প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন পুণ্যার্থীরা। ট্রাকে ধাক্কা মেরে দুমড়েমুচড়ে গেল একটি চার চাকা গাড়ি। তাতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই গাড়িটির পিছনে ধাক্কা মেরে জখম হলেন আরও ছ’জন যাত্রী। শুক্রবার গভীর রাতে দুর্ঘটনাটি হয়েছে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের রাজগঞ্জ থানা এলাকায়। দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দেহগুলিকে রাজ্যে ফেরানোর ব্যাপারে প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
মৃতদের চার জনেই বাংলার বাসিন্দা বলে খবর। জানা গিয়েছে, প্রয়াগরাজ যাওয়ার পথে ধানবাদের কাছে পথদুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হগুলির কামারহাটি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতার বাসিন্দা। গড়বেতা থেকে প্রয়াগরাজ রওনা দিয়েছিলেন প্রণব সাহা, তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা এবং তাঁদের দুই সন্তান। হুগলির গোঘাট থেকে শ্যামলীর বোন পিয়ালী সাহা-সহ মোট ১১ জন গাড়িতে ওঠেন।
শুক্রবার রাত ১টা চল্লিশ নাগাদ পথদুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁদের গাড়িটি। মৃত্যু হয়েছে প্রণবের (৪২), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী (৩৪) এবং পিয়ালির। এ ছাড়া গাড়ির চালক শেখ রাজন আলির মৃত্যু হয়েছে। তিনি কামারপুকুরের বাসিন্দা। গুরুতর আহত হয়েছে প্রণব ও শ্যামলীর ৪ বছরের মেয়ে অন্বেষা সাহা, ছেলে বাবলু সাহা। এ ছড়াও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কামারপুকুরের বাসিন্দা বিশ্বরূপ সাহা, আগমনী সাহারা। তাঁরা ধানবাদের জে পি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে ধাক্কা মারে। ওই গাড়িটির পিছনে ছিল আর একটি গাড়ি। সেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির পিছনে ধাক্কা মারে। প্রথম গাড়িটি ট্রাকে ধাক্কা মারার পরে গাড়িতে থাকা চার যাত্রী গুরুতর জখম হন। পিছনের গাড়িতে ছিলেন ছ’জন যাত্রী। তাঁরাও আহত হন।
আরও পড়ুন:
জানা যাচ্ছে, আহতদের সকলকে উদ্ধার করে ধানবাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চার জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ধানবাদ হাসপাতালে দেহগুলির ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে খবর। চেষ্টা চলছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের। বাকি ছয় আহতের চিকিৎসা চলছে। সকলের নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।
রাজগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক আলিশা কুমারী বলেন, ‘‘রাত ১টা ১৫ মিনিটে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাংলার আট পুণ্যার্থী একটি এসইউভি-তে প্রয়াগরাজ যাচ্ছিলেন। তাঁদের গাড়িটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে ধাক্কা মারে। তাতে চার জন যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যান।’’
কুম্ভে যাওয়ার পথে ধানবাদে এ নিয়ে দ্বিতীয় দুর্ঘটনা হল। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুর থেকে একদল পুণ্যার্থী কুম্ভস্নান সেরে বাসে বাড়ির ফেরার পথে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। বাসটির সঙ্গে লরির সংঘর্ষ হয়। আহত হন অন্তত ১৮ জন যাত্রী।
শুক্রবারের দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ধানবাদ থানার রাজগঞ্জে। আমরা ওখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যাতে দ্রুত ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা যায়, দেখছি।। আহতদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়েও আমরা চেষ্টা করছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আছি।’’
শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ওই দুর্ঘটনায় আরও মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় হয়েছে। দুই শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছে।