ইস্তফা দিয়ে দিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
কেটেও কাটল না সঙ্কট। ইস্তফা দিয়ে দিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদ থেকে শুধু নয়, চাকরি থেকেও ইস্তফা দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ই-মেল মারফৎ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন কলেজ শিক্ষিকা।
মধ্য কলকাতার যে কলেজে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষকতা করছিলেন, সেই মিল্লি আল-আমিন কলেজের (ফর গার্লস) পরিচালন সমিতি নিয়ে জটিলতা অনেক দিনের। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে সেই পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার পর থেকে নতুন পরিচালন সমিতি গঠিত হয়নি। তা সত্ত্বেও শিক্ষা দফতরের ‘মৌখিক নির্দেশে’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা এবং ডিডিও (ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার) হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে তিনি এ দিন জানিয়েছেন। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৈশাখীর কলেজের সমস্যা মিটিয়ে দিতে সচেষ্ট হন। তাঁর নির্দেশে নতুন পরিচালন সমিতি মনোনীত করে শিক্ষা দফতর থেকে চিঠিও পাঠানো হয় কলেজকে। কিন্তু তার পরেও অচলাবস্থা বহাল রয়েছে বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন। এই অচলাবস্থার মধ্যে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে তিনি ইস্তফা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মিল্লি আল-আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদ থেকে এবং চাকরি থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রথম ইস্তফা দিতে চাইলেন, এমন নয়। তৃণণূলের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের অবনতির পর থেকেই সমস্যা ক্রমশ বাড়ছিল কলেজে। বৈশাখী নিজে অন্তত তেমনই অভিযোগ করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই চলতি বছরের অগস্ট মাসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বৈশাখী। কিন্তু পার্থ সে দিন পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। বৈশাখী যে সব অভিযোগ তুলে চাকরি ছাড়তে চাইছেন, সে সবের তদন্ত করার আশ্বাস দেন তিনি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাকরি না ছাড়তে বৈশাখীকে তিনি অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা সে অনুরোধ রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: অর্থনীতিতে ‘অন্ধকারতম সময়’, ইনফোকমের মঞ্চে মন্তব্য মমতার, তীব্র আক্রমণ কেন্দ্রকে
এর কয়েক দিন পরেই শোভন ও বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দেন। তার জেরে কলেজে জটিলতা আরও বেড়েছিল, তেমন কোনও খবর সামনে আসেনি। তবে সঙ্কটের কোনও নিরসনও হয়নি। পরে বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে শোভন-বৈশাখীর, দূরত্ব কমতে থাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মিল্লি আল-আমিন কলেজের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সক্রিয়তা আরও বাড়ে। নভেম্বরের শেষ দিকে ওই কলেজের নতুন পরিচালন সমিতির সদস্য এবং পদাধিকারীদের মনোনীত করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষা দফতর চিঠিও পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু যে সংস্থা কলেজটি চালায়, শিক্ষা দফতরের চিঠি পাওয়ার পরেও তারা পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকেনি।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় হয়তো সত্যিই চেষ্টা করেছিলেন কলেজের সমস্যাটা মেটানোর। কিন্তু তার পরেও যখন মিটছে না, তখন আমার মনে হয়েছে যে, আমি না সরে যাওয়া পর্যন্ত বোধহয় সমস্যা মিটবে না। তাই ইস্তফা দিয়ে দিলাম।’’ বৈশাখী জানিয়েছেন, অচলাবস্থার কারণে বেতন আটকে ছিল, কলেজের তহবিল আটকে ছিল। কলেজটা চালু রাখার জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে খরচ করতে হচ্ছিল বলেও বৈশাখী এ দিন দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রথমে বন্ধ গেট, তার পরে নির্জন বিধানসভা, সরকারকে আক্রমণে রাজ্যপাল, পাল্টা কটাক্ষ পার্থর
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ইস্তফাকে কিন্তু পুরোপুরি একটি কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখতে রাজি নয় রাজনৈতিক শিবির। ৩ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় নিজেদের ঘর গুছিয়ে নিতে অত্যন্ত তৎপর হয়েছে। যে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের যোগাযোগ প্রায় ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, কয়েক দিন আগে সেই শোভন-বৈশাখীকেই বার বার ফোন করে বৈঠকে বসতে বিজেপি নেতারা অনুরোধ করেন। অনুরোধে সাড়া দিয়ে বৈঠকে তাঁরা বসেছেন বলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তার পরেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদ থেকে এবং চাকরি থেকে বৈশাখীর ইস্তফা। এই ঘটনা কি পুরোপুরি অরাজনৈতিক হতে পারে? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অবশ্য যাবতীয় রাজনৈতিক জল্পনা নস্যাৎ করেছেন। কলেজের অচলাবস্থা কাটানোর কথা ভেবেই তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন বলে বার বার দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু কলেজ পরিচালনা নিয়ে যদি অচলাবস্থা থাকে, তা হলে তো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদ থেকে সরে দাঁড়ালেই হত। চাকরিতেই ইস্তফা দিয়ে দিলেন কেন? বৈশাখীর জবাব, ‘‘কলেজ প্রশাসনের শীর্ষে থেকেই কাজ করতে পারছিলাম না। এমন হেনস্থার মুখে ফেলা হচ্ছিল যে, দিনের পর দিন ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছিলাম। তা হলে শুধুমাত্র এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসর হিসেবে ওই কলেজে ঢুকতে গেলে আমাকে কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে ভাবতে পারছেন!’’ তিনি বলেন, ‘‘কলেজে পড়ানোটা আমার স্বপ্ন ছিল, আমার মায়েরও স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের জীবনটা থেমে যাচ্ছে বলে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমার আর কিছু করার ছিল না।’’
আগের বারের মত এ বারও অবশ্য বৈশাখীর ইস্তফা পেয়ে তা রুখতে তৎপর হয়ে ওঠেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইস্তফা এ দিনও তিনি গ্রহণ করতে চাননি বলে খবর। খুব শীঘ্রই সমস্যার সমাধান তিনি করে দেবেন, এমন আশ্বাস পার্থ চট্টোপাধ্যায় দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy