অপর্ণা বাগ
তারা খুনিদের ফাঁসি চায় না। তারা চায়, খুনিরা সারা জীবন জেলেই দগ্ধে মরুক আর তিলে-তিলে বুঝুক, কী অপরাধ তারা করেছে।
নদিয়ার ঘুঘড়াগাছিতে অপর্ণা বাগ খুনে ১১ জন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে এমনটাই বলছে তাঁর দুই মেয়ে, নীলিমা আর দেবিকা। যারা সব চাপ অগ্রাহ্য করে এজলাসে দাঁড়িয়ে অপরাধীদের শনাক্ত না করলে এই রায় হত কি না সন্দেহ।
গত সপ্তাহেই বেরিয়েছে কামদুনি মামলার রায়। তাতে তবু দু’জন ছাড়া পেয়েছে। মঙ্গলবার ঘুঘড়াগাছি কাণ্ডে ১১ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে কৃষ্ণনগর আদালত। আজ, বুধবার তাদের সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা।
অপরাধীদের মধ্যে তৃণমূলের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি লক্ষণ ঘোষ চৌধুরীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত সেই লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কাও রয়েছে, গরু পাচার থেকে জমির সিন্ডিকেটের মতো নানা কারবারে যে ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল। তৃণমূল অস্বীকার করলেও যে আগোগোড়া নিজেকে ‘তৃণমূলের লোক’ বলে পরিচয় দিয়ে এসেছে।
২০১৪-এর ২৩ নভেম্বর সকালে কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখল করতে ট্রাক্টর নিয়ে নেমেছিল লঙ্কা ও তার দলবল। মহিলারা রুখে দাঁড়ালে তারা গুলি-বোমা ছুড়তে শুরু করে। অপর্ণা বাগের বুক ফুঁড়ে যায় গুলি। আহত হন আরও দু’জন মহিলা এবং একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। পরের দিনই লঙ্কাকে ধরা পড়ে। ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। মানবেশ্বর বিশ্বাস নামে এক জন এখনও ফেরার।
লঙ্কা জেলে ঢুকলেও আতঙ্ক কমেনি। সাক্ষীদের ভয় দেখানো শুরু হয়। ৪২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। একের পর এক সাক্ষী বয়ান বদল করে ‘বিরূপ’ হয়ে যান। সাক্ষীদের ভয় দেখানোর অভিযোগে পুলিশ এক জনকে গ্রেফতারও করে। নীলিমা আর দেবিকাকেও ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টোপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বছর আঠারোর নীলিমা আর তার দু’বছরের ছোট বোন সাক্ষ্য দিতে এসে বিচারকের সামনেই লঙ্কা ও বাকিদের চিহ্নিত করে। অভিযুক্ত পক্ষের কৌঁসুলিরা বলেন— ‘‘তোমরা মিথ্যে কথা বলছ। তখন তোমরা মামার বাড়িতে ছিলে।’’ তাতে কেঁদে ফেলে নবম শ্রেণির ছাত্রী দেবিকা সোজা বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘ওরা আমার চোখের সামনে মাকে গুলি করল। আমি মিথ্যে বলব?’’
জেলার আইনজীবীদের একটা বড় অংশের ধারণা, দুই মেয়ের জোরালো সাক্ষ্য মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার ১১ জনকেই দলবদ্ধ ভাবে খুন ও খুনের চেষ্টা ছাড়াও অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক আইনে দোষী সাব্যস্ত করেন কৃষ্ণনগরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (তৃতীয়) আদালতের বিচারক।
দেবিকার কথায়, ‘‘লঙ্কারা সাজা পাবে জেনেও আনন্দ করতে পারছি না। মায়ের মুখটা বারবার ভেসে উঠছে।’’ পাশে বসে নীলিমা বলে, ‘দোষীদের ফাঁসি চাই না। আমরা চাই, ওরা জেলের ভিতরে দগ্ধে মরুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy