বিজেপির উপর চটলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন গত ১৪ অগস্ট। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক সেরে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় ফিরেছেন গত রবিবার। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি সোমবার রাতে প্রকাশ করা হয়, তা দেখে বেজায় অসন্তুষ্ট বৈশাখী। শুধুমাত্র শোভনকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথাই উল্লেখ করা হয়েছিল সে বিজ্ঞপ্তিতে, বৈশাখীর নাম কোথাও ছিল না। এই ঘটনাকে নিজের ‘অপমান’ হিসেবেই দেখছেন কলেজ শিক্ষিকা। বিষয়টিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবেই দেখছেন তিনি।
শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিন যে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে বরণ করে নেওয়া হবে এবং সংবর্ধনা দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত দলের রাজ্য নেতৃত্ব আগেই নিয়েছিল। সোমবার রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই অনুষ্ঠানের কথা বিজেপির তরফে জানানো হয়। কিন্তু সেই আনুষ্ঠানিকতা থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। সোমবার রাতে বিজেপির মিডিয়া সেলের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শিরোনামে লেখা হয়, ‘বিধায়ক এবং প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা’।
এই বিজ্ঞপ্তিই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের কারণ। তিনি বলেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই আমার নামটা বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়নি। শুধু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয়েছে। আমাকে অপমান করার জন্যই এটা করা হয়েছে বলে মনে করছি।’’ বৈশাখীর কথায়, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সমান গুরুত্ব আমাকে দিতে হবে, এমন কোনও দাবি কিন্তু আমার নেই। শোভনদা অনেক বড় মাপের রাজনীতিক। তাঁর সমান গুরুত্ব আমি পাব, এমনটা আমি এক মুহূর্তের জন্যও আশা করি না। কিন্তু আজ যখন দু’জনকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা, তখন বিজ্ঞপ্তিতে দু’জনের নামটাই লেখা হবে— এইটুকু সৌজন্য তো আশা করব!’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: পাঁচ কেজির দাম সওয়া কোটি টাকারও বেশি! আলিপুরদুয়ারে উদ্ধার বিরল কিরাজারি
এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমি আসতে বলেছি সবাইকে। সবার তো নাম দিই না আমরা। শোভনদা মেয়র ছিলেন, এখনও বিধায়ক আছেন। তাই তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। তবে, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও দেওয়া উচিত ছিল।’’ এর পরেই তাঁকে হাসি মুখে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা জানি, যেমন ভাত-ডাল, সে রকম শোভনদা আর বৈশাখীদি। আলাদা করে বলার কী আছে!’’
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই তাঁর নাম প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বৈশাখী। বিষয়টি তিনি বিজেপি নেতৃত্বকে সোমবার রাতেই জানান। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার রাতেই বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নয়, অনিচ্ছাকৃত ভাবেই এই ভুল হয়েছে এবং ভুলটি সংশোধন করে নেওয়া হবে— এমন আশ্বাসও জয়প্রকাশ দেন বৈশাখীকে। কিন্তু জয়প্রকাশকে রাতেই বৈশাখী জানিয়ে দেন, কোনও সংশোধনীর প্রয়োজন নেই, তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু, তাতেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। রাজ্য বিজেপির মিডিয়া সেলের প্রকাশ করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয়নি, সে খবর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও পৌঁছয়। অরবিন্দ মেনন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন বলে খবর। আজ সকালে নতুন করে রাজ্য বিজেপি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তার শিরোনামেও শুধু শোভনের নাম রাখা হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তির ভিতরে লেখা হয় যে, ‘‘কাউন্সিলর, বিধায়ক ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবর্ধনা জানানো হবে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি পরিবারে স্বাগত জানানো হবে।’’
আরও পড়ুন: জাগুয়ার দুর্ঘটনার থ্রি ডি ভিডিয়ো তৈরি হচ্ছে, কলকাতা পুলিশে এই প্রথম
জয়প্রকাশ মজুমদার এ দিন সকালেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্য বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরীর সঙ্গেও ফোনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়। সপ্তর্ষিও বৈশাখীকে জানান যে, যা ঘটেছে তা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ তাতে কমানো যায়নি। সংবাদমাধ্যমকে সকালে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি শুধুমাত্র ‘ভুল’ বলে আমার মনে হচ্ছে না। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব আমাদের যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আন্তরিকতাও অতুলনীয়। কিন্তু রাজ্য বিজেপির কেউ কেউ আমাকে হয়তো পছন্দ করছেন না। মহিলা মোর্চার এক জন সম্প্রতি ফেসবুকে আমার নামে নানা নেতিবাচক কথা লিখেছেন বলে শুনলাম। এ বার দেখলাম, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তিতেও আমার নাম নেই। তাই আমার মনে হয়েছে, নিজের সম্মানের স্বার্থে সরে দাঁড়ানোই ভাল।’’ বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘অসম্মান সহ্য করব না বলেই তৃণমূল থেকে সরে এসেছিলাম। বিজেপিতে-ও যদি একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তা হলে আপস করার প্রশ্নই নেই। রাজনীতিতে থাকতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা আমার নেই।’’
মঙ্গলবার সকালে বিজেপির তরফে বিবৃতি সংশোধন করার বিষয়টি যে তাঁর ক্ষোভ কমাতে পারেনি, বৈশাখীর মন্তব্যেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে জুতো মারবেন, তার পরে গরু দান করবেন— এমনটা হতে পারে না। আমি যথেষ্ট অপমানিত হয়েছি।’’
এ দিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাবেন না— প্রথমে বৈশাখী এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে বার বার অনুরোধ পাওয়ার পরে তিনি বিজেপি দফতরে যেতে সম্মত হন। তবে সংবর্ধনা নিতে যে তিনি যাচ্ছেন না, তা-ও বৈশাখী স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলের রাজ্য দফতরে স্বাগত জানানোর জন্য কর্মী-সমর্থকরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। সেই অনুষ্ঠানটা নষ্ট হয়ে যাক, আমি চাই না। তাই আমি হয়তো শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাব।’’ কিন্তু তিনি নিজে যে আর সংবর্ধনা নিতে আগ্রহী নন, সে বার্তা বেশ স্পষ্ট ভাবেই দিয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy