মৃতার স্বামীর সঙ্গেে কথা বলছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।
স্ত্রীর দেহ নিয়ে ফেরার জন্য প্রশাসনের কাছে একটা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছিলেন গুসকরার হাসমত শেখ। কেউ তাতে কান না দেওয়ায় সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে কাঞ্জনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত স্ত্রী বিউটি বেগম শেখকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার আগে শিলিগুড়ি হাসপাতালেও রেল বা প্রশাসনের তরফে কোনও সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন হাসমত। প্রিয়জনকে হারানোর শোক, মানসিক অস্থিরতা, এতখানি পথ গাড়ি চালানোর ক্লান্তি পেরিয়ে সোমবার রাত ২টোয় গুসকরার ইটাচাঁদার বাড়িতে পৌঁছন তিনি। মঙ্গলবার সকালে হাসমত বলেন, ‘‘কী ভাবে দেহ এনেছি, তা একমাত্র আমিই জানি। একসময় মনে হচ্ছিল আর পারব না। সরকারি ভাবে একটা আম্বুল্যান্স পাওয়া গেলে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হত না।’’
হাসমতের সঙ্গে ছিলেন তিনি যে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, সেখানকারই এক কর্মী শেখ তারিক আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে জখমদের চিকিৎসা চলছে। অনেকের হাত, পা কেটে গিয়েছে। ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আর্তনাদ করছেন সবাই। তার সঙ্গে যাত্রীদের আত্মীয়দের দিশেহারা অবস্থা। এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। আমরাও অনেক ঘুরেছি। কিন্তু কারও সহযোগিতা পাইনি। নিজেদের উদ্যোগেই দেহ আনতে হয়েছে।’’
সোমবার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে ইদে বাড়ি ফিরছিলেন বিউটি। ট্রেনের শেষে জেনারেল কামরায় ছিলেন তিনি। স্বামীই তাঁকে ট্রেনে তুলে দিয়ে যান। মেয়ের সঙ্গে কথাও বলেন ট্রেনে উঠে। তার কিছুক্ষণ পরেই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে। হাসমত জানান, দুর্ঘটনাস্থলের কাছে যেতেই সবাইকে শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে পৌঁছেও স্ত্রীর খোঁজ পাননি। শেষে মোবাইলে স্ত্রীর ছবি দেখানোক পরে মর্গের এক কর্মী জানান, এরকম দেখতে একজনের দেহ এসেছে। হাসমতের অভিযোগ, ‘‘ময়না-তদন্ত করানো থেকে বাড়ি ফেরানো পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কি রেল, কি প্রশাসন কারও সাহায্য পাইনি। রেলের কোনও কর্মী বা আধিকারিককে হাসপাতালে দেখতে পাইনি। নিজের উদ্যোগে সব কিছু করতে হয়েছে। এমনকি, মর্গ থেকে স্ত্রীর দেহ তোলা, নামানোও আমাকেই করতে হয়েছে। পুলিশ শুধুমাত্র দেহ আনার জন্য যেটুকু কাগজপত্র করে দেওয়া প্রয়োজন সেটুকুই করেছে।’’
রাত ২টোতেও ওই বাড়ির সামনে প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছিলেন। দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকা। সোমবার হাসপাতালে হাত থেকে পড়ে মোবাইল ভেঙেছে। এ দিনও চোখেমুখে ক্লান্তি আর আতঙ্কের ছাপ। হাসমত বলেন, ‘‘এই গাড়ি করেই স্ত্রীকে আমার কাছে শিলিগুড়ি পৌঁছে দিয়েছিল জামাই। গাড়িতে দার্জিলিং বেড়ানোর কথা ছিল। কপাল আমার! ওই গাড়িতেই ওর দেহ নিয়ে এলাম।’’
এ দিন মৃতার বাড়িতে যান আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিয় কুমার দাস, মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস, জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায়। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে যা সাহায্য পাওয়ার, করা হবে। ওই পরিবারের পাশে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy