সাধুয়াপোতায় এ ভাবেই বাঁশঝাড়ের মাঝে বাজি লুকিয়ে রাখা হয়। নিজস্ব চিত্র।
মৃত্যুতেও ভবি ভোলেনি। দু’টি প্রাণ গেলেও পূর্ব মেদিনীপুরের বাজি-হাবগুলি থেকে এ বারে বাইরে গিয়েছে দেদার নিষিদ্ধ শব্দবাজি। পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য কেউ ব্যবহার করেছে বিস্কুটের বাক্স, কেউ ডিমের পেটি। তার পরে মূলত মোটরবাইকে চাপিয়ে বা নদীপথে তা পাচার করা হয়েছে ভিন্ জেলায়।
কালীপুজো, দীপাবলির ঠিক মুখে পাঁশকুড়ার সাধুয়াপোতা গ্রামে বাজি বিস্ফোরণে এক নাবালক ও এক মহিলার মৃত্যু হয়। তার পরেই পুলিশি তৎপরতা বাড়ে। জেলা জুড়েই লাগাতার বাজি অভিযান চলেছে, হয়েছে ধরপাকড়। সে সবের জেরে এ বার জেলায় কালীপুজোয় বাজি বেশ কমই ফেটেছে। তবে কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, বাজি বিক্রিতে খুব একটা ভাটা পড়েনি। দাবি, এ ক্ষেত্রে কৌশল বদলেছেন বেআইনি বাজি কারবারিরা। পুলিশের নজরদারি এড়াতে জেলার খুচরো বাজারের পরিবর্তে অন্য জেলায় পাইকারি দরে বাজি বিক্রি করা হয়েছে। আর গোটাটাই করা হয়েছে লিঙ্কম্যানের মাধ্যমে, খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটে।
সাধুয়াপোতায় বিস্ফোরণ হয় ১১ অক্টোবর। তত দিনে জেলার ‘বাজি-হাব’গুলিতে প্রচুর বাজি তৈরি ও মজুত হয়ে গিয়েছে। পুলিশি অভিযানে তার অনেকটা উদ্ধারও হয়। কিন্তু তার থেকেও বেশি বাজি ‘পাচার’ হয়ে যায় মূলত হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনায়। পাঁশকুড়ার পশ্চিম চিল্কা গ্রাম যেমন ‘বাজি হাব’ বলেই পরিচিত। স্থানীয়রা জানালেন, পুলিশ অভিযান করার আগেই বাজির কারবারিরা লিঙ্কম্যানের মাধ্যমে বিস্কুটের বাক্স, ডিমের পেটিতে ভরে পাইকারি দরে সব শব্দবাজি হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে দেন।
কোলাঘাটের পয়াগ গ্রামের একটি পাড়াতেও কয়েক দশক ধরে বাজি তৈরি হয়। এ বার সাধুয়াপোতা কাণ্ডের পরে বাড়তি সতর্ক ছিলেন এখানকার কারবারিরাও। গ্রামবাসীদের দাবি, এ বার আর পয়াগে বাজি নিয়ে যেতে বড় কোনও গাড়ি আসেনি। বেশিরভাগ বাজি খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটে ভরে মোটরবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখান থেকে বাজি গিয়েছে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলায়। জেলার কিছু বাজারে বাজি গিয়েছে ঠিকই, তবে খুবই কম।
জেলার মধ্যে পটাশপুরের শ্রীরামপুর, অমর্ষি, চিস্তিপুর, বড়হাট ইত্যাদি এলাকাতেও শব্দবাজি তৈরি হয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পুলিশি নজরদারি এড়াতে রাতারাতি সব বাজি কেলেঘাই নদী পার করে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে পাঠানো হয়েছে। খেজুরির রামচক এবং কাঁথি-১ ব্লকের সিলামপুরে মূলত আতশবাজি তৈরি হয়, এবং তা যায় মূলত কাঁথি এবং দিঘায়। তবে কালীপুজোয় এ বার কাঁথি ও দিঘা এলাকায় দেদার শব্দবাজিও ফেটেছে। জেলায় এত কড়াকড়ির পরেও এখানে শব্দবাজি এল কোত্থেকে?
স্থানীয় সূত্রে খবর, কালীপুজোর আগে পড়শি ওড়িশা থেকে এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণ শব্দবাজি ঢুকেছে। পুলিশি নজরদারির মধ্যে বাজি ঢুকল কী ভাবে? জানা যাচ্ছে, এখানেও একই কৌশল নিয়েছিলেন বাজি কারবারিরা। একাধিক লিঙ্কম্যান দিয়ে খাদ্যবস্তুর প্যাকেটে ভরে বাইকে অল্প অল্প করে বাজি আনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘ওড়িশা সীমানায় নজরদারি ছিল। তবে শুধুমাত্র বেশি পরিমাণ সন্দেহজনক বস্তু দেখেই তল্লাশি করা হয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলছেন, ‘‘আমরা বাজি তৈরির সব জায়গা ও বাজারে অভিযান চালিয়েছি। বাজি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাই এ বার জেলায় বাজি কমই ফেটেছে।’’ পাশাপাশি তিনি মেনে নেন, ‘‘তবে বাজি পাচারের কৌশলের দিকে ভবিষ্যতে নজর থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy