Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Aparna Sen on Panchayat Election Violence

পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘খোলা চিঠি’ দিয়ে অপর্ণা বললেন ‘এই পরিবর্তন চাইনি’

রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মূলত তাকেই নিশানা করেছেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। মমতার উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠি পাঠ করেও শুনিয়েছেন তিনি।

Aparna Sen gives open letter to West Bengal CM Mamata Banerjee to protest against the violence during Panchayat Election 2023.

বৃহস্পতিবার ভারতসভা হলের আলোচনাচক্রে অপর্ণা সেন। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৯
Share: Save:

রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে ‘হতাশ’ অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিশিষ্টজনদের একাংশের লেখা খোলা চিঠি পাঠ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার কলকাতার ভারতসভা হলে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের এক আলোচনাচক্রের পরে ওই চিঠি প্রকাশ্যে আনা হয়। আলোচনাচক্রে রাজ্য সরকারের সমালোচনার পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেন অপর্ণা। সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি তৃণমূল সরকারেরও নিন্দা করেন তিনি। অপর্ণা বলেন, ‘‘এই পরিবর্তন আমরা কেউ চাইনি।’’

রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মূলত তাকেই নিশানা করেছেন অপর্ণা-সহ খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্টেরা। চিঠিতে মমতাকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ‘‘গত ৩৭ দিনে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বহু মানুষ নিখোঁজ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আপনি এই দায় কোনও ভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব অস্বীকার না করেও বলা যায়, এই হত্যালীলা, অরাজকতার দায়িত্ব মূলত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং আপনার। স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নির্ভর করেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে চলতে হয়।’’ চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘অবিলম্বে এই রক্তস্নাত পশ্চিমবঙ্গে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করে রাজ্যবাসীর প্রাণ, জীবিকা ও সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব নিতে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার উদ্যোগী হোক।’’ এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, ‘‘অপর্ণাদেবীর স্মরণে থাকা উচিত, বামফ্রন্টের আমলে নির্বাচনে কম সন্ত্রাস হত না। কিন্তু তৃণমূল সহনশীল হওয়ার কারণে এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না বলে ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও ভোটে তৃণমূল কর্মীদেরই বেশি মৃত্যু হয়েছে।’’

শুধু তৃণমূলকে আক্রমণই নয়, সব রাজনৈতিক দলকেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলে নিশানা করেছেন অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘‘এই দেশে গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্রও আর অবশিষ্ট নেই। কিছু দিন পরে হয়তো এ ভাবে কথাও বলা যাবে না। সমস্ত রাজনৈতিক দল, আমাদের রাজ্যের শাসকদলকে ধরেই বলছি, সব দল সম্পূর্ণ ভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। আর যারা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, তারা কোনও আসনই পায় না।’’

অপর্ণার এই আক্রমণের জবাবে এক সুর তৃণমূল ও বিজেপির। ‘‘ভারতের সাংবিধানিক ভিত্তিটাই রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের উপর নির্ভর করে। কোনও দল বা রাজনীতিক খারাপ হতে পারেন, কিন্তু সব রাজনৈতিক দল খারাপ এমন ধারণা পোষণ করার অর্থ সংবিধানের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন।’’ আবার বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এত দেরিতে বোধদয় হল কেন? যাঁকে কাঁধে করে ওঁরা ক্ষমতায় নিয়ে এলেন, তাঁর লুটপাট দেখে এ সব বলছেন! দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কথা।’’ দিলীপের আরও বক্তব্য, ‘‘উনি রাজনৈতিক দলের নিন্দা করছেন। চলচ্চিত্র জগতের সবাই ভাল কি? সমাজ খারাপ হয়ে গেলে সব কিছুতেই তার প্রভাব পড়ে। রাজনীতিতেও সবাই খারাপ হয় না। এটা ঠিক যে, অনেক ভাল মানুষ রাজনীতিতে এসে খারাপ হয়ে যান। তখন সেটাকে মেরামত করতে হয়। সেই কাজটা বিজেপি করছে।’’

দেশে গণতন্ত্রের কিছু অবশিষ্ট নেই বলেও দাবি করেন অপর্ণা। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্বে তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে যে বিশিষ্টজনেরা গর্জে উঠেছিলেন, পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই বিশিষ্টদের মধ্যে ছিলেন অপর্ণাও। বৃহস্পতিবার সেই সূত্র টেনে অপর্ণাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পরিবর্তন দরকার ছিল। সেই সময়ে বাম সরকার যা করছিল, তা অত্যন্ত অন্যায়। বামেদের হার্মাদ বাহিনী গ্রামকে গ্রাম ভোট দিতে দিত না। সেটা আমরা ভুলিনি। কিন্তু তার পরিবর্তে এটা তো আমরা চাইনি।’’

বাম সরকারের বিরুদ্ধে অপর্ণারা যখন পথে নেমেছিলেন, তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। বর্তমানে তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে যাঁর পরিচিতি রয়েছে। তবে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে শুভাপ্রসন্নের সম্পর্ক কখনও তিক্ত, কখনও মধুর। অপর্ণার কথা শুনে তিনি বলেন, ‘‘অপর্ণার কথা অপর্ণা বলেছেন। আমি তা নিয়ে কেন কিছু বলতে যাব? আমার যা বলার, আমি আগে বলেছি। পরেও বলব।’’

তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বৃহস্পতিবার অপর্ণা বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন ব্যক্তিগত ভাবে মমতার সঙ্গে দেখা করিনি। কারণ, আমি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইনি। আমি পরিবর্তন চেয়েছিলাম। উনি তখন ভোট পেয়েছেন, তাই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কোনও সাংবিধানিক পদের অধিকারী হিসাবে আমাকে ডাকলে আমি গিয়েছি। নন্দনে চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছি। নন্দন আমাদের করের টাকাতেই তৈরি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওঁর কাছে আমাদের সুবিচার চাইতে পারা উচিত। কিছুই হচ্ছে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy