তিন অভিযুক্তকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
তদন্তের দায়িত্ব নিয়েই বাঁকুড়ার শিশুপাচার-কাণ্ডের মূল তিন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিল সিআইডি। জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া, সতীশ ঠাকুর এবং স্বপন দত্তকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য শনিবার বাঁকুড়া জেলা আদালতে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য গোয়েন্দা দফতর। অভিযুক্তদের পাঁচ দিনের সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শনিবার সিআইডি-র একটি দল জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। তদন্তকারীরা বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর তাঁরা অধ্যক্ষ এবং আরও এক অভিযুক্ত শিক্ষিকা সুষমা শর্মার আবাসন ঘুরে দেখেন। কথা বলেন অভিযোগকারী স্থানীয় বাসিন্দা ষষ্ঠী বাউড়ির সঙ্গে। অন্য দিকে, এই ঘটনায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত সতীশের বক্তব্যে নতুন করে রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে।
শনিবার আদালত চত্বরে সতীশ বলেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক শত্রুতা করা হয়েছে। এই শত্রুতা করেছেন তৃণমূলের সন্দীপ বাউড়ি।” সতীশের অভিযোগের তির তৃণমূলের বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি সন্দীপের বিরুদ্ধে।
তবে সন্দীপ ওই অভিযোগ নস্যাৎ করে পাল্টা বলেন, “সতীশ এখন বিজেপি নেতাদের শেখানো কথা বলছেন। তাঁর কিছু বলার থাকলে তিনি প্রথমেই এ কথা বলতে পারতেন। এখন যখন তৃণমূল অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নেমেছে, তাই তিনি এ ধরনের কথা বলছেন। সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তেই উঠে আসবে আসল সত্য।”
শিশুপাচারের ঘটনার অভিযোগকারী ষষ্ঠীও রাজনৈতিক শত্রুতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাকে দিয়ে তৃণমূল অভিযোগ করায়নি। আমি তৃণমূলের হয়েও অভিযোগ করিনি। চোখের সামনে দেখেছিলাম অধ্যক্ষ দুই শিশুকে একটি গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছিলেন । বিষয়টি শিশু পাচারের ঘটনা বলে মনে হওয়ায় অভিযোগ করেছিলাম । সে দিন কী ঘটেছিল তা আমি সিআইডির তদন্তকারীদের কাছে জানিয়েছি।”
গত রবিবার বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের কালাপাথর এলাকায় শিশুপাচারের ঘটনা সামনে আসে। ওই দিনই এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমল-সহ আট জন। পরে এই ঘটনায় আরও এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে এই ঘটনায় তিন মূল অভিযুক্তকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেয় পুলিশ। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে শুক্রবার নিজেদের হাতে তদন্তের দায়িত্ব তুলে নেয় সিআইডি।
শুক্রবার বাঁকুড়া সদর থানায় তিন অভিযুক্তকে ম্যারাথন জেরার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেন সিআইডি আধিকারিকরা। এর পাশাপাশি জেল হেফাজতে থাকা এই ঘটনার অন্য ছয় অভিযুক্তকেও সিআইডির তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন বলে সূত্রের খবর। শিশু পাচারেরর খুঁটিনাটি জানতে উদ্ধার হওয়া পাঁচ শিশুর সঙ্গেও কথা বলতে পারেন তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, শিশুপাচারের ঘটনায় জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ গ্রেফতার হতেই তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের নারী, শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। ওই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমলকুমার রাজোরিয়ার সঙ্গে বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারের একটি ছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট করে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার পর থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy