মুখোমুখি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফেসবুক
সিবিআই অফিসে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে দেখে তিনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে জানালেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। চলে যেতে বলেছিলেন ছেলে সপ্তর্ষিকেও। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া ‘সাক্ষাৎকার’-এ শোভন এমনটাই জানিয়েছেন। শনিবার রাতে নিজের ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন বৈশাখী যেখানে দেখা যাচ্ছে একেবারে সাক্ষাৎকারের ভঙ্গিতেই বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন শোভন। মাঝে মাঝে বৈশাখীও জুড়ে দিচ্ছেন শোভনের কিছু না বলা প্রসঙ্গ। সেই ভিডিয়োতে স্ত্রী রত্না থেকে ছেলে ঋষি (সপ্তর্ষির ডাক নাম), শ্বশুরমশাই তথা মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাস সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন শোভন। তবে বেশি করে বলেছেন রত্না সম্পর্কে।
আদালত গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দিলে স্ত্রী রত্না না, বান্ধবী বৈশাখীর কাছে শোভন থাকবেন তা নিয়ে অনেক জল্পনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গোলপার্কের কাছে ১৩৫, মেঘনাদ সাহা সরণির ফ্ল্যাটেই যান প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী। যেখানে অনেক আগে থেকেই বৈশাখীর সঙ্গে থাকেন শোভন।
যে দিন শোভন গ্রেফতার হন, সেদিন রত্না ও ঋষি সিবিআই অফিসে যাওয়ার পরে কী হয়েছিল তা নিয়েই শুরু হয়েছে বৈশাখীর প্রশ্ন। ফেসবুকে যে ভিডিয়োর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘সত্যের জয়’। এখানে রইল সেই সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশের লিখিত রূপ যেখানে মূলত স্ত্রী ও পুত্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন শোভন।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়: রত্না চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে বহুদিন পরে সিবিআই দফতরে তোমার সঙ্গে দেখা হয়। তোমাদের (রত্না-শোভন) কথা হয়েছে এবং তাতে পাষাণ-হৃদয়, পাথর হৃদয় গলে গিয়ে পাশে পরিবারকে পেয়ে তুমি মনের জোর পেয়েছ।
শোভন চট্টোপাধ্যায়: প্রথম কথা বলি, এই সাদার্ন অ্যাভিনিউ থেকে যখন আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছে, আমাদেরকে বলছি মানে তোমাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। তখন তোমার অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে যাঁরা বলছেন, তাঁরা একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজ করেছে। তাতে ঘৃতাহুতি দেওয়ার জন্য রত্না চট্টোপাধ্যায় যত ধরনের মিথ্যে পরিবেশন করা দরকার, করে গিয়েছেন। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, আমরা যে আইনজীবী নিয়োগ করেছিলাম, মানে তুমি যাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলে, এই অথরাইজেশন ফ্রম দ্য ভেরি বিগিনিং তোমার সম্পর্কে করা ছিল। সিবিআই দফতরেও এই আইনি পরামর্শের ব্যাপারে আমি নির্দিষ্ট করে বলেছিলাম। তাই সেখানে রত্না চট্টোপাধ্যায় যখন আমাদের আইনজীবীকে বাধা দিয়েছিল, তখন আমি লোক পাঠিয়ে বারণ করি, এ সমস্ত যেন না করে। এখান থেকে চলে যেতে হবে। কারণ, আমার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। আমার সঙ্গে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তার পরেও যখন তাঁর অনুগামী, সাঙ্গোপাঙ্গদের গন্ডগোল ঘটে, আমি নেমে আসি। এবং সিবিআই অফিসিয়ালদের বলি যে এই ভদ্রমহিলাকে এখান থেকে চলে যেতে বলুন। ওকেও বলি, আপনি সম্বোধন করে, আপনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই আমার। এখান থেকে চলে যান। সরকারি অফিসে আপনি কী কারণে থাকবেন, আমি বলতে যাব না। আমার ব্যাপারে কোনও ধরনের ইন্টারভেনশন আপনি করবেন না। আইনজীবী ঠিক করার ব্যাপারে একটি কথাও ব্যয় করবেন না। তার পর আমি ওকে চলে যেতে বলি।
প্রশ্ন: শোভন, আমার এখানে খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তুমি বলছ যে তোমার আইনজীবীকে বাধা দিয়েছে, আর তিনি বলছেন যে সমস্ত আইনি সাহায্যই তোমাকে করেছেন।
উত্তর: কোনও প্রশ্নের চিহ্নই এর মধ্যে থাকা উচিত নয়। এই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছ তুমি। সেই আইনজীবীর ওকালতনামাই কিন্তু কোর্টে জমা পড়েছিল। আইনজীবী জানিয়েছিল যে তাঁকে বাধা দিচ্ছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: এই ক’দিন আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যাঁরা মানহানির মামলা করছিল, তাঁদের সঙ্গে ‘আয় তবে সহচরী করে, হাতে হাতে ধরি ধরি’ করে আদালত প্রাঙ্গণে গেলেন, যাঁরা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন, তাঁরা হঠাৎ নাকি আইনি সাহায্য করার জন্য তিনি চলে এলেন ‘শ্রীময়ী’র মতো সিবিআইয়ের দফতরে।
উত্তর: এটাকে যদি বলা হয় বাক্যালাপ হয়েছে, কী পাথর গলানো, লোহা গলা— কী সব বলছ। তা হলে আমি বলি, পাগলের গোবধেও আনন্দ হয়। আমি সেখানে নির্দিষ্ট ভাবে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম বলা যেতে পারে। সরি ফর দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ। আমি স্ট্রেট বলেছিলাম, আপনি এখান থেকে চলে যান। আমার কোনও আইনি সাহায্য প্রয়োজন নেই। আমি নির্দিষ্ট ভাবে জানি, কী পদ্ধতি রয়েছে।
প্রশ্ন: আমার অবাক হওয়া এখানেই থামে না। কারণ, এর পরে আরও একটি চরিত্র প্রবেশ করে। সে চরিত্রের নাম হচ্ছে ঋষি চট্টোপাধ্যায়। রত্নাদেবী দাবি করেছেন যে তিনি চলে গেলেও ছেলে ঋষিকে রেখে গিয়েছিলেন তোমাকে সমস্ত মেডিক্যাল এবং লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্স দেওয়ার জন্য।
উত্তর: আরে, আমি যে দিন এমসে গিয়েছিলাম, আমার কঠিন রোগের জন্য। সেই চিকিৎসার সময় রত্নাদেবী ছিলেন না। আমি আমার এক বন্ধুকে সহযোগী করে বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা করাই, এনজি হাসপাতালের ডাক্তার পাণ্ডেকে দেখাই এবং এমসে যাই। বার কয়েক সব ধরনের পরীক্ষা করা হয়, তখন কোনও দিন থাকেননি। আমার কী ওষুধ চলছে, সেই মেডিসিন সম্বন্ধে কোনও ধ্যানধারণা তাঁদের নেই। আমি আইনগত পরামর্শ দেওয়ার জন্য যেমন তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, চলে যেতে বলে যেতে বলেছিলাম তেমন করে ঋষি এসে আমার শারীরিক অবস্থার জন্য... নিশ্চয়ই আমি হাই ব্লাড সুগারের পেশেন্ট। আমার হাই ব্লাড প্রেশার রয়েছে। অন্য ধরনের কিছু সমস্যা রয়েছে। তার সম্বন্ধে ঋষির দেখার কোনও অভিজ্ঞতা নেই, ঋষির দেখভাল করার এক দিন কেন, এক মুহূর্তের কোনও প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন: কিন্তু একটা জিনিস আশ্চর্যের যে ঋষি নিজেই বলেছে নিজের মুখে, প্রথমে তুমি ওর প্রেজেন্সটাকে ডিসরিগার্ড করলেও পরবর্তী কালে (বৈশাখীকে থামিয়ে শোভন বলে ওঠেন)
উত্তর: আমি তো আসা মাত্রই ওকে বলেছি যে তুমি এখানে কেন? তুমি চলে যাও। আমি... সে দিন যার ইন্টাফেয়ারেন্স হচ্ছিল, যে ঋষির ওখানে আসার জন্য... সিবিআইয়ের একটি ঘরে...তোমার পাশে আমিই ছিলাম। আমি সে সময় কোনও সিনক্রিয়েট করতে চাইনি। সে ব্যাপারে কনসেন্ট্রেট করার মানসিক অবস্থাও আমার ছিল না। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁর সম্বন্ধে কখন, কী... (শোভনকে থামিয়ে)
প্রশ্ন: কিন্তু ঋষি দাবি করছে যে, তোমার সঙ্গে যখন ওর কথা হয়েছে তখন তুমি বলেছে যে এত বছর কী রকম কেটেছে তোমার। ও তোমাকে অ্যাসিওর করেছে যে আমরা তোমাকে বেস্ট অব লিগাল এবং মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স দেব।
উত্তর: এ সমস্ত কথা বলার কোনও সুযোগও ছিল না। ওখানে কোনও পারমিসিভ বিষয়ও ছিল না। ওর সঙ্গে কথাও বলিনি প্রায় বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন: কিন্তু যেটা খুব আশ্চর্যের তুমি নিশ্চয়ই দেখেছ যে, ঋষি আর আমি একই ঘরে ছিলাম। তোমাকে যখন কাস্টডিতে নিয়েও নিয়েছে, তখনও ঋষি আর আমি একসঙ্গেই ওয়েট করেছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রত্না চট্টোপাধ্যায় সেটাকে সাপ্রেস করে দিয়েছে। পরের দিন যত বার ওকে জিজ্ঞাসা করছে, ছেলেই তো শুধু ছিল। বৈশাখী তো ছিল না। ‘না মানে আমি জানি না’, তখন তিনি ক্যামেরাকে ফেস করতে পারছেন না। কিন্তু তা-ও তিনি বলছেন, ‘আমি জানি না, তিনি ছিলেন কী ছিলেন না, আমি খবরও নিইনি’। আমায় কি এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, ঋষি চট্টোপাধ্যায় তার মা-কে জানায়নি যে তার অনেক আগে থেকেই আমি সেখানে ছিলাম। সে আসার আগে আমারই সঙ্গে সে সেখানে ছিল, যেখানে অন্যান্য অনেক লোক ছিল।
উত্তর:এ কথাই বলতে চাইছি,অন্য অনেক লোক ছিল। আমার পরে আরও ৩ জন অ্যারেস্ট হয়েছেন, তাদের পরিবারের লোকেরা ছিল। তাদের উপস্থিতি যেমন ছিল, তাদের আইনজীবীরা ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। সেখানে ওয়ান অব দেম ওয়াজ ঋষি, যাকে আমি বার করে দিতে চেয়েছিলাম। আমি তোমার পাশে বসেছিলাম। তুমি ছিলে, ও ছিল— এমনটা ভাবার নয়, তুমি ছিলে আমার সঙ্গে ফ্রম দ্য ভেরি বিগিনিং। এবং সেখানেই পরামর্শ করে আমরা প্রাইমারি ভাবে কী ভাবে আমাদের অ্যাডভোকেট অ্যাপয়েন্ট করে কী ভাবে বেল করব, সেটাই প্রসেস করছিলাম।
প্রশ্ন: পরবর্তীকালে রত্না বলেছেন যে, ৪ বছর ধরে শোভন চট্টোপাধ্যায় যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমস্ত ভুল নিয়েছে। তিনি যখন বিয়ে করেছিলেন, যে স্যাক্রিফাইস করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৈরি করার জন্য, যতটা সময় ইনভেস্ট করেছিলেন, তা যদি আজকের দিনে তুমি যে রকম জীবনযাপন করছ, তা যদি তিনি জানতেন, তিনি এতটা স্যাক্রিফাইস করতেন না।
উত্তর: তোমায় একটা কথা বলি। কেন ৪ বছর ৪ বছর হচ্ছে? ৪ বছরে আমি একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৩৬ বছরের জনপ্রতিনিধি। ৩৬ থেকে ২২ বাদ দিলে ১৪ বছর। তার মধ্যে ১১ বছর আমি জনপ্রতিনিধি। তিন-তিনটে নির্বাচন পার করেছি। আমি বাচ্চা ছেলে নই। কিন্তু আমার ভুল হয়েছিল ২২ বছর আগে। এই চরম বিশ্বাসটা স্ত্রী হিসাবে... আমার অ্যাকাউন্টস, আমার ডিটেলস প্রসেস তার উপর ন্যস্ত করা আর তার উপর বিশ্বাস করা। আর ৪ বছর আগে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে আমি মনে করি। রত্না চট্টোপাধ্যায় বলতে পারে আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ওর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছি। ওর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছি। কোনও সম্পর্ক রাখিনি। কারণ, যে ব্যাভিচারী জীবন, যে অবৈধ সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ভাবে বিভিন্ন কাজকর্ম... আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে যে সীমাবদ্ধতার মধ্যে চলতে হয়, ব্যক্তি জীবনযাত্রা বলে কিছু থাকে না... আমরা যাঁরা জনপ্রতিনিধি, আমরা ম্যান অব দ্য পার্টি, ম্যান অব দ্য পিপল হয়ে যাই, সেটা রত্না চট্টোপাধ্যায় সম্পূর্ণ বেনিয়মের মধ্যে যে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এবং নিজের জীবনযাত্রার সঙ্গে অন্য একটি যুবকের জীবনযাত্রা বেঁধে নিয়েছিলেন, সেটা যখন আমি জানতে পারি, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছি। ওর কাছে হয়তো মনে হয়েছে, শোভন চট্টোপাধ্যায় কাউন্সিলর, শোভন চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক, শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার মেয়র, শোভন চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের মন্ত্রী— নিশ্চয়ই এগুলো একটা অলঙ্করণ। কিন্তু তার আগে আমি একটা জনপ্রতিনিধি হিসাবে একটা মানুষ হিসাবে যে সম্মানবোধ, তাতে আঘাত লেগেছিল বলেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলাম।
এই অংশের পরে বৈশাখীর প্রশ্নের উত্তরে শোভন আরও অনেক কথা বলেছেন ৫৪ মিনিটের ওই ভিডিয়োয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথাও যেমন এসেছে তেমনই এসেছে দুলাল দাস প্রসঙ্গ। রত্নার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনতে কিছু ছবিও দেখিয়েছেন শোভন। সেই সব ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বৈশাখী। শোভন ওই ভিডিয়োতে এমনটাও বলেছেন যে, তিনি চান মৃত্যুর পরে তাঁর মরদেহ যেন পর্ণশ্রীর বাড়িত না নিয়ে যাওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy