চলতি আর্থিক বর্ষে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ১৯৪০ টাকা ধার্য করেছে সরকার।
খাতায়-কলমে সরকারি ভাবে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। তবে আপাতত নাম নথিভুক্তি চলছে। সহায়ক মূল্যে চাষির থেকে ধান কেনা এখনও শুরু হয়নি। ফলে, জেলায় জেলায় সেই অভাবী বিক্রি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের থেকে অনেক কমেই চাষিরা ধান বেচে দিচ্ছেন ফড়েদের কাছে।
চলতি আর্থিক বর্ষে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ১৯৪০ টাকা ধার্য করেছে সরকার। আর স্থায়ী ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করলে উৎসাহ ভাতা হিসেবে কুইন্টাল প্রতি আরও ২০ টাকা বেশি পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কুইন্টাল প্রতি ১৯৬০ টাকা ধানের দাম পাবেন চাষিরা। সেখানে ফড়েদের কাছে চাষিরা ধান বিক্রি করছেন কুইন্টাল পিছু ১,৪০০-১,৫০০ থেকে ১,১০০-১,২০০ টাকা দরে।
সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হয়নি। তার উপর মাঠ থেকেই নগদ টাকায় ধান কিনছে ফড়েরা। সরকার কিনলে দিন কয়েক পরে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে। ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া ব্লকের তপসিয়া পঞ্চায়েতের তেতুলডাংরা গ্রামের চাষি মানিকচাঁদ ঘোষ বলছিলেন, ‘‘৮০ বস্তা ধান বিক্রি করেছি। কুইন্টাল প্রতি ১১৮০ টাকা পাচ্ছি। হাতে হাতে টাকা পাচ্ছি। কোনও ঝামেলা নেই।’’ বর্ধমানের কালনা ১ ব্লকের রানিবন্ধ গ্রামের তপন দাস রবিবার জমি থেকেই ২৭ বস্তা নতুন ধান বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সহায়ক মূল্যে ধান কেনা এখনও শুরু হয়নি। আলু চাষের খরচ তুলতে কিছুটা ধান বেচে দিলাম।’’ একই কারণে সম্প্রতি খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেছেন কালনার সারগড়িয়া গ্রামের চাষি গঙ্গা রক্ষিত। অনেক চাষি আবার ঋণের দায়ে বাঁধা। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘অনেকেই ফড়েদের থেকে ঋণ নেন চাষের জন্য। ফলে সরকারি জায়গায় বিক্রির ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা বাধ্য হন ফড়েদের ধান দিতে।’’
এই সব নানা অঙ্কেই জেলায় জেলায় ধান কেনার রাশ সেই ফড়েদের হাতে। উত্তরের কোচবিহার, দুই দিনাজপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দুই মেদিনীপুর— সর্বত্র এক ছবি। মালদহে আবার অভিযোগ, কৃষকদের একাংশের থেকে কাগজপত্র জোগাড় করে ফড়েরাই ধান বিক্রির জন্য সরকারি খাতায় নাম নথিভুক্ত করছে। সারা ভারত কৃষক সভার জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক আশিস সরকারেরও অভিযোগ, ‘‘ফড়েরাই কৃষকদের থেকে ধান কিনে নিচ্ছে।’’
জেলায় জেলায় অবশ্য সরকারি ভাবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। স্থায়ী ধান্য ক্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি সরাসরি ধান সংগ্রহ শিবিরও খোলা হচ্ছে। আপাতত মান্ডিতে রেজিস্ট্রেশন-পর্ব চলছে। নদিয়ার কালীগঞ্জের ক্ষুদ্র চাষি কামাই শেখ এ বার ১৫ কাঠা জমিতে ৪ কুইন্টাল ধান ফলিয়েছেন। মান্ডিতে নাম লিখিয়ে এসেছেন তিনি। তবে বলছেন, “সার আর সেচের টাকা মেটানো বাকি আছে। সরকার যদি দিন দশেকের মধ্যে ধান নেওয়া শুরু না করে, খোলা বাজারেই কম দামে বিক্রি করতে হবে।” উত্তর ২৪ পরগনায় আবার নাম নথিভুক্তিতে অনেকে দুর্ভোগে পড়ছেন। বিশেষ করে ভাগ চাষিদের জমির নথিপত্র না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
কিছু জেলায় ফড়েরাজ রোখার উদ্যোগও শুরু হয়েছে। ফড়েরা যাতে সরকারের কাছে ধান বিক্রির কুপন না পায় সে জন্য সাগরদিঘি, রঘুনাথগঞ্জ, ভরতপুর-সহ মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় রাত জেগে কুপনের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন চাষিরা। সম্প্রতি বেলডাঙা ২ ব্লকের জনপ্রতিনিধিরা ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সহায়ক মূল্যে ধান কেনার বৃত্তে কিছুতেই ফড়েদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বলেন, ‘‘ফড়েরাজ রুখতে কিসান বাজারে সিসিটিভি লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছি।’’ ঝাড়গ্রামে আবার ফড়েদের রুখতে মাঠে নামানো হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। মাঠে গিয়ে তাঁরাই ধান কিনবেন চাষিদের থেকে।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতে অবশ্য বৃষ্টির জেরে ধান কাটা পিছিয়েছে। মাঠের ধান চাষির ঘরে না ওঠায় এখানে সমস্যা এখনও প্রকট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy