জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানের বাড়িতে এল পুলিশ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
তিনি আসতেন সাত সকালে, ঘড়ি ধরে ঠিক সাতটায়।
পাড়া পড়শিরা জানাচ্ছেন, সুনীতাকে দেখে দিব্যি ঘড়ি মিলিয়ে নেওয়া যেত, সাতটার এক মিনিট দেরি হত না তার! ফিরে যেত বেলা এগারোটায়।
বন্ধুপ্রকাশ পালের লেবুবাগানের বাড়ির সেই পরিচারিকা মধ্য ষাটের সুনীতা দাস দশমীর সকালে সাতটায় পাল বাড়িতে এলেও ফিরে গিয়েছিল দশটার আগেই। প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা ধরে তাঁকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দিন বন্ধুপ্রকাশের স্ত্রী বিউটি তাঁকে বার বার তাড়া দিয়ে দশটার মধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
বেশ কয়েক মাস আগে ওই শিক্ষকের বাড়িতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সুনীতা। বাসন মেজে, ঘর-দোর ঝাঁট দিয়ে, রান্নায় বিউটিকে সাহায্য করে, আনাজ কেটে, জল তুলে ফিরতেন এগারোটা নাগাদ।
পড়শিদের সঙ্গে পাল পরিবারের অন্যরাও বলছেন, ‘‘আনাজপাতি কেটে দেওয়া, মশলা বাঁটা সবই করত সুনীতা। তার পর বন্ধুপ্রকাশ খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফের এক দফা বাসন মেজে ১১টা নাগাদ চলে যেত ওই কাজের মাসি।’’
পুলিশি জেরায় সুনীতা জানান, সে দিন বড় দু’টি নারকেলও কুরে দিয়ে ছিলেন তিনি। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘নারকেল ভাঙার পর ওই কাজের মাসিকে বার বার চলে যেতে বলেন বিউটি। হঠাৎই এমন তাড়া দেওয়ায় ওই মহিলা নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দশটার খানিক আগেই চলে গিয়েছিলেন তিনি।’’
পুলিশের প্রশ্ন? কোনও দিন বাড়ি যেতে বলেননি বিউটি, কিন্তু সে দিনই কেন বললেন? খোঁজ নিয়ে পুলিশ দেখেছে, আলু ফুলকপি ভাজা, বড় আকারের কোনও কাটা মাছ নুন-হলুদ মাখানো ছিল, কুচো মাছও ভাজা বাকি ছিল। অন্তত চার রকমের পদ রান্না বাকি থাকতেই ওই মহিলাকে কেন বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বিউটি তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। পুলিশকে সুনীতা বলেন, ‘‘বৌদি বার বার তাড়া দিচ্ছিলেন, বলছিলেন, ‘ও আমি সামলে নেব, আজ তুমি যাও মাসি!’’
এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘হিসেব অনুযায়ী কাজের পরিমাণ অনেকটাই। বিউটি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এত কাজ থাকা সত্বেও কেন কাজের মাসিকে বাড়ি যেতে বললেন তা ভাবাচ্ছে বৈকি!’’
ওই পুলিশ কর্তা জানান, এ ব্যপারে ওই মহিলাকে বার বার জেরা করায় তিনি চটেও যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘না করেও তো উপায় নেই! কোথাও ফাঁক থেকে গেল কি না দেখতে হবে তো।’’
রবিবার, ওই মহিলার সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়া হয় সৌভিককে। তবে, প্রায়-বৃদ্ধা সুনীতা বেশ কিছুক্ষণ সৌভিকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন, ‘‘না একে দেখিনি তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy