Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কাশ্মীরে শ্রমিক খুন, নীরব দলে সরব কর্মীরা

দলের এক স্থানীয় নেতার কথায়, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে আমরা সাগরদিঘি থেকে প্রায় ৪২ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। তার প্রতিদান হিসেবেও তো একটা নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া যেত, তা না করে আমরা চুপ করে থাকলাম। দিল্লিকে অনুসরণ করতে গিয়ে স্থানীয় মানুষের কাছে আমাদের মুখ পুড়ল।’’

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

প্রশ্নটা উঠে গেল বিজেপি’র অন্দরেই। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের দিনেই বিজেপি নেতাদের অনেকেরই মুখে মুখে ফিরতে শুরু করেছে কথাটা— ‘দিল্লি না বলুক, রাজ্য নিদেনপক্ষে জেলা নেতাদের কেউ তো ঘটনার নিন্দা করতে পারতেন!’

দলের এই বিপুল নীরবতার মাঝেই আজ বুধবার, বাহালনগরের কোল ঘেঁষে সভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। যেখানে মঞ্চে থাকার কথা, নিহত শ্রমিক পরিবারের আত্মীয়দের। দলের এক স্থানীয় নেতার কথায়, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে আমরা সাগরদিঘি থেকে প্রায় ৪২ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। তার প্রতিদান হিসেবেও তো একটা নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া যেত, তা না করে আমরা চুপ করে থাকলাম। দিল্লিকে অনুসরণ করতে গিয়ে স্থানীয় মানুষের কাছে আমাদের মুখ পুড়ল।’’

ভোটের আগে এলাকায় প্রায় রোজই দেখা মিলত বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুনের। তবে এখন আর রা কাড়ছেন না মাফুজা। মন্তব্য করতেও রাজি হননি। বলছেন, ‘‘যা বলার রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তাই আমি কোনও মন্তব্য করছি না।”

দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। মাফুজার মতোই নিশ্চুপ কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি। কেউই এ ঘটনা নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেনি। সমস্ত দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় কাশ্মীরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। এমনকি বাহালনগরে আক্রান্তদের বাড়িতেও গিয়েছেন সব দলের নেতারা। কিন্তু বিজেপি’র কোনও নেতা গ্রামে যাওয়া তো দূরের কথা, তা নিয়ে মন্তব্যও করেননি।

দলের অনেক নেতাই মনে করেন এই ঘটনায় জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। বিজেপি’র সাগরদিঘি মণ্ডল কমিটির সভাপতি সুবোধ ঘোষ স্পষ্টই বলছেন, “বাহালনগরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল আমাদের। আমি জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে তা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। পাঁচ জনের এ ভাবে জঙ্গিহানায় মৃত্যু অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। তাই এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারেরও উচিত ছিল সক্রিয় হওয়া।’’

রঘুনাথগঞ্জ মণ্ডল কমিটির সভাপতি রাজু দত্তের মতে, ‘‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। দলের নেতাদেরও উচিত ছিল, প্রকাশ্যে এই হত্যার বিরুদ্ধে সরব হওয়া। আমরা তাঁদের বলেছিলাম গ্রামে যেতে। কে কাকে ভোট দেন এটা বড় নয়। ভোটের সময় যাব, আর কোনও বিপদের সময় যাব না, এটা ঠিক নয়। আসলে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে কোনও ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ হচ্ছে না।” এলাকাটি সাংগঠনিক ভাবে বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদের অধীনে পড়ে।

উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি সুজিত দাস বলেন, “কাশ্মীরে যে ভাবে সন্ত্রাসবাদীরা পাঁচ শ্রমিককে মেরেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। কিন্তু ওই এলাকায় তৃণমূল শুরু থেকেই প্রচার করতে থাকে— ঘটনার জন্য দায়ী বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চলে। ওই এলাকার দলীয় বুথ সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলি আমরা। কিন্তু মৃত পরিবারের বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে তারা কোনও ভরসা জোগাতে পারেনি। বিজেপির নেতারা সেখানে গেলে ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন এই ভেবেই ওই শোকবহ ঘটনার মধ্যে ওই গ্রামে যাওয়া এড়াতে হয়েছে।’’

দলের এই জেলার পর্যবেক্ষক মালা ভট্টাচার্য অবশ্য রাজ্য নেতাদের পক্ষ নিচ্ছেন, “কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও হয়ত বাহালনগরে যাননি, তবে যাবেন। কেন্দ্রীয় সরকারও এ নিয়ে ভাবছেন। কারণ কাশ্মীরের যে কোনও ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। তারা তা অবশ্যই পালন করবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Murshidabad Bahal Nagar Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy