Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Anupam Hazra

অমিত-সফর শেষে বিতর্কিত পোস্ট, ‘অনুপম-কথায়’ নাজেহাল বিজেপি

অমিত বাংলা ছাড়ার পরে পরেই অনুপম ফেসবুকে জানিয়েছেন, বোলপুরে ভিড় বাড়াতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা-মন্ত্রীরাও ‘সাহায্য’ করেছেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:২৫
Share: Save:

অনুপম হাজরাকে নিয়ে ফের অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি। বোলপুরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ অনুপম বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে নানা কাণ্ড ঘটিয়ে অনেকবার দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরের পরেও তাঁর ‘ফর্ম’ অব্যাহত। অমিতের রোড-শোয়ের আগে ‘ব্যানার বিতর্ক’ শুরু হয়েছিল অনুপমের কারণেই। তার জেরে বিজেপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘অবমাননা’ করছে বলে অভিযোগের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল তৃণমূল।

অমিত বাংলা ছাড়ার পরে পরেই অনুপম ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন, বোলপুরে অমিতের রোড-শোয়ে ভিড় বাড়াতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা-মন্ত্রীরাও ‘সাহায্য’ করেছেন। ওই কর্মসূচিতে লোক পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, তৃণমূল ইতিমধ্যেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এই অভিযোগে যে, তারা ‘বহিরাগতদের’ দিয়ে অমিতের রোড-শো ভরিয়েছে। অনুপমের পোস্টে বিজেপি-র ‘অস্বস্তি’ বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজ্যনেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের মতে, এর ফলে তৃণমূল বলার সুযোগ পেয়ে যাবে যে, বিজেপি নিজেরা লোক আনতে পারেনি। যদিও অনুপমের ঘনিষ্ঠদের দাবি, এর ফলে বরং ‘অসুবিধা’ হবে তৃণমূলেরই। এতে বোঝা যাবে, তাদের দলের বিক্ষুব্ধ নেতা-মন্ত্রীদের ‘ক্ষোভ’ কোন জায়গায় পৌঁছেছে।

সোমবার সকালে ফেসবুকে অনুপম লেখেন, ‘গতকাল ছিল আমার কাছে একটি বিশেষ দিন। কারণ, দিনটা ছিল ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য অর্থাৎ অমিত শাহ জি’র সামনে বোলপুরে আমাদের শক্তি প্রদর্শনের দিন’। এর পরেই তিনি রোড-শো সফল করার জন্য বোলপুরের মানুষ, বিজেপি কর্মীদের অভিনন্দন জানান। সঙ্গে ধন্যবাদ জানান বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদেরও। অনুপম লিখেছেন, ‘বীরভূম জেলার সেই সমস্ত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদেরও বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। যাঁরা বিপুল পরিমাণে তাঁদের সমর্থকদের উপস্থিতি এই মেগা র‌্যালিতে নিশ্চিত করেন’।

তৃণমূল থেকে অনুপম বিজেপি-তে আসার পর শুরুতে রাজ্য বিজেপি কিছুটা হইচই করেছিল। পরে তারা সামলে নেয়। তবে লোকসভা নির্বাচনে অনুপম নিজের কেন্দ্র বোলপুরে প্রার্থী হতে চাইলেও তা তাঁকে দেওয়া হয়নি। রাজ্য নেতৃত্বের আপত্তিতেই অনুপমকে টিকিট দেওয়া হয় তুলনায় ‘কঠিন’ যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে। অনুপম জিতবেন, এমন আশা কেউই করেননি। তবে সকলকে খানিকটা আশ্চর্য করেই যাদবপুরে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় হন অনুপম। জিতে সাংসদ হন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। যাদবপুরে তুলনামূলক ভাবে ভাল ফল করার পর অনুপমের বিবিধ কার্যকলাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাতেও দলকে বিভিন্ন সময়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। রাজ্যে দলের কাজকর্মে যাতে অনুপম ‘ব্যাঘাত’ ঘটাতে না পারেন, তার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর নামে একাধিক বার নালিশও করা হয়। এমনকি, রাজ্য বিজেপি-তে তাঁকে কোনও দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। যদিও বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা সম্প্রতি অনুপমকে সর্বভারতীয় সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন রাজ্য বিজেপি-র অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল, অল্পদিন বিজেপি-তে থাকা অনুপমকে কেন এত বড় দায়িত্ব? এর জবাব মিলেছিল কিছুদিনের মধ্যেই। অনুপমকে বিহারের সহ-পর্যবেক্ষক ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ভুল করলে সুজাতা, আমি কি পাপী? স্ত্রী-র দলত্যাগে অশ্রুসজল সৌমিত্র

সাধারণ ভাবে বিজেপিতে যে নিয়ম চালু রয়েছে, তাতে এক ব্যক্তি দু’টি পদে থাকতে পারেন না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হলেও রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা সোমবার দাবি করেন, অনুপম যাতে বাংলায় কোনও পদের দাবি করতে না পারেন, সে জন্যই তাঁকে প্রথম কেন্দ্রীয় ও পরে বিহারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এতকিছুর পরও অনুপমের কারণে বিজেপি-কে অস্বস্তিতে পড়তেই হল। তা-ও আবার এক-আধবার নয়। অমিতের সফর ঘিরেই পর পর তিনবার। প্রথম, অমিতের সফরসূচি প্রকাশ্যে জানিয়ে দেওয়া। অমিত বঙ্গসফরে আসছেন বলা হলেও শুরুতে কবে, কোথায় তিনি যাবেন, তা রাজ্য বিজেপি-র পক্ষে জানানো হয়নি। কিন্তু অনুপম নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়ে দেন, বোলপুরে রোড-শো করবেন অমিত। সেই কারণেই তিনি আগেভাগে বোলপুরে চলে গিয়েছেন! এতে ‘অস্বস্তি’তে পড়ে রাজ্য বিজেপি। অনুপমের পোস্টের কারণে দলের তরফে সাড়ম্বরে অমিতের কর্মসূচি ঘোষণার গুরুত্বটাই হারিয়ে যায়!

আরও পড়ুন: সৌমিত্র-সুজাতা, দলত্যাগের জল গড়িয়ে গেল ডিভোর্স নোটিসে

এর পরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয় অমিতের সভা নিয়ে বোলপুর শহরে ব্যানার ঘিরে। রবিবার অমিতের কর্মসূচি ছিল বোলপুরে। তার আগেই বিজেপি-র ব্যানারের উপরদিকে অমিতের বড়মাপের ছবির নীচে নীচে ছিল রবীন্দ্রনাথের রেখাকৃতি। আর তার নীচে অনুপমের ছবি। ওই ব্যানার নিয়ে তৃণমূল তো বটেই, অভিযোগ তুলেছিলেন শান্তিনিকেতনের অনেক বাসিন্দাও। ঝাঁঝালো বিতর্কের মুখে পড়ে অনুপম সটান দাবি করে বসেন— ‘‘এটা বিজেপি-র কাজ নয়। বলেন বিতর্ক তৈরি করতে এটা তৃণমূলের কাজ।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যার পাল্টা কড়া মন্তব্য করেন। রবিবার অমিতের র‌্যালির দিন কলকাতায় রবীন্দ্রনাথকে ‘অবমাননা’র অভিযোগে বিক্ষোভসভা করে তৃণমূল। সেই ঘটনার জন্যও রাজ্য বিজেপি-র একাংশ অনুপমকেই দায়ী করেছেন। এক নেতার কথায়, ‘‘নিজের ছবি লাগিয়ে প্রচার পেতে অনুপমই ওই ব্যানার লাগিয়েছিলেন। পরে তা নিয়ে সাফাই দিলেও মুখ পুড়েছে দলের।’’

সোমবার বিকেলে করা অনুপম হাজরার ফেসবুক পোস্ট।

অমিত সভার আগে দু’বার ‘অস্বস্তি’ তৈরি করার পর অনুপম ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন অমিতের রোড-শোয়ে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থকদের অংশগ্রহণের কথা বলে। এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, ‘‘অনুপমের মাত্রাজ্ঞান কম। প্রচার পেতে কী করছেন আর কী করা উচিত, তার মধ্যে ফারাক করতে পারেন না।’’ এমন নিদর্শন অবশ্য অতীতেও অনেকবার দেখিয়েছেন অনুপম। তবে তিনি দমতে রাজি নন। সোমবার বিকেলেও দলকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলার মতো একটি পোস্ট করেছেন অনুপম। সেখানে তিনি লিখেছেন— ‘শু’ কে নিয়ে ‘সু’ কে দিলাম। কোনও নাম না লিখলেও অনুপমের এই ইশারায় সমঝদাররা বুঝতেই পারছেন অনুপম প্রথমে শুভেন্দু অধিকারী ও সোমবারই তৃণমূলে যোগ-দেওয়া সৌমিত্র খাঁয়ের স্ত্রী সুজাতার কথা বলতে চেয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah BJP Anupam Hazra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy