Advertisement
E-Paper

উচ্ছ্বাসের শেষে এ বার উদ্বেগ মতুয়াদের মধ্যে

শান্তনুর এই দাবি নতুন করে সংশয় তৈরি করেছে। বনগাঁর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কথায়, সে জন্যই সম্ভবত অনেকে শান্তনুদের কার্ড নিয়ে নিজেদের স্তোক দিতে চাইছেন।

matua community

অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:৪৬
Share
Save

সিএএ-র ফলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হবে না তো? প্রাথমিক উচ্ছ্বাস কাটিয়ে এখন এমনই প্রশ্ন ঘুরছে মতুয়া তথা নমঃশূদ্রদের একাংশের মনে। নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা তো বটেই, কোচবিহারের মতো উত্তরবঙ্গের রাজবংশী প্রধান জেলার নমঃশূদ্রদের অনেকের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বুধবার শান্তনু ঠাকুরদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ দেওয়া একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় ঠাকুরবাড়িতে ভিড় দেখা যায়। উপস্থিত লোকজনের অধিকাংশই জানান, নতুন আইনের কিছু বিষয় নিয়ে সংশয় এবং সেই নিয়ে উদ্বেগের জন্যই তাঁরা কার্ড সংগ্রহ করতে এসেছেন।

শান্তনু ঠাকুর নিজে এ দিন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “১৯৭১ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের আবেদন করতে হবে। কারণ, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী, এ দেশে আসা মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী। তাঁরা ভোট দিলেও ভারতের প্রকৃত নাগরিক নন।” শান্তনুর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁরা নাগরিক বলে নথি নেই। কেন্দ্রের নিয়মমতো তাঁরা উদ্বাস্তু। তাই ভোটার বা আধার কার্ড থাকলেও মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে পুলিশ (ডিআইবি) ১৯৭১ সালের আগের জমির দলিল দেখতে চায়।

শান্তনুর এই দাবি নতুন করে সংশয় তৈরি করেছে। বনগাঁর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কথায়, সে জন্যই সম্ভবত অনেকে শান্তনুদের কার্ড নিয়ে নিজেদের স্তোক দিতে চাইছেন। মতুয়াভক্ত বনগাঁ পুরসভার হেল্থ অফিসার সজল বিশ্বাস ও ৭৪ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা ও এনভিএফ কর্মী সুকুমার দাস জানেন, শান্তনুদের কার্ড সরকারি নথি নয়। তাঁদের মতে, এই কার্ড কেউ খড়কুটোর মতো নিয়ে সন্তুষ্ট হলে সমস্যা নেই।

তা হলে সমস্যা কোথায়? সুকুমার দাবি করলেন, “সিএএ বাতিল হোক। কারণ, এখানে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা নেই। আবেদন করলে নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কা বরং থাকছে।” সজলের কথায়, “আমরা চেয়েছিলাম, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁদের কোনও রকম শর্ত ছাড়া নাগরিক ঘোষণা করা। সিএএ-তে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা নেই।” উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার মতুয়াভক্ত শম্ভু সরকার বলেন, “উদ্বেগের মধ্যে আছি। জানি না আবেদন করব কি না! সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আবেদন না করলে যদি পরে কোনও সমস্যা হয়!” একই উদ্বেগে কোচবিহারের বহু নমঃশূদ্র মানুষও।

এই সমস্যার কথাই তাঁরা তুলে ধরতে চাইছেন, দাবি বিরোধীদের। তৃণমূলের মমতাবালা ঠাকুর বলেন, “ওঁরা (অমিত শাহেরা) বলছেন, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিচ্ছি। তা হলে এত শর্ত কেন? ন’রকম নথি দিতে হবে। এত নথি কার কাছে আছে?” সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া মুকুটমণি অধিকারীও বলেন, “মতুয়ারা নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিদার ছিলেন। ২০০৩ সালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার কালা কানুন পাশ করে তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছিল, এখন নতুন আইন পাশ করে জটিলতা বাড়িয়েছে।” তাঁর কথায়, “যাঁরা কার্যত এক-কাপড়ে পালিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের কি নথি গুছিয়ে আনা সম্ভব?”

বিজেপির হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার বলেন, “আমি বা আমার দলের কেউ বলিনি, সবাইকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা আবেদন করবেন।” স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর এবং শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্য আলাদা কেন? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Citizen Amendment Act CAA Matua Community

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}