Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নেতা টাকা চাইলে বেঁধে পেটান: অনুব্রত

অনুব্রত যখন এ কথা বলছেন, তখন কর্মিসভার মঞ্চে বসে আছেন জেলার দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রনাথ সিংহ। ছিলেন সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ ও মলয় মুখোপাধ্যায়, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী।

সভায় অনুব্রত। নিজস্ব চিত্র

সভায় অনুব্রত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

সরকারি বাড়ির জন্য দলের নেতারা টাকা চাইলে ‘বেঁধে পেটানোর’ নিদান দিলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার দুপুরে মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলের পক্ষ থেকে কর্মিসভা ও বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের নামে সরকারি যে বাড়ি এসেছে, সেই বাড়ি করার জন্য যদি কোনও পঞ্চায়েত সদস্য বা তৃণমূলের কোনও কর্মী টাকা চায়, তা হলে তাকে বেঁধে পেটান। আর এটা সকলের কাছে প্রচার করে দিন, কেউ টাকা চাইলে তাকে যেন বেঁধে পেটায়!’’

ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের আগে থেকেই ব্লকে ব্লকে সভা করে সরকারি প্রকল্পে টাকা না-চাওয়ার জন্য দলীয়-নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনুব্রত। লোকসভা ভোটের পরে পরেই ‘কাটমানি’র অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছে বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত। অভিযোগের তির ছিল মূলত শাসকদলের নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের দিকেই। তা নিয়ে জেলা নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বারবার। সেই কারণেই অনুব্রত এমন ফরমান দিলেন বলে মনে করছেন দলের কর্মীরা। তবে, প্রকাশ্য সভায় ‘বেঁধে পেটানো’র নিদান দেওয়া নিয়ে বিতর্কও ছড়িয়েছে। প্রকাশ্য সভা থেকে এ ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার জন্য কেউ বলতে পারেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

জেলা সিপিএমের সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘আইন হাতে তুলে নেওয়া তো তৃণমূলের কালচার! আর দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন অনুব্রত! ওই দলের বুথ স্তর থেকে উপর পর্যন্ত আকণ্ঠ দুর্নীতিতে যুক্ত। তাই এ সব কথা তাদের মুখে মানায় না। মানুষও তা বিশ্বাস করবেন না।’’

অনুব্রত যখন এ কথা বলছেন, তখন কর্মিসভার মঞ্চে বসে আছেন জেলার দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রনাথ সিংহ। ছিলেন সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ ও মলয় মুখোপাধ্যায়, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। এই সভাতেই আবারও আসন সংখ্যার প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছে অনুব্রতের মুখে। তাঁর দাবি, ‘‘কারও কাছে যদি কলম থাকে, তাহলে লিখে নিন, আমি আপনাদের আগাম জানিয়ে দিচ্ছি সামনের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৩০টি আসন পেয়ে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন।’’

জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এ দিন বিজয়া সম্মেলনে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয় প্রায় ৩০০টি পরিবার। মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতের রাজ্যধরপুর গ্রাম থেকে সমীর দাসের নেতৃত্বে ২০০ জন বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন এবং মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের বিজেপির যুব মোর্চার নেতা বিজয় ভাস্করের নেতৃত্বে বিজেপির ১০০ জন কর্মী জেলা সভাপতির হাত থেকে পতাকা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন।

এনআরসি বা নাগরিক পঞ্জি নিয়ে এ দিন বিজেপি-কে একহাত নিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আপনারা কোনও চিন্তা করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকতে থাকতে পশ্চিমবাংলায় এনআরসি চালু করতে দেব না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি সরকার অন্য রাজ্যে বড় বড় জেল বানিয়ে সেখানের নিরীহ আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের বিনা কারণে জেলে ঢোকাচ্ছে। যদি ক্ষমতা থাকে তা হলে এই রাজ্যে একটি জেল করে দেখাক। এখানে যে জেল বানাতে আসবে তার হাত ভেঙে দেব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Anubrata Mondal Bribe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE