ফাইল চিত্র।
আসানসোল সংশোধনাগারে আরও অন্তত ১৪ দিন থাকতে হবে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সহগল হোসেনকে। জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাঁকে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়। সহগলের আইনজীবী নানা যুক্তি উপস্থাপন করে তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জি জানালেও শেষমেশ তা খারিজ করে দেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। অনুব্রতের দেহরক্ষীকে আরও ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সহগলকে আবার হাজির করাতে হবে আদালতে। অন্য দিকে, অনুব্রতের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দু’টি মোবাইল ফোন ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন বিচারক।
গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর সিবিআই এবং জেল হেফাজত মিলিয়ে গত ৯২ দিন বন্দি আবস্থায় রয়েছেন সহগল। একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রতও। তিনিও বর্তমানে আসানসোল সংশোধনাগারে রয়েছেন। তাঁর মক্কেল এত দিন ধরে হেফাজতে রয়েছেন, চার্জশিট দেওয়ার এত দিন পরেও কেন তদন্ত শেষ হয়নি, এই সব প্রশ্ন তুলে সহগলের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। তাঁর বক্তব্য, দিনের পর দিন এ ভাবে জেলে আটকে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া যায় না। এত দিনে এই মামলায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার দাবি করেন, সহগল প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁকে জামিন দেওয়া হলে বাইরে বেরিয়ে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন তিনি। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের আধিকারিকদের ধমকাতে পারেন। সিবিআইয়ের আরও দাবি, সম্প্রতি গরু পাচার মামলার তদন্তে আরও কিছু তথ্য উদ্ধার হয়েছে। সহগলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও উঠে এসেছে কিছু তথ্য। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্য আদালতে বেশ কিছু নথিপত্রও জমা দেন বৃহস্পতিবার।
আদালতে সহগলের আইনজীবীর আর্জি, তাঁর মক্কেলকে যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। সহগল তদন্তেও সহযোগিতা করবেন বলে জানান অনির্বাণ। যদিও সেই আর্জি শোনেননি বিচারক।
সহগলের মামলার পরেই অনুব্রতের মোবাইল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে কি না, সেই সংক্রান্ত বিষয় শুনানি শুরু হয় আদালতে। গত ১১ অগস্ট অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর কাছে যা কিছু বাজেয়াপ্ত করেছিল সিবিআই, তার তালিকা অর্থাৎ সিজার লিস্ট গত ১১ অগস্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়। এত দিন পর কেন সিজার লিস্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী অনির্বাণ। আদালতে তিনি দাবি করেন, তাঁর মক্কেল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বাজেয়াপ্ত হওয়া দু’টি মোবাইল ফোন সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে। তাই, এত দিনে ওই দু’টি মোবাইলের তথ্য বিকৃত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। এই যুক্তি দেখিয়ে অনির্বাণ আবেদন করেন, মোবাইল দু’টি পুনরায় আদালতে এনে বিচারক এবং সাইবার বিশেষজ্ঞের সামনে সিল করা হোক। পাশাপাশি, মোবাইল দু’টি যাতে নিরপেক্ষ ভাবে পরীক্ষা করা হয়, তারও আবেদন করেন তিনি।
আদালত সূত্রে খবর, অনুব্রতের আইনজীবীর আবেদন শুনে বিচারক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি একটা নিরপেক্ষ এজেন্সির নাম বলুন। সেখানে পাঠানো যায় কি না, ভেবে দেখব।’’ বিচারকের এই প্রশ্নের জবাবে অনির্বাণ বলেন, ‘‘সিআইডির ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হোক অনুব্রত মণ্ডলের দু’টি মোবাইল।’’ আইনজীবীর এই কথায় আদালতে এক প্রকার ‘হাস্যকর’ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর অনুব্রতের দু’টি মোবাইল শেষমেশ সিএফএসএলে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন বিচারক। তৃণমূল নেতার ফোনে কোনও রকম ভাবে তথ্য বিকৃতি হয়েছে কি না, সিএফএলএলকে সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও জমা দিতে বলেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy