Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

Babul Supriyo: প্রমাণ করতে চাই রাজনীতিতে না থেকেও সাংসদের দায়িত্ব পালন সম্ভব, লিখছেন বাবুল সুপ্রিয়

বিভিন্ন কারণে রাজনীতি ভালো লাগছে না। তাই সরে যাচ্ছি। হয়তো সত্যিই মনে হয়েছে, আমাকে আর দরকার নেই বিজেপি-র। তাই সরে যাচ্ছি।

বাবুল সুপ্রিয়।

বাবুল সুপ্রিয়। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

বাবুল সুপ্রিয়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ১২:০৬
Share: Save:

আপনাদের সকলকে আমার ধন্যবাদ। বিভিন্ন কারণে রাজনীতি ভালো লাগছে না। তাই সরে যাচ্ছি। আপনারা নিজেরা নিজেদের মতো করে ‘নানা’ কারণ খুঁজে নিন। হতে পারে তার সব’কটাই হয়তো সত্যি। হয়তো সত্যিই মনে হয়েছে, আমাকে আর দরকার নেই বিজেপি-র। তাই সরে যাচ্ছি।

রাজনীতিতে থেকে, বিজেপি-র কর্মী হিসেবে থেকে কোনও কথা বলে শৃঙ্খলাভঙ্গের চিঠি ধরানোর সুযোগ কারওকে দেব না। অন্য কোনও দলে যখন যাচ্ছি না, তখন ‘‘বিজেপি ছেড়ে দিচ্ছি’’, এই কথাটাও না-ই বা বললাম। আমার বিরোধ তো বিজেপি-র বিরুদ্ধে নয়, দলকে যারা ভুলপথে চালিত করছেন, রোজ রোজ যারা নানা কথা বলে দলকে বিড়ম্বনায় ফেলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে।দলের স্বার্থে শুধু আমি নয়, বহু সিনিয়র বিজেপি নেতাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তা জানিয়েছেন। আমার অধিকার সেখানেই শেষ হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তো দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতাদের। স্থান- কাল-পাত্র তাঁরাই ঠিক করবেন।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অটলবিহারী বাজপেয়ী, নরেন্দ্র মোদী’জির দলে পশ্চিমবঙ্গে অনেক কিছুই ঠিক নেই। চুপচাপ বসে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ জড়িয়ে, ‘অমুক-ঘনিষ্ঠ’-‘তমুক ঘনিষ্ঠ’ হয়ে মজা দেখতে পারব না। তাই প্রতিবাদস্বরূপ সরে যাচ্ছি। অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আগেও করেছি। তাতে যে আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি হতে পারে, তা কি জানতাম না? নিশ্চয়ই জানতাম। কিন্তু দলের বৃহত্তর স্বার্থেই তা বলেছি। নেতারা রোজ রোজ ‘ভেঙে দেব, রগড়ে দেব’ বললে অলিতে-গলিতে দলের গ্রাসরুট লেভেলের ছেলেদের উপরেই যে অত্যাচারটা হয়, বিগত দিনে তা আমরা দেখেছি। কিন্তু শিক্ষা নিইনি। এটাই সত্যি। চোখের সামনে ভাল ভাল যোগ্য নেতাকে সাইডলাইন্‌ড করে দেওয়া হচ্ছে। অসম্মানিত করা হচ্ছে এবং তাঁরা রাগে-দুঃখে হয় দল ছেড়ে দিচ্ছেন, না হয় দূরে সরে যাচ্ছেন। এটা চলতে পারে না। সামওয়ান হ্যাড টু বেল দ্য ক্যাট। আই অ্যাম ডুয়িং ইট। নো রিগ্রেট্স। (‘ক্যাট’ মানে আবার কোনও ব্যক্তিবিশেষকে বলছি, এটা বলে আবার অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না)।

ভোটার আগেও দলের কিছু সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্ম হতে পারিনি। সে কথা দলের অন্দরেও যখন জানিয়েছি, তখনও তা ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ মিডিয়াতে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কি আমার ক্ষতি হয়নি? নিশ্চয়ই হয়েছে। দেখলেন তো, মন্ত্রিত্ব গেল!! নিজের পার্টিতেই সেটা নিয়ে ‘রসগোল্লা উৎসব’ হল। সেটা না হয় ঠিক আছে। কিন্তু সাত বছর ধরে যে বিরোধীদলের ‘প্রিয় দাদারা’ আমাকে ‘হাফ প্যান্ট মন্ত্রী’ বা ‘গরুর গাড়ির হেডলাইট’ বলে গৌরবান্বিত করেছেন (যেমন সৌগত রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস— যাঁদের সঙ্গে রাজনীতিতে আসার অনেক আগে থেকেই আমার পরিচয়— যাঁদের জন্য কত গানের প্রোগ্রাম করেছি), তাঁরাও কিন্তু এই থাকার পর শুধুমাত্র আমার কাজের ভিত্তিতে আমার প্রমোশন হলে হয়তো নেগেটিভ কিছু বলতেন না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দলমতনির্বিশেষে বাংলার মানুষও খুশিই হতেন।

কিন্তু দলের বৃহত্তম স্বার্থে ‘অপ্রিয় সত্য’ কথা বলেছি। মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস, ৯০% ক্ষেত্রে যা বলেছি, ভেবেচিন্তে লং-টার্ম ভালর কথা ভেবেই বলেছি। এবং আমি যে কিছু কথা ঠিকই বলেছিলাম, আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। ‘সমঝদার কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়’। পিরিয়ড! মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। তাতে নিশ্চয়ই মনে হয়েছে আমার প্রতি (হয়তো) অন্যায় হয়েছে। কিন্তু আই হ্যাভ নো রিগ্রেট্স ফর হ্যাভিং সেড হোয়াট আই হ্যাভ সেড হোয়েন আই ফেল্ট ইট শুড বি সেড। ইন এনি কেস, ‘অল পাওয়ার্স অ্যান্ড পজিশন্‌স আর টেম্পোরারি আনলেস ইউ আর বর্ন আ প্রিন্স টু বি আ কিং ওয়ান ডে’।

এ বার অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে আসি।

রাজনীতিতে না থেকেও আসানসোলের সাংসদ হিসেবে আমার সমস্ত দায়িত্ব পালন করা কি সম্ভব? আমি মনে করি সম্ভব এবং আমার মাননীয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাকে সে সুযোগ দিচ্ছেন। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব আমি পালন করব ঠিক করেছি— করব। দেখি না কী ধরনের বাধাবিপত্তি আসে। কনস্টিটিউশনাল ডিউটি পারফর্ম করতে গিয়ে কে কে কী ভাবে আমায় বাধা দেয়, সেটাও দেখি না! আপনারাও দেখুন। ওটাও তো একটা অভিজ্ঞতা হবে। হোক না!

আর যাঁরা ভাবছেন, আমি মাসের পর মাস মাইনে নিয়ে যাব। তাঁরা ওই ‘তাঁদের’ মতোই ভুল করছেন, যাঁরা আমি অন্য দলে চলে যাব, তৃণমূলে চলে যাব বলে আগাম ‘গালাগালি-কটূকথার’ উৎসব শুরু করেছিলেন। তাঁদের এটুকুই বলব, এত তাড়া কিসের? আগে আগে দেখিয়ে না, হোতা কেয়া হ্যায়!

যাই হোক, আমি আমার কথা লিখলাম। আমার মনটা হালকা হল। এবার যে যার নিজের মতো করে বুঝবে। ভালো-মন্দ বলবে / লিখবে। নানারকম কাটাছেঁড়া করবে। বেশ তো। আপনাদের মনও এতে হালকা হবে। গতকাল (সোমবার) রাতে ক্যামেরার সামনে অনেক কথাই বলিনি। যে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে বিগত কয়েকদিনে এত ভালোবাসা দিয়েছেন, আমার কথা মন দিয়ে শুনেছেন, আমাকে সাসপেন্ড না-করে আসানসোলের সাংসদ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, তাঁদেরই একজন, মাননীয় নড্ডা’জির সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে বেরিয়ে তাঁরই বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব কথা বলা সমীচীন মনে করিনি। তাই বলিনি।

আজও অনেক ‘না বলা’ কথা রয়ে গেল। যদি কখনও সময়োপযোগী মনে হয়, পার্টিনেন্ট মনে হয়, হয়তো তার মধ্যে কিছু কথা বলব। কিছু কোনওদিনই বলব না। ‘‘লিখবও না। মনে রেখে দেব!’’

এ বার আমার যা করলাম আর যা বললাম দ্যাট উইল হ্যাভ ‘‘… টু গো থ্রু থ্রি স্টেজেস; অপোজিশন, রিডিকিউল অ্যান্ড অ্যাকসেপ্টেন্স।’’ আমরা সকলে জানি, কে বলেছিলেন এটা। তাঁর নামটা মনে করলেই আমরা মনের অন্ধকার কোণে নতুন আলো দেখতে পাই। অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই। আপনারাও আমায় ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিয়ে নতুন আলোয় দেখার চেষ্টা করবেন। এই আশায় রইলাম।

অন্য বিষয়গুলি:

Babul Supriyo Asansol Member of Parliament BJP MP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy