নিহত অমিতাভ পাঁজার বাড়িতে মুকুল রায়। সন্তান কোলে শোকার্ত কেকাদেবী। ছবি: রানা সেনগুপ্ত।
থমথমে গ্রামে মুখু কুলুপ এঁটেছেন সকলে। রাস্তায় মাঝে-মধ্যে যে দু’এক জনের দেখা মিলছে, এক রাত আগের গোলমালের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন শুনলে মুখ ফিরিয়ে পা চালালেন তাঁরাও।
শুক্রবার রাতে তৃণমূল-সিপিএম গোলমালে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু, তার জেরে শনিবার সিপিএমের লোকজনের বাড়িতে হামলার অভিযোগে পরে রবিবার হাটগোবিন্দপুরের চিত্রটা ছিল এমনই। কর্মী খুনে মোট ৫৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। তাদের সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও ও আগুন লাগানোয় ৪৫ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে সিপিএম। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারই ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নতুন করে আর কাউকে ধরা যায়নি। বর্ধমান থানার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে ১৩ জন সিপিএম এবং তিন জন তৃণমূল সমর্থক।
সংঘর্ষে নিহত তৃণমূল কর্মী অমিতাভ পাঁজার দেহ এ দিনই দুপুরে এসে পৌঁছয় গ্রামে। এ দিন হাটগোবিন্দপুরে সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। পরে নিহতের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে যান তিনি। মুকুলবাবু সভায় পৌঁছতেই উপস্থিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা দাবি তোলেন, “হত্যাকারীদের সাজা দিতে হবে। এই খুনের বদলা নিতে হবে।” মুকুলবাবু তাঁদের শান্ত করে বলেন, “বদলা পুলিশ দিয়ে ও ভাবে নেওয়া যাবে না। বদলা নিতে হবে ৩০ তারিখ। এই জেলায় সিপিএম নেতারা ফের উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছেন। কিছু কথাও বলছেন। ৩০ তারিখ এমন করে বদলা নিন, যাতে ওঁদের উঁকিঝঁকি মারা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।” পুলিশের উদ্দেশ্যে জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “আপনারা ৩০ তারিখ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তার পরেই ফের কিন্তু রাজ্য সরকারের কর্মচারী হয়ে যাবেন। সারা জীবন নির্বাচন কমিশন আপনাদের দেখবে না। তাই অমিতাভ পাঁজার খুনে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করুন। গ্রেফতার আপনাদের করতেই হবে।”
দুপুরেই গ্রামের শ্মশানে শেষকৃত্য হয় অমিতাভবাবুর। মুকুলবাবু তাঁর বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যেরা খুনের সঙ্গে জড়িতদের কড়া শাস্তি, নিহতের এক নিকটাত্মীয়ের চাকরির ব্যবস্থার দাবি জানান। মুকুলবাবু বলেন, “সে তো সবই করা হবে। কিন্তু যে চলে গেল তাঁকে তো আর ফেরানো যাবে না।” নিহতের স্ত্রী কেকা পাঁজার হাতে তিনি এ দিন দলের তরফে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী কাকলী তা-র দাবি, “এলাকার গরিব মানুষকে সিপিএমের পাশ থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন অমিতাভ। সিপিএম ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে পড়ছিল। তাই আমাদের ওই নেতাকে সরিয়ে দিল ওরা।”
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, শুক্রবার রাতে তৃণমূলের লোকজনই প্রথমে গ্রামের কিছু বাড়িতে হামলা চালায়। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অভিযোগ করেন, ওই রাতে অমিতাভ পাঁজার নেতৃত্বে তাঁদের এক যুব নেতার বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূলের লোকজন। ওই যুব নেতার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা হলে চিৎকার-চেঁচামেচিতে লোক জড়ো হয়ে যায়। হামলাকারীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বাধলে অমিতাভবাবু জখম হন। তারই পরিণতিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে বিমানবাবুর দাবি।
এ দিন নিহতের স্ত্রী কেকাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “রাতবিরেতে বাড়িতে যে মানুষেরা ছুটে আসতেন, তাঁদের উপকার করতেন আমার স্বামী। তাঁকে যে এমন নৃশংস ভাবে খুন হতে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। ওরা আমার স্বামীকে বিষ তির দিয়ে মারল। ও মাটিতে পড়ে যেতেই টাঙ্গি দিয়ে কোপ মারল। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সেই লোকেদের নাম বলে গিয়েছে। তাদের শাস্তি চাই। না হলে আমার তিন মাসের ছেলের কাছে মুখ দেখাতে পারব না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy