Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

২১৯ কোটি টাকা পড়ে পঞ্চায়েতে

উন্নয়ন খাতের ওই টাকা ৩১ মার্চের মধ্যে খরচ করতে হত। পঞ্চায়েতের তহবিলে টাকা কেন পড়ে রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘লকডাউন হয়েছে মার্চের শেষ সপ্তাহে। তা হলে ধরেই নেওয়া যায়, সারা বছর পঞ্চায়েতগুলি কোনও কাজ করেনি। সামাজিক উন্নয়নের কথা ভাবতে পারছে না তৃণমূল। সে জন্যই টাকা পড়ে থাকছে।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

জেলার ২১৫টি পঞ্চায়েত মিলিয়ে উন্নয়ন খাতে জমা ছিল মোট ৪৯১ কোটি টাকা। আর্থিক বছর শেষে সব মিলিয়ে ২১৯ কোটি টাকারও বেশি পঞ্চায়েতের ভাণ্ডারে পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে গড়ে পঞ্চায়েত পিছু এক কোটি টাকারও বেশি উন্নয়নের কাজ করা যায়নি।

উন্নয়ন খাতের ওই টাকা ৩১ মার্চের মধ্যে খরচ করতে হত। পঞ্চায়েতের তহবিলে টাকা কেন পড়ে রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘লকডাউন হয়েছে মার্চের শেষ সপ্তাহে। তা হলে ধরেই নেওয়া যায়, সারা বছর পঞ্চায়েতগুলি কোনও কাজ করেনি। সামাজিক উন্নয়নের কথা ভাবতে পারছে না তৃণমূল। সে জন্যই টাকা পড়ে থাকছে।’’

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার বাসিন্দা, রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামের মানুষের উন্নয়নের জন্যে টাকা দেবেন। সে টাকা পঞ্চায়েতের তহবিলে আটকে থাকবে, এটা হতে পারে না। মানছি, ‘লকডাউন’-এর জন্য কাজ আটকে ছিল। এ বার সেই সব কাজ দ্রুত শুরু করতে জেলা পরিষদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার বক্তব্য, ‘‘কোনও পঞ্চায়েত ৯৭ শতাংশ কাজ করেছে, তো কোনও পঞ্চায়েত ১৩ শতাংশ কাজ করেছে। জেলার গড় খরচের চেয়েও অনেক পঞ্চায়েত পিছিয়ে রয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য পঞ্চায়েত স্তরে আমরা উন্নয়নের কাজে নজরদারির কথা ভাবছি।’’

জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় তহবিল, বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদান, রাজ্য সরকারের অনুদান ও পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে গ্রামোন্নয়নের কাজ করে থাকে পঞ্চায়েতগুলি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, চতুর্দশ অর্থ কমিশন বাবদ পঞ্চায়েতগুলির হাতে ছিল মোট ১৫৪ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ওই খাতে পেয়েছে ২৪৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। মোট ৩৯৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদান বাবদ গত বছরের ৬ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা পঞ্চায়েতগুলির কাছে পড়েছিল। এ বছর আরও ৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা মিলেছে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া গত বছরের ১৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার সঙ্গে এ বছর যোগ হয়েছে ২৪ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৫০ শতাংশ। এর সঙ্গে, পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব তহবিলের খাতায় রয়েছে ৩৯ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে ৭৩.৩৫ শতাংশ খরচ হয়েছে। সব তহবিল মিলিয়ে, ৪৯১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার মধ্যে ৫৫.৩৮% টাকা খরচ হয়েছে। পড়ে রয়েছে ২১৯ কোটি ২৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।

ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নবগ্রাম (১২.০৭%), কেতুগ্রাম ১ ব্লকের পালিটা (১৩.৭৫%)-সহ ছ’টি পঞ্চায়েত ২৫ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি। ৭১টি পঞ্চায়েত প্রায় ৫০ শতাংশ টাকা খরচ করতে পারেনি। জেলায় গড় খরচের (৫৫.৪৫%) চেয়ে ১০২টি পঞ্চায়েত পিছিয়ে রয়েছে। তেমনই ভাতারের মহাচান্দা (৯৭.৫৫%), গলসি ১ ব্লকের আদ্রা (৯৭.২৯%), মেমারি ২ ব্লকের বোহার ২ (৯২.৯০), রায়না ১ ব্লকের শ্যামসুন্দর (৯২.৩২), মন্তেশ্বরের বামুনাড়ার (৯৩.০৭%) মতো ১৪টি পঞ্চায়েত ৮০ শতাংশের বেশি টাকা খরচ করেছে। পঞ্চায়েত স্তরে দু’কোটি টাকারও বেশি তহবিলে পড়ে রয়েছে আউশগ্রামের অমরপুর, রামনগর, ভাতারের বামুনাড়া, ভাতার, নিত্যানন্দপুর, বর্ধমান ১ ব্লকের বেলকাশ, সরাইটিকর, গলসির ভুঁড়ি, জামালপুরের জারগ্রাম, মেমারির দেবীপুর, দুর্গাপুর, পূর্বস্থলীর নিমদহ, মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রামে।

বিজেপির তোলা ‘সারা বছর পঞ্চায়েতগুলি কাজ করেনি’— এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘আপাতদৃষ্টিতে টাকার পরিমাণ বেশি দেখালেও বাস্তবে এত টাকা পড়ে নেই। অনেক পঞ্চায়েত উন্নয়নের কাজ করেছে। লকডাউন-সহ নানা কারণে খরচের হিসাব ‘আপলোড’ করতে পারেনি।’’ তিনি জানান, মন্ত্রীর নির্দেশে পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের সঙ্গে বৈঠক করে, উন্নয়নের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে বৈঠক করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

panchyat lockdown Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy