Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Haldia port area

‘দখলদার’ উচ্ছেদ অভিযান হলদিয়া বন্দর এলাকাতেও, তৃণমূল নেতার বাধাকে পাত্তাই দিল না পুলিশ!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তার পরেই নড়েচড়ে বসেন হলদিয়া কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে টাউনশিপের একাধিক ঝুপড়ি ভাঙতে যান তাঁরা।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪ ২০:১৫
Share: Save:

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের টাউনশিপ এলাকায় অবৈধ দখলদারির অভিযোগ দীর্ঘ কয়েক দশকের। অনেক চেষ্টা করেও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তার পরেই নড়েচড়ে বসেন হলদিয়া কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে টাউনশিপের একাধিক ঝুপড়ি ভাঙতে যান তাঁরা। খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান হলদিয়ার দাপুটে তৃণমূল নেতা আজগর আলি। কাজে বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ‘অবৈধ দখলদারি’ উচ্ছেদ করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সূত্রে খবর, হলদিয়া বন্দরের গোড়াপত্তনের সময় থেকেই শাসকদলের নেতাদের মদতে হলদিয়া শহর জুড়ে একাধিক জায়গায় অবৈধ বস্তি গড়ে উঠেছে। কয়েক দশকে সেই বস্তির আড়েবহরে বেড়েছে। এত দিনে বস্তিবাসীদের অনেকেই রেশন, ভোটার, আধার কার্ড বানিয়ে পাকাপাকি থাকতেও শুরু করেছেন। বিভিন্ন সময় এদের উচ্ছেদের চেষ্টা হলেও রাজনৈতিক চাপে শেষ পর্যন্ত সেই অভিযান সফল হয়নি। কিন্তু এ বার মমতার কড়া বার্তার সেই কাজ অনেক সহজ হয়েছে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার টাউনশিপ এলাকার ১২টি অবৈধ ঝুপড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতেই এলাকায় ছুটে যান তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি আজগর আলি। বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন না দিয়ে এ ভাবে উচ্ছেদ করা যাবে না বলে প্রতিবাদও করেন। এই নিয়ে পুলিশ ও বন্দরের আধিকারিকদের সঙ্গে বচসায় জড়াতে দেখা যায় আজগরকে। তবে বন্দরের আধিকারিকেরা সাফ জানিয়ে দেন, অবৈধ ভাবে জায়গা দখল করে থাকা ১২টি ঝুপড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ মতোই তাঁরা বস্তি উচ্ছেদ করছেন। এর পরে হলদিয়া থানার বিশাল পুলিশবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ‘দখলদারি’ উচ্ছেদ করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ঝুপড়ি ভাঙা হয়েছে মাধবী মান্না নামে এক বস্তিবাসীর। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের আমলে প্রায় ৪০ বছর আগে আমাদের এই এলাকায় বসানো হয়েছিল। ধীরে ধীরে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে ভোটার, রেশন, আধার কার্ড পেয়েছি। এই জায়গায় থেকে বিনামূল্যের রেশনও পাচ্ছি। প্রতি বার ভোটও দিচ্ছি। কিন্তু আজ এতগুলি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেওয়া হল! বাড়ির বৌ, বাচ্চা, পরিবারের লোকেদের নিয়ে এখন গাছের তলায় রাত কাটাতে হবে।”

এই উচ্ছেদের বিষয়ে আজগরের বক্তব্য, ‘‘হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের একাধিক এলাকায় কয়েক দশক ধরে বহু পরিবার এ ভাবেই বসবাস করছে। মুখ্যমন্ত্রী অবৈধ ভাবে ফুটপাত দখল করে থাকা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। রাতারাতি গজিয়ে ওঠা অবৈধ কাঠামো সরিয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তাকে হাতিয়ার করে হলদিয়ায় কয়েক দশক ধরে যারা বসবাস করছেন, তাঁদের পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা। এই পরিবারগুলির দুরবস্থার কথা বন্দরের ভাবা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE