এত দিন কোথায় ছিলেন?
বনলতা সেনের আমলে প্রশ্নটা হয়তো পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে হতে পারত, এ যুগে অত সহজে হচ্ছে না। মুখোমুখি বসে না হোক, টিভি-র পর্দায় কি সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে গলার শিরা-ফোলানো আগ্রাসী ভঙ্গিতেই বরং প্রশ্নটা ছুড়ে দেওয়া দস্তুর।
সম্প্রতি রামনামের আড়ালে উস্কানি নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের দু’টি শিবির চিঠির সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু সমাজের উপরে নির্যাতন নিয়ে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন, তাঁদের ঘাড়ে প্রশ্নের বোঝা, অমুক সময়ে তমুকরা যখন মারছিল, তখন কোথায় ছিলেন আপনি? প্রতিপ্রশ্নে সংখ্যাগুরু সমাজের উপরে ‘অত্যাচারে’র নানা ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছে, পুলিশি তদন্তে যার কয়েকটির বাস্তবতা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।
ইংরেজিতে এই ‘কোথায় ছিলেন’-পন্থা বা পুরনো কাসুন্দি টেনে এনে সমকালের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা গুলিয়ে দেওয়ার কসরতের একটা নাম আছে। ‘হোয়াটঅ্যাবাউটারি’! শুক্রবার গভীর রাতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব চিত্রপরিচালক অপর্ণা সেনের টুইট ও ফেসবুক পোস্ট এই হোয়াটঅ্যাবাউটারি-রোগের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
জনৈক সাংবাদিকের সঙ্গে কাল্পনিক সংলাপ লিখেছেন অপর্ণা।
হিন্দুদের উপরে জিজিয়া কর চাপানোর সময়ে আপনি কোথায় ছিলেন?
সেটা তো আওরঙ্গজ়েবের আমলে।
বলুন তখন কেন চুপ ছিলেন আপনি? নেশন ওয়ান্টস টু নো!
ফেসবুকে অপর্ণার এই পোস্ট দেখে মজা করে এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লিখেছেন, ‘মনে পড়ে রুবি রায়’-গানটা মনে পড়ে গেল! কারও বা আমেরিকান শিল্পী অ্যালান জ্যাকসনের ‘হোয়্যার ওয়্যার ইউ দেন’ গানটা মনে পড়ছে।
অপর্ণা সহাস্য: ‘‘কোনও কথা ঘুরিয়ে দিতে বা সুস্থ আলোচনা নষ্ট করতে এটাই ধ্রুপদী কৌশল।’’ মনে পড়ানো বা মনে করানোর এই প্রশ্নমালা প্রাক্তন আমলা জহর সরকারের কাছেও বিশেষ সঙ্কেতবাহী। ‘‘গুজরাতে মুসলিম-নিধন নিয়ে বললেই পাল্টা ’৮৪-র শিখ-হত্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়! দিল্লিতে চাকরির সূত্রে দেখেছি, যাঁরা এ সব প্রশ্ন করেন, তাঁদের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।’’ এবং সাধারণত গণতন্ত্রের সঙ্কটকালেই এমন ‘হোয়াটঅ্যাবাউটারি’ বা ‘কোথায় ছিলেন-গিরি’ দেখা দেয় বলে মনে করেন জহরবাবু। এ রাজ্যে বাম আমলের শেষে বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদে মুখর হওয়ার পরে তাঁদের কোণঠাসা করা হয়েছিল, তৃণমূলের আমলেও প্রতিবাদীদের একই ভাবে উত্ত্যক্ত করে থামানোর চেষ্টা হয়েছে। ‘‘আবার বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির পরেও প্রতিবাদের কণ্ঠরোধে এই আজগুবি প্রতিপ্রশ্নের ছকটাই কৌশল। ইদানীং সর্বত্র চ্যানেলসেনা, হোয়াটসঅ্যাপসেনা, ফেসবুকসেনা-রা ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্ন-বাণে বিদ্ধ করে সব কিছুই গুলিয়ে দিতে চাইছেন।’’— বলছেন জহরবাবু।
অনেকের চোখেই এ এক বিপজ্জনক প্রবণতা। মিথ্যা ও গলার জোরে ‘কাল্পনিক সত্য’ রচনা করে প্রতিবাদী-কণ্ঠগুলিকে ঘিরে অবিশ্বাস তৈরি করা চলছে। জহরবাবু বলছেন, ‘‘যাঁরা প্রশ্নের ছলে সব গুলিয়ে দেন, তাঁদের আমি সূর্যমুখী বলি। তিনি আমলা, সাংবাদিক বা শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, যা-ই হোন, কোনও না কোনও কারণে ক্ষমতাসীন শক্তি বা উদিত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন।’’ অপর্ণার দাবি, ‘‘সব দলের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেছি।’’ তবে ‘কোথায় ছিলেন-গিরি’র জবাব না-দিয়ে পাল্টা মজা করাটাই রাস্তা বলে মনে করছেন শিল্পী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy