Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Child Abuse

শিশুদের ধর্ষণ বেশি পরিবারে

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ভারতে শিশুদের উপর যৌন অত্যাচার বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ। শিশুদের উপর যৌন অত্যাচারের মোট অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৪৪৯টি।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:১২
Share: Save:

শিশু নিগ্রহের ক্ষেত্রে আতঙ্ক বাড়িয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্টও। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ভারতে শিশুদের উপর যৌন অত্যাচার বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ। শিশুদের উপর যৌন অত্যাচারের মোট অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৪৪৯টি। ২০১৪ সাল থেকে হিসাব ধরলে, ২০২২ সালে শিশুদের উপর যৌন অত্যাচার বেড়েছে প্রায় ৮১ শতাংশ। ২০১৪ সালে শিশুদের উপর যৌন অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৮৯,৪২৩টি। দেখা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং রাজস্থানের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শিশুদের উপর যৌন অত্যাচার বেড়েছে পাঁচ শতাংশ।

কিন্তু চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (ক্রাই) এবং কলকাতা পুলিশের করা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গত দু’বছরে এই রাজ্যে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের মধ্যে ধর্ষণ এবং শিশুদের উপর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ (যা জমা পড়েছে) যথাক্রমে ১২ এবং ১৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণ এবং যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে বাড়িতে। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে শিশুদের দেখাশোনার প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল। শিশুদের কর্মক্ষেত্রে যৌন অত্যাচার রয়েছে এর পরেই।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শিশুদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অপরাধ ঘটে, তার মধ্যে গত দু’বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে যৌন নির্যাতন। এর পরেই রয়েছে খুন, অপহরণ এবং বাল্যবিবাহ। শিশুরা সবচেয়ে বেশি শিকার আত্মীয়দের। এর পরেই রয়েছে নিজের বাবা-মা এবং কেয়ার গিভার (শিশুর দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তেরা)। ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস’-এর কর্তা সুধীর মিশ্রের কথায়, “পকসো আইন চালু হওয়া এবং জুভেনাইল জাস্টিস আইনের কড়াকড়ির জেরে এখন কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় পোর্টালে সহজে অভিযোগ জমা করা যায় বলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অভিযোগও আসছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শিশুদের উপর যৌন অত্যাচারে জড়িতদের ৫০ শতাংশই পিডোফাইল। ফলে এ ব্যাপারে আগে সচেতন না হলে সমস্যা কমবে না।”

মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “শিশুদের উপর অত্যাচার রুখতে আগে পিডোফিলিয়াকে চেনা প্রয়োজন। একে শুধুই রোগ বলে দিলে কিন্তু অপরাধ অনেকটাই লঘু হয়ে যায়। বদলে একে এক অন্য ধরনের যৌন বিকার ধরা ভাল। যে হেতু এ ক্ষেত্রে শিশুর উপর আকর্ষণ কাজ করে আর শিশু সবচেয়ে অসহায় এবং প্রতিরোধ তৈরি করতে পারে না, সময়মতো কাউকে বলতেও পারে না, তাই এই বিকারের জেরে জোর করে যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হল, অপরাধ হিসেবে তার গভীরতা অনেক বেশি।”

দেবাঞ্জন বলেন, “যৌন অত্যাচারের লক্ষণ স্পষ্ট দেখা গেলে বোঝা সহজ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনও শিশুকে অন্য রকম ভাবে ছোঁয়া, চুম্বন, আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, নির্দিষ্ট বয়সের আগেই যৌনাঙ্গ সম্পর্কে পরিচয় করানো, এমন ভিডিয়ো (চুম্বনের দৃশ্য হলেও না) দেখানো, যা তার দেখার কথাই নয়, এমন কিছু খাওয়ানো, যা অল্প বয়সে যৌন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে— এর সবই কিন্তু পিডোফিলিয়ার ফাঁদ।”

তা হলে উপায়? মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বললেন, “অভিভাবক হিসেবে সতর্ক হন। পরিবারে এমন পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে শিশু নিজের সমস্যা বলতে পারে। আর এমন কিছু ঘটলে তা চেপে না রেখে দ্রুত পুলিশের কাছে যান।”

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy