এই রাস্তায় হয়েছে ছিনতাই। উঠেছে পুলিশি টহলের দাবি। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও কারখানার গেটে পাথর ছোড়া, কখনও কর্মীদের মেরেধরে টাকা ছিনতাই। কখনও আবার লোহার যন্ত্রপাতি হাপিস করে দেওয়া। দুর্গাপুরের রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুক ও আশপাশের এলাকায় দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য দিন-দিন বেড়ে চলছে বলে অভিযোগ নানা কারখানার শ্রমিক-কর্মীদের। সোমবার বিকেলে এক কারখানার ঠিকা সংস্থার কর্মীদের বেতনের টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে শিল্পতালুকের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আবার এক বার সামনে এল বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
সোমবার বিকেলে শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি কারখানার ঠিকা সংস্থার কর্মী ছোটন রায় শ্রমিকদের বেতন বাবদ বেশ কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে মোটরবাইকে চড়ে কারখানায় যাচ্ছিলেন। পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, ডিপিএল কলোনির রাস্তা ও হ্যানিম্যান সরণির সংযোগস্থলে মুখে কাপড় বাঁধা তিন দুষ্কৃতী রাস্তা আটকালে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। দুষ্কৃতীরা তাঁকে রড দিয়ে মেরে হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এই ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার বন্ধ কারখানা থেকে লোহার যন্ত্রাংশ সরাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। হামলা চালাচ্ছে চালু কারখানায়। অবিলম্বে এ সব বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বাসিন্দারা জানান, বিকেলে যে সময়ে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, তখন যথেষ্ট আলো থাকে। তাঁরাও এই রাস্তা হামেশাই ব্যবহার করেন। তাই এ ধরনের ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত।
যে কারখানার কর্মীদের বেতন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই নির্দিষ্ট সময়ে বেতন মিলছিল না বলে অভিযোগ কর্মীদের। এ মাসেই নির্দিষ্ট ১০ তারিখে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাঁরা হতাশ। কর্মী শ্রীকান্ত মণ্ডল, সুকুমার বাউরিদের বক্তব্য, “সময়ে বেতন এ বারও পাওয়া হল না। জানি না কবে বেতন মিলবে।” কারখানা সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, অগস্ট থেকে কারখানায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। সে জন্য উৎপাদন বন্ধ ছিল। জানুয়ারি থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাই এখন থেকে আবার নির্দিষ্ট সময়েই বেতন দেওয়ার ব্যাপারে তৎপর হয়েছে ঠিকাদার সংস্থা। কারখানার এক আধিকারিক বলেন, “সময়ে বেতন না পাওয়া কাঙ্খিত নয়। ঠিকাকর্মীদের বেতন দেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। পুরো ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” তবে তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ঠিকাদার সংস্থার তরফে সোমবারের ঘটনা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।
এই এলাকায় দুষ্কর্মের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। কিছু দিন আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে স্থানীয় একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের কর্মীদের মারধরের একাধিক ঘটনার কথা জানান। কারখানার তরফে জানানো হয়, ১৩ ফেব্রুয়ারি কারখানার গেটে পাথর ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। এর পরে এক কর্মীকে বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ফের একই রকম ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত হন এক নিরাপত্তাকর্মী। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় বন্ধ কল-কারখানা থেকে লোহার যন্ত্রপাতি হাপিস করতে শুরু করেছে অবৈধ লোহা কারবারিরা। প্রকাশ্যে রিকশা ও সাইকেলে করে লোহার যন্ত্রপাতি নিয়ে চম্পট দিচ্ছে তারা। আরও অভিযোগ, আগে এলাকায় জোরদার পুলিশি টহল থাকায় লোহা কারবার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এখন আর তেমন টহল নজরে আসে না। ফলে, লোহা কারবারিরা অবাধে ‘কাজ’ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চায়নি। কোকওভেন থানার এক আধিকারিকের দাবি, বড় এলাকা। সব সময় সব জায়গায় পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। খবর পেলেই পুলিশ গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। তিনি জানান, যে সমস্ত জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে সেখানে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy