ডেউচা-পাঁচামি ঘিরে ফের উত্তাপ বাড়ল। ‘মানবাধিকার সংগঠন’ এপিডিআর-এর প্রতিনিধি দলকে ডেউচা ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এপিডিআর-এর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তৃণমূলের পাল্টা আক্রমণ, ‘সোনার প্রকল্পে’ বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজিবিএসের মঞ্চ থেকেও ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লা খনি প্রকল্পের অগ্রগতির কথা জানিয়েছিলেন। এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সরকার কী ধরনের ক্ষতিপূরণ বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে, তা-ও মুখ্যমন্ত্রী বিশদে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সে বক্তব্য নিয়ে বিরোধী শিবির থেকে সংশয় প্রকাশ করা হয়। তাই এলাকার পরিস্থিতি এবং স্থানীয়দের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে ডেউচায় ‘তথ্যানুসন্ধানকারী দল’ (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় এপিডিআর।
মঙ্গলবার রাতে আট জনের সেই প্রতিনিধি দল সিউড়িতে পৌঁছে একটি অতিথি নিবাসে ওঠে। এপিডিআর-এর দাবি, বুধবার ভোরে অতিথি নিবাস থেকে বেরোনোর সময়ে তাদের প্রতিনিধিরা বুঝতে পারেন যে, তাদের পুলিশ আটকে রেখেছে। সারা রাত পুলিশ ওই অতিথি নিবাস ঘিরে রেখেছিল এবং ভোরে তাঁদের সেখান থেকে বেরোতে বাধা দেওয়া হয় বলে সংগঠনটির অভিযোগ। এপিডিআর-এর দাবি, দীর্ঘ ক্ষণ টানাপড়েন চলার পর, সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাদের প্রতিনিধি দলটিকে ছাড়া হয়। কিন্তু তিলপাড়া ব্যারাজ পেরিয়ে শেওড়াকুড়ি মোড়ের কাছে পৌঁছোতেই শ দেড়েক লোকের জমায়েত তাদের পথ আটকায়।
যাঁরা এপিডিআর-এর গাড়ি আটকেছিলেন, তাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন ডেউচা-পাঁচামির বাসিন্দা হিসেবে। প্রতিনিধি দলটিকে আর এগোতে না দিয়ে পাশের একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে ঘেরাও করা হয় বলে অভিযোগ। এপিডিআর-এর দাবি, ‘তথ্যানুসন্ধানকারী দলের’ সদস্যদের ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। অকথ্য গালিগালাজও চলতে থাকে। ঘণ্টা দুয়েক এ ভাবে আটকে থাকার পর প্রতিনিধি দলটির অন্যতম সদস্যা রাণু ঘোষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বমি করতে থাকেন বলে এপিডিআর সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তখন দলটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডেউচা-পাঁচামির ‘তথ্যানুসন্ধান’ আর সম্ভব হয়নি দলটির পক্ষে। রাণুকে সিউড়ির হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে বিজিবিএস থেকে মিথ্যাচার করেছিলেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওখানকার স্থানীয় আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু অংশের মানুষ যখন আপত্তি জানাচ্ছেন, যখন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার কর্মীরা পৌঁছেছেন, তখন তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ নামিয়ে, ইন্টারনেট বন্ধ করে আসলে ডেউচা-পাঁচামিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
তবে তৃণমূলের অভিযোগ, ‘উন্নয়নে বাধা’ দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি অংশ। দলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডেউচা-পাঁচামি এই রাজ্যের জন্য একটি সোনার প্রকল্প। সেই প্রকল্পে কিছু মানুষ ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এই মুহূর্তে মানুষের কর্মসংস্থান এবং রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে ভাবা উচিত।’’