্চতার ‘ফ্রেন্ডশিপ পিক’। এই শহরের কাছে আমি ঋণী। তার সামান্য কিছু ফিরিয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Manali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy