গত শুক্রবার কোচবিহারের শীতলখুচি সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে কথা বলতে চান! সমাজমাধ্যম ও লোকমুখে এই ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ার পরেই কোচবিহারের শীতলখুচি সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। কাঁটাতারের ও-পারের গ্রামের বাসিন্দা ও প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে এমনই দাবি করা হল বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে।
জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ির পর কোচবিহারের শীতলখুচির সীমান্তেও কাঁটাতারের ও-পারে বাংলাদেশি নাগরিককে জড়ো হতে দেখা গিয়েছিল গত শুক্রবার। কাঁটাতারের ঠিক ও-পারেই বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধার অন্তর্গত উত্তর গোতামারি গ্রাম। সেই গ্রামের গোয়াশ্মশানঘাটের পাশে খরপো নদী (এ-পারে খর্বা বলেও পরিচিত)। সেখান থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া। সকাল থেকে সেখানেই জড়ো হয়েছিলেন অন্তত হাজার জন বাংলাদেশি নাগরিক। এ-পারে পাঠানতলি গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি ছিল, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশি নাগরিকদের মুখে। এ-ও দাবি, চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বোঝা যাচ্ছিল, তাঁরা ভারতে ঢুকতে চান। কিন্তু বিএসএফ অবশ্য তাঁদের কাউকেই সীমান্ত পেরোতে দেয়নি। সন্ধ্যার পরে অবশ্য ভিড় মিলিয়ে যায়। বাড়ি ফিরে যান বাংলাদেশি নাগরিকেরা।
সোমবার ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মূলত ‘গুজবে’ কান দিয়ে গোতামারির জ়িরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা। গুজব ছিল— ভারতীয় নেতারা নাকি কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন! তবে বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি। ভারতের কোনও নেতাই সীমান্তে আসেননি। ‘প্রথম আলো’র দাবি, উত্তর গোতামারি গ্রামের অন্তত ১০ জন বাসিন্দা এই গুজবের কথা নিশ্চিত করেছেন। শাহ আলম নামে উত্তর গোতামারী গ্রামের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘দূরদূরান্ত থেকে লোক এসেছিলেন। প্রথমে ওঁরা সীমান্তের কাছে জড়ো হন। পরে বিএসএফের সঙ্গে দেখা করতে নদীতে নেমে যান কয়েক জন। ওঁরা নাকি ফেসবুকে দেখেছিলেন যে, উত্তর গোতামারির শ্মশানঘাটে ভারতীয় নেতারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারতীয় কেউ সেখানে আসেননি। শুধু বিএসএফ ছিল। পরে স্থানীয় বিজিবি ও বিএসএফ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ফেরত পাঠায় ওঁদের।’’
‘প্রথম আলো’য় দাবি, ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন গোতামারি ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা জাতীয় পার্টির নেতা আবুল কাশেম বলেছেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখলাম। লেখা ছিল, ‘আপনারা এই উত্তর গোতামারী শ্মশানঘাটে আসুন। মিটিং হবে।’ ফেসবুকের এই পোস্টের কারণেই সকাল থেকে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছিলেন বলে মনে হচ্ছে।’’ সনজিৎ নামে উত্তর গোতামারির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নেতাও ‘প্রথম আলো’র কাছে একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি হাজার হাজার লোক আমাদের সীমান্তে কাঁটাতারের কাছে জড়ো হয়েছিলেন। ওঁদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছিলাম, ভারতকে জানানোর জন্যই এখানে এসেছিলেন ওঁরা।’’
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। গত বুধবার জলপাইগুড়ির দক্ষিণ বেরুবাড়ি সীমান্তের ও-পারে বহু মানুষ জমায়েত করেছিলেন। ভারতে আসতে চাইছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিএসএফ কাউকেই ভারতে প্রবেশ করতে দেয়নি। তার পরেই শীতলখুচি সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমায়েতের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে ভিড় বাড়তেই এলাকায় অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করেছিল বিএসএফ। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কোচবিহারের গোপালপুর সেক্টরের ডিআইজি কে ডি যাদব-সহ পদস্থ কর্তারা। বিএসএফ সূত্রে খবর, ও-পারে থাকা বাংলাদেশিদের আশ্বস্ত করে ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল বিজিবি-ও (বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী)। এ নিয়ে রবিবার সাংবাদিক বৈঠকও করেছে তারা।
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে দাবি, গত শুক্রবার কাঁটাতারের কাছে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের আশপাশের এলাকারই বাসিন্দা। গত সপ্তাহে সোমবার তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চলেছিল। অনেক বাড়ি জ্বালিয়েও দেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যখন শুনেছিলেন যে, ভারতের নেতারা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চান, ছুটে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কী ভাবে সেই খবর পেয়েছেন তাঁরা, নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারেননি। ‘প্রথম আলো’কে হাতিবান্ধার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অশ্বিনীকুমার বসুনিয়া বলেছেন, ‘‘আমার বাড়ির পাশ দিয়ে কিছু লোককে ভারত সীমান্তের দিকে যেতে দেখে জানতে চাই, ওঁরা কোথায় যাচ্ছেন? জবাবে ওঁরা জানান, বিএসএফ ওঁদের ডেকেছে। পরে সীমান্তে গিয়ে দেখি, অনেক লোক জড়ো হয়েছেন। বিএসএফের ডাকার বিষয়টি গুজব। পরে ওঁদের বুঝিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে বলি।’’
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সীমান্তের পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তর গোতামারি গিয়েছিলেন জেলাশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ এবং পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। পরে জেলাশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেছেন, ‘‘আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা নির্দিষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না। কেউ বলছেন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ওঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’’ ঘটনাস্থলে ছিলেন গোতামারির চেয়ারম্যান মোনাবেরুল ইসলামও। তিনিও ‘প্রথম আলো’কে বলেছেন, ‘‘আমার এলাকার দু-একজন ছাড়া সবাই বাইরের। কেন এসেছে জানতে চাইলে ওঁরা বলছিল, ও-পারে ভারতের লোকজন আসবে। ওঁদের সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু কী বিষয়ে কথা বলবে, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy