অর্জুন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
তিন দিন আগেও ব্যারাকপুর জেলের চার নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে বিশেষ আলোচনা হত না। সেখানে থাকেন মূলত বয়স্ক কিছু বন্দি। কিন্তু আচমকাই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এই ওয়ার্ড। কারণ, এখন সেখানে রয়েছেন এমন এক জন, যাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করায় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ‘কোন্দল’ কার্যত বেআব্রু হয়ে পড়েছে। লক-আপ খোলার পরেই বন্দিদের অনেকে চার নম্বর ওয়ার্ডের ওই আবাসিককে দেখতে চাইছেন। যদিও তাঁকে ওয়ার্ডের বাইরে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তিনি পাপ্পু সিংহ। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের ভাইপো।
তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদবকে খুনের ঘটনায় ধৃত পাপ্পুকে ব্যারাকপুর সংশোধনাগারে আনা হয়েছে গত শুক্রবার। জেল সূত্রের খবর, পাপ্পুকে কোন ওয়ার্ডে রাখা হবে, তা ঠিক করতে হয়েছে মাথা খাটিয়ে। জেল সুপার অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শে তাঁকে রাখা হয়েছে
চার নম্বর ওয়ার্ডে।
এক আধিকারিক বললেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডে রয়েছেন দশ জন। তাঁরা সকলেই শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির। কেউই কুখ্যাত অপরাধী নন। তাঁদের জন্য কোনও দিনই জেল প্রশাসনকে বেকায়দায় পড়তে হয়নি। ওখানে পাপ্পু থাকলে কোনও সমস্যা হবে না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এখানে বন্দিদের মধ্যে ওঁর কোনও শত্রু রয়েছে কি না, জানা নেই। তাই ওঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। বার বার ওই ওয়ার্ড পরিদর্শন করছেন কারারক্ষী ও আধিকারিকেরা।’’
জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার তাঁকে নিরামিষ খাবার দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন পাপ্পু। ওই তিন দিন তিনি নিরামিষ খাবার খান। পুজো-অর্চনাও করেন। এক জেল আধিকারিক বলেন, ‘‘এমনিতে সপ্তাহে তিন দিন আমিষ ও চার দিন নিরামিষ খাবার দেওয়া হয় বন্দিদের। কোন খাবার কোন দিন দেওয়া হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করা আছে। তবে, পাপ্পুর আর্জি মেনে তাঁকে ওই তিন দিন নিরামিষ খাবারই দেওয়া হবে।’’
কী করছেন পাপ্পু? ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের বাইরে আসছেন না তিনি। ওয়ার্ডে বসে টেলিভিশন দেখেন। খবরের কাগজ পড়েন। সহ-আবাসিকদের সঙ্গে তেমন কথা বলতেও দেখা যায় না। জেল চত্বরের মধ্যে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। ওয়ার্ডে বসে খেলাও দেখেন তিনি।’’ শুক্রবার সংশোধনাগারে আসার পরেই জেল সুপার পাপ্পুকে জেলের সব নিয়মকানুন জানিয়ে দেন। সে সব মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। বলে দেওয়া হয়, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। পাপ্পু জেল কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করে জানান, সব নিয়ম মেনেই তিনি থাকবেন। তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। জেল সূত্রের খবর, সোমবার পর্যন্ত পাপ্পুর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি কেউ। শুক্রবার যে সমস্ত পোশাক তিনি সঙ্গে এনেছিলেন, সেগুলিই পরছেন। সপ্তাহে তিন দিন নিরামিষ খাবার চাওয়া ছাড়া অন্য কোনও আবদারও তিনি করেননি। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পাপ্পু একটি হিন্দি সংবাদপত্র পড়েন। সেটি ওই ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে একটি বাংলা সংবাদপত্রও।’’
কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাঁর ভাইপোকে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্জুন। এই ‘যড়যন্ত্রের’ নেপথ্যে দলেরই একাংশ রয়েছেন বলেও ইঙ্গিত করেছেন তিনি। পাপ্পু গ্রেফতার হওয়ার পরেই অর্জুনের সঙ্গে তাঁর বিরোধী বলে দলে পরিচিত তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের বাগ্যুদ্ধ চরমে ওঠে। অস্বস্তি ঢাকতে ময়দানে নামতে হয় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। ভাইপোর গ্রেফতারির প্রসঙ্গ ওঠায় এ দিন অর্জুন বলেন, ‘‘দলের লড়াই দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। আর কী-ই বা বলব।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘পাপ্পুর খবর নিচ্ছি। ওখানে (জেলে) কেউ ওর কিছু করতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy