প্রতীকী ছবি।
হানাদারির সূচনা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে করোনা। কেন পরাক্রান্ত অতিমারির মধ্যে আট দফায় বিধানসভার ভোট হবে, সংক্রমণ এড়াতে কম সময়ে নির্বাচন শেষ করে দেওয়া হবে না কেন, সেই প্রশ্নে তখন ব্যাপক জলঘোলা হয়েছিল। তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে বকেয়া পুরভোট করানোর চাপ বেড়েছে তৃণমূল সরকারের উপরে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের অন্তিম দশা এবং তৃতীয় ঢেউয়ের চোখরাঙানির মধ্যে বড় হয়ে উঠেছে টিকাকরণ, বিশেষত পুর এলাকায় টিকাকরণের প্রশ্নটি।
বিভিন্ন পুর এলাকায় কত দ্রুত টিকা পর্ব শেষ করা যাবে, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেই। মনে করা হচ্ছে, বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন সময়মতো হয়ে গেলে এবং কোভিড পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পুরভোট হতে দেরি হবে না। এই অবস্থায় বেশি জনঘনত্বের পুরসভা এলাকাগুলিতে টিকাকরণে জোর দিচ্ছে প্রশাসন।
স্বাস্থ্য শিবিরের খবর, ২৭ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের ১২৪টি পুর এলাকায় ৬৮.৪৩% প্রথম এবং ১২.৫০% মানুষকে প্রথম ডোজ় দেওয়ার কাজ শেষ। এই তথ্য রোজই পাল্টাচ্ছে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, গত বিধানসভা ভোটের সময় রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৩৩%। এখন তা কমে ১.৫ শতাংশের কাছাকাছি। জুন থেকেই পুর এলাকার টিকাকরণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় এনেছে নবান্ন। সর্বাগ্রে দ্বিতীয় ডোজ় দিতেও বলা হয়েছে সব জেলা। চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত এই কাজের গতি ‘সন্তোষজনক’ হলেও সার্বিক হিসেবে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তারা। কারণ: প্রথমত, সব পুরসভা এলাকায় প্রথম ডোজ় টিকাকরণের গতি সমান নয়। দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় ডোজ়ের নিরিখে পুর এলাকার টিকাকরণের হার এখনও তুলনায় খুবই কম। প্রশাসনিক কর্তাদের আশা, টিকার জোগান ধারাবাহিক থাকলে পুর এলাকাগুলির টিকাকরণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে শেষ করে ফেলতে অসুবিধা হবে না।
রাজ্যে টিকার ঘাটতি চলছে প্রায় শুরু থেকেই। ঘাটতি সব জেলাতেই। তার মধ্যে সব পুরসভায় টিকাকরণের গতি সমান নয় কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী প্রায় নিয়মিতই এই বিষয়ে সব জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে চলেছেন। নবান্নের যুক্তি: প্রথমত, এক-একটি পুর এলাকায় পুরসভার সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালও টিকাকরণের কাজ চালাচ্ছে। কোনও কোনও পুরসভা সেই সব ক্ষেত্রের সম্মিলিত টিকাদানের সংখ্যাকে তালিকাভুক্ত করছে। অনেক পুরসভা তুলে ধরেছে শুধু নিজেদের তথ্যটুকু। দ্বিতীয়ত, কলকাতা পুরসভা সরাসরি স্বাস্থ্য দফতর থেকে টিকা পায়। কিন্তু বাকি পুরসভাগুলিকে নির্ভর করতে হয় জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের উপরে। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে পুরসভার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও টিকা পাঠাতে হয়। তাই জোগান-ঘাটতির মধ্যে সব পুরসভা সমান সংখ্যক ডোজ় না-পাওয়ায় গতির হিসেবে হেরফের হয়েছে। তৃতীয়ত, টিকাপ্রাপকের হিসেব নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একটি ব্লকের মানুষ অন্য ব্লকে গিয়ে টিকা নিতেই পারেন। এই কারণেও কোনও পুরসভা থেকে বেশি, কোনও পুরসভা থেকে কম টিকাপ্রদানের তথ্য আসছে।
প্রশাসনের শীর্ষ মহল জানাচ্ছে, আগের তুলনায় এখন জোগান বাড়ায় কম গতির জেলায় আগের থেকে বেশি টিকা পাঠানো হচ্ছে। ফলে যেখানে ঘাটতি রয়েছে, সেখানে গতি বাড়ানো সম্ভব। “এখন মাসে প্রায় ৭০ লক্ষ ডোজ় টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সব পুর এলাকায় টিকাকরণের কাজ দ্রুত শেষ করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য এখন প্রায় ৫০% টিকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। ফলে এই কাজও দ্রুত শেষ করতে সমস্যা হবে না,” বলেন এক শীর্ষ কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy