Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Arpita Mukherjee

Arpita Mukherjee: ­­­প্রভাবশালী যোগেই কি শিক্ষা দফতরে চাকরি এবং বাড়ির কাছে পোস্টিং পান অর্পিতার বোন?

পার্থ-অর্পিতার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠছে, প্রভাবশালী যোগেই কি রাজ্য শিক্ষা দফতরে পাকা চাকরি এবং বাড়ির কাছে পোস্টিং পান সঙ্গীতা?

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২২ ০৫:৪০
Share: Save:

বছর কয়েক আগেও প্রতিবেশীদের বাড়িতে ধূপকাঠি বিক্রি, রান্নার কাজ করতে দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু দুই বছর আগে সকলে জানতে পারলেন, ওই তরুণী সরকারি চাকরি পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তখন সন্দেহ হয়নি কারও। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ঘটনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠছে, প্রভাবশালী যোগেই কি রাজ্য শিক্ষা দফতরে পাকা চাকরি এবং বাড়ির কাছেই পোস্টিং পেয়েছিলেন সঙ্গীতা ধর। যিনি অর্পিতার ছোট বোন!

বেলঘরিয়ার কিশোর পল্লিতে থাকেন সঙ্গীতা। তাঁর স্বামী কল্যাণ ধর বড় শ্যালিকা অর্পিতার গাড়ি চালাতেন। শনিবার কিশোর পল্লিতে ধর দম্পতির নতুন তৈরি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মূল গ্রিলের দরজায় বাইরে থেকে তালা ঝুলছে। বারবার ডাকাডাকিতে ভিতরের কাঠের দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন বাড়ির এক সদস্য। তাঁর দাবি, “কেউ বাড়িতে নেই। সবাই বেরিয়ে গিয়েছেন। কখন আসবেন জানি না।” এ দিন কল্যাণকে ফোন করলে, ট্রু-কলারে দেখা যায়, ‘কল্যাণ ধর, ইচ্ছে বিয়ে বাড়ি’ ভেসে উঠছে। কল্যাণ বলেন, “আমি ক্লান্ত। কথা বলতে পারব না।” সঙ্গীতার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, সঙ্গীতা স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্মী। কল্যাণ একসময় ট্যাক্সি চালাতেন। প্রতিবেশীরা তেমন ভাবে কথা বলতেন না কল্যাণদের সঙ্গে। অভিযোগ, ‘প্রভাবশালী’ কল্যাণকে কেউ কিছু বলতে ভয় পেতেন। শরিকি বাড়িতে থাকলেও, দেড় বছর আগে তরুণ পল্লিতে ভাড়াবাড়িতে চলে যান কল্যাণেরা। গত বছর পুজোর পর থেকে যৌথ সম্পত্তিতে নিজের অংশে নতুন বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। তিন মাস আগে নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশে এসেছিলেন অর্পিতাও।

সূত্রের খবর, বছর দুই-আড়াই আগে থেকে সঙ্গীতা ও কল্যাণের জীবনযাত্রা বদলে যেতে থাকে। জানা গিয়েছে, গ্রুপ ডি- পদে চাকরি পাওয়ার পরে বিকাশ ভবনে পোস্টিং ছিল ওই তরুণীর। মাস ছয়েক পরে তাঁকে বেলঘরিয়ার বান্ধব নগরে স্কুল শিক্ষা দফতরের কামারহাটি সার্কলের এসআই অফিসে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়। সপ্তাহে এক দিন করে তিনি বিকাশ ভবনে যেতেন। কামারহাটিতে পোস্টিং হলেও, তিনি বিকাশ ভবনের কর্মী হিসেবে বেতন পেতেন। গত ২৬ জুলাই শেষ অফিসে গিয়েছিলেন সঙ্গীতা। কিশোরপল্লির স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “শুনেছিলাম, সঙ্গীতা ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার পরেও কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এখন অবশ্য সবটাই স্পষ্ট।” যদিও সঙ্গীতার মা মিনতি মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “মেয়ে পড়াশোনা করেছে এইটুকু জানি।” কিন্তু কত দূর পর্যন্ত পড়েছেন? বারবার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “স্কুল ফাইনাল করেছে। আর কিছু জানি না।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতি রাতেই অর্পিতার দামী গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতেন কল্যাণ। সকালে আবার বেরিয়ে যেতেন। পরিচিত মহলে তিনি দাবিকরতেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির ‘মালকিন’ অর্পিতা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবকের কথায়, “কল্যাণ সব সময়েই বলতেন, কোনও দরকার হলে ওঁকে বলতে। পার্থদাকে দিয়ে সব কাজ হয়ে যাবে।” স্থানীয়দের কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, কখনও সখনও মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িও কল্যাণ চালাতেন বলে শোনা যেত।

সূত্রের খবর, গত ১৯ জুলাই সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন হাইটস’ আবাসনের ব্লক-৫-র ন’তলায় অর্পিতার ৮এ-ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন কল্যাণ। ব্লকের রেজিস্টারে তার উল্লেখ রয়েছে। জানা যাচ্ছে, অর্পিতার বড় পিসির শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে চুঁচুড়া যাওয়ার জন্য মিষ্টি, মালা কিনে কল্যাণ ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। তারপরে দু’জনে একসঙ্গে গাড়িতে বেরিয়ে ছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। জানা যাচ্ছে, বেলঘরিয়ার পৈতৃক বাড়ি এলাকার বিভিন্ন পুজোয় আসতেন অর্পিতা। পুজো উপলক্ষে খাওয়াদাওয়ার জন্য চাল, ডাল সামগ্রী পাঠাতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদাও দিতেন। এলাকায় যখনই আসতেন, গাড়ির চালক থাকতেন কল্যাণই।

অন্য বিষয়গুলি:

Arpita Mukherjee ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy