(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
আরজি কর পর্বে ‘প্রতিবাদী’ শিল্পীদের বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার কুণালের সম্পূর্ণ উল্টো মেরুর অবস্থানে দাঁড়ালেন দলেরই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কুণালের পাশে তো তিনিই দাঁড়ালেনই না, বরং বুঝিয়ে দিলেন, কুণাল যা বলেছেন, তা ‘দলের অবস্থান’ নয়। এর ফলে তৃণমূলের অন্দরের জল আরও খানিকটা ঘোলা হল বলেই মনে করছে দলের একাংশ।
সম্প্রতি কুণাল শিল্পীদের একাংশকে বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন। আরজি কর পর্বে যে যে শিল্পী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা দাবি করেছিলেন, তাঁদের বয়কট করতে হবে বলে গত ৩০ ডিসেম্বর আওয়াজ তুলেছিলেন কুণাল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল বলেছিলেন (সমাজমাধ্যমে লিখেওছিলেন), ‘‘যে শিল্পীরা পরিকল্পিত কুৎসা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকার ও দলকে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকদের কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্ররোচনা ছড়িয়েছেন, তাঁদের এই শীতের মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত জলসা বা অনুষ্ঠানে যেন না দেখা যায়। এই শীতে এঁদের বয়কট করা হোক। কোনও তৃণমূল নেতার কোনও বিভ্রান্তি থাকলে উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিন। কর্মী-সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দিন।’’
কুণাল ‘উচ্চতর নেতৃত্ব’ বলতে যাঁদের কথা বলেছেন, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোয় অভিষেক সেই পর্যায়েই পড়েন। সেই অভিষেকই বৃহস্পতিবার বলেছেন, “কোথায় কাকে দিয়ে গান গাওয়াবে, কখন গাওয়াবে, কে গান গাইবে, আমি জোর করে কারও মাথায় চাপাতে চাই না। আমি কোথা দিয়ে হাঁটব-চলব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা সকলের আছে।’’ এর পরেই অভিষেক স্পষ্ট করে দেন, কুণালের কথা ‘দলের বক্তব্য’ নয়। অভিষেক বলেন, ‘‘পার্টির তরফে কেউ বলেছে? কোনও নোটিস দেখেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা আমি জেনারেল সেক্রেটারি কিছু বলেছি?’’ বস্তুত, অভিষেক স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই জানিয়েছেন, বয়কটের তালিকাভুক্ত এক শিল্পীর অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট শিল্পী তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনিই মধ্যস্থতা করে সেই শিল্পীর অনুষ্ঠান করানোর বন্দোবস্ত করেন। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ বলেন, ‘‘যে হেতু উনি (সেই শিল্পী) ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করেছেন, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে মেলা কমিটির সদস্য-সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথা বলি। যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি শো (অনুষ্ঠান) করেছেন পরে জানতে পারি।”
আরজি কর-কাণ্ড এবং তার পরবর্তী নাগরিক আন্দোলন নিয়ে তিনি যে ‘ভিন্ন’ অবস্থান নিয়েছিলেন, তা আগেই বুঝিয়েছেন অভিষেক। ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে ‘মেয়েদের রাত দখল’ দেখেছিল সারা বাংলা। তার পরে ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে অভিষেক মহিলাদের সেই আন্দোলনকে সম্মান জানিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেই পর্বে অভিষেকই ছিলেন তৃণমূলের প্রথম কোনও বড় নেতা, যিনি রাত দখল আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা এবং সংহতি জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি আবার বলেছেন, ‘‘১৪ অগস্ট যাঁরা রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন, কেউ সমর্থন করুক বা না-করুক, আমি সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। আমি আজও একই কথা বলছি। কারও ভাল লাগতে পারে বা খারাপ লাগতে পারে।”
ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের সর্বশেষ জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক থেকে যে মুখপাত্র-তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে অন্যতম নাম ছিল কুণালের। রাজনীতিতে সাধারণ ধারণা, কোনও দলের মুখপাত্র যে মন্তব্য করেন, সেটা দলেরই কথা। কিন্তু কুণালের কথা থেকে কি আদৌ তৃণমূলের অবস্থান সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত পৌঁছনো যায়? বৃহস্পতিবার অভিষেকের বক্তব্যে সেই প্রশ্নই উঠে গিয়েছে দলের অন্দরে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন দলের অন্দরে কুণালের পরিচয় ছিল অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই ‘নৈকট্য’ আর দেখা যাচ্ছে না বলেও দাবি তৃণমূলের অনেকের। তবে ‘ঘনিষ্ঠতা’র মতোই ‘অঘনিষ্ঠতার’ খবর অসমর্থিত সূত্রের। গত নভেম্বরে অভিষেকের জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কুণাল সমাজমাধ্যমে তাঁকে ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে কুণালের বয়কট তত্ত্ব নিয়ে যে ভাবে দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন অভিষেক, তাতে নতুন বছরে তৃণমূলে নতুন আলোচনা— ক্যামাক স্ট্রিটের সঙ্গে কি কুণালের দূরত্ব অনতিক্রম্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy