রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: পিটিআই
মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করলেন। বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশও করলেন। কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তার বিরুদ্ধেও রাজ্যপাল মুখ খুললেন একই সঙ্গে। বুধবার রাজভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেখানেই তিনি ওই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। ওই বিজ্ঞাপন সম্পর্কে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলেও এ দিন রাজ্যপাল মন্তব্য করেছেন।
সিএএ-র বিরোধিতার নামে রাজ্য জুড়ে দিন পাঁচেক ধরে যে অশান্তি চলেছে, সে সম্পর্কেই প্রশাসনের কাছ থেকে বিশদ তথ্য চাইছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন যে তাঁদের তরফ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীকেই ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে যাননি। বরং রাজ্যপালকে কড়া চিঠি পাঠিয়ে দেন তিনি। অল্প ক্ষণের মধ্যেই আরও কড়া বয়ানে পাল্টা চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠান রাজ্যপাল। ফলে নবান্ন-রাজভবন সঙ্ঘাত তুঙ্গে পৌঁছেছিল। কিন্তু মুখ্যসচিব এবং ডিজি যে শেষ পর্যন্ত রাজভবনে যাচ্ছেন, তা গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারই জানা গিয়েছিল।
বুধবার বেলা ৩টে নাগাদ মুখ্যসচিব এবং ডিজি রাজভবনে যান। রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্যপালকে তাঁরা বিশদে অবহিত করেন। বৈঠক শেষ হওয়ার পরে রাজ্যপাল সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং জানান যে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। মুখ্যসচিব এব ডিজি তাঁকে যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে তিনি যে সন্তুষ্ট, সে কথা রাজ্যপাল একাধিক বার বুঝিয়ে দেন এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে।
আরও পড়ুন:মুর্শিদাবাদে ঘেরাও বিজয়বর্গীয়, বাতিল কর্মসূচি, ফোন করলেন অমিতকে
কিন্তু সিএএ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অবস্থান নিয়েছেন, তার বিরোধিতাও কিন্তু ফের স্পষ্ট ভাবেই করেছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাশ হয়েছে। আমরা ভারতের নাগরিক। সুতরাং আমাদের সবার উচিত এই আইন মান্য করা।’’
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিএএ-র রূপায়ণ ঘটতে দেবে না— এ কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার বলছেন। সংবাদমাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়েও মমতা খোলাখুলি জানাচ্ছেন যে, বাংলায় সিএএ তিনি কার্যকরী করবেন না। এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ওই বিজ্ঞাপনের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ ভারতের আইন। ভারতের সরকার এই আইন তৈরি করেছে। সরকারি টাকা খরচ করে এই আইনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করা উচিত নয়।’’ বিজ্ঞাপনটির সম্প্রচারকে অনুচিত বলেই যে তিনি ক্ষান্ত হচ্ছেন না, সে ইঙ্গিতও রাজ্যপাল এ দিন দিয়েছেন। ওই বিজ্ঞাপনের বিষয়ে যাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার, তার দৃষ্টি ইতিমধ্যেই আকর্ষণ করা হয়েছে— অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে এই মন্তব্যও করেছেন রাজ্যপাল।
মুর্শিদাবাদ এব মালদহের পরিস্থিতি নিয়ে এ দিনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। সিএএ বিরোধিতার নামে ওই দুই জেলায় যা ঘটেছে, তাতে তিনি ‘অত্যন্ত ব্যথিত’ বলে রাজ্যপাল মন্তব্য করেছেন। মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার যে অভিযোগ এ দিন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় তুলেছেন, সে প্রসঙ্গেও রাজ্যপাল মুখ খুলেছেন। ‘‘কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মতো বড় নেতাকেও যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হল, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’’, মন্তব্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের।
আরও পড়ুন:অপসারণ বেআইনি ছিল: ট্রাইবুনাল ॥ টাটা সন্সের মাথায় ফের সাইরাস মিস্ত্রি
তবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সব মতানৈক্য সরিয়ে রেখে তিনি যে ‘একসঙ্গে কাজ করতে’ চান, সে কথাও এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল আরও এক বার বলেছেন। প্রথমে তিনি বিধানসভার গেট বন্ধ পেয়েছিলেন, পরে খোলা পেয়েছেন, প্রথমে রাজ্য প্রশাসনের কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করছিলেন না, এ বার মুখ্যসচিব এবং ডিজি তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন— এই বিষয়গুলি উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেছেন, পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy