বোলপুরের ‘ভোলে ব্যোম রাইস মিল’-এ মিলেছে অরূপ ও প্রবীরের ডাব্লিউবি ৫৪ইউ ৬৬৬৬ নম্বরের ফোর্ড এন্ডেভার।
ঠিকাদারির টেন্ডার পেতে ৪৬ লক্ষ টাকার গাড়ি দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলকে! শুক্রবার ভোলে ব্যোম চালকলে যে পাঁচটি দামি গাড়ি উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে একটি গাড়ির মালিক প্রবীর মণ্ডল। তিনিই চাঞ্চল্যকর ওই দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, শুধু লক্ষাধিক টাকার গাড়িই নয়, নগদ পাঁচ কোটি টাকাও দিয়েছিলেন তিনি। গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতের দেহরক্ষী সহগল হোসেনের সঙ্গেও তিনি ওই টেন্ডারের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিলেন। অনুব্রতের বাড়ি গিয়েও টাকা দিয়ে এসেছিলেন বলে দাবি। পাশাপাশি প্রবীরের অভিযোগ, ওই টেন্ডার না-পাওয়ার পর যখন তিনি গাড়ি ও টাকা চান, তখন তাঁর বিরুদ্ধে গাঁজার মামলা রুজু করার হুমকি দেওয়া হয়। প্রবীরের দাবি, তাঁকে সহগলের ফোন থেকে ওই হুমকি দিয়েছিলেন এক জন। তবে তিনি অনুব্রতই কি না, তা স্পষ্ট করেননি প্রবীর।
শুক্রবার সকালে দীর্ঘ টালবাহানার পর বোলপুরের ‘ভোলে ব্যোম রাইস মিল’-এ ঢুকতে সক্ষম হন সিবিআই আধিকারিকেরা। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ওই চালকলটি গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতের স্ত্রী ও কন্যার নামে রয়েছে। সেই চালকলেই মিলল দামি দামি গাড়ি। তার মধ্যে ডাব্লিউবি ৫৪ইউ ৬৬৬৬ নম্বরের ফোর্ড এন্ডেভার নামে একটি গাড়িও রয়েছে। পরিবহণ দফতরের নথি অনুযায়ী, ওই গাড়ির মালিক প্রবীর। সেই তিনিই শুক্রবার বলেন, ‘‘ঠিকাদারির টেন্ডার পেতে ৪৬ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম বিশ্বকর্মা পুজোর সময়। নগদ পাঁচ কোটি টাকাও দেওয়া হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। সেই টেন্ডার তো পেলামই না, উল্টে টাকা আর গাড়়ি ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়। সর্ব ক্ষণ গাঁজার কেসের ভয় দেখাত।’’
সিউড়ির বাসিন্দা প্রবীর দীর্ঘ দিন ধরেই গাড়ির ব্যবসা করেন। ওই ব্যবসায় তাঁর সহযোগী অরূপ ভট্টাচার্য। প্রবীর জানান, মাহীন্দ্রা গাড়ি সংস্থার ডিলারশিপ রয়েছে তাঁদের। গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি কয়েক বছর আগে তাঁরা ময়ূরাক্ষী নদীর উপর তিলপাড়া বাঁধ সংস্কারের সরকারি টেন্ডারের জন্য আবেদন করেন। প্রবীর ও অরূপ দু’জনেই দাবি করেছেন, ওই টেন্ডার পেতেই অনুব্রতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। অরূপ বলেন, ‘‘জেলাশাসকের দফতরে দরখাস্ত করেছিলাম। ওখান থেকে বলা হয়েছিল, সেচ দফতরের অনুমোদন লাগবে। সেই জন্যই অনুব্রত মণ্ডলের কাছে গিয়েছিলাম আমরা। ১০ কোটি টাকার কথা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়িটা (চালকল থেকে উদ্ধার হওয়া ফোর্ড এন্ডেভার) জোর করে নেওয়া হয়েছিল।’’
এত ‘চেষ্টা’র পরেও ওই ব্যারেজ সংস্কারের টেন্ডার না পাওয়া নিয়ে অরূপের ব্যাখ্যা, ‘‘বিধানসভা ভোটের পরেও সহগলকে ফোন করেছিলাম টেন্ডারের ব্যাপারে। অনুব্রতের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছিলাম। দাদাকে (অনুব্রতকে) দেড় কোটি টাকাও দিয়েছিলাম। ধাপে ধাপে, ছ’সাত বারে। কিন্তু ১০ কোটি টাকা দিতে পারিনি বলে আমাদের টেন্ডার পেতে দেয়নি। বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’
অরূপের কথার সূত্র ধরে প্রবীর বলেন, ‘‘আমাদের শেষ করে দিয়েছে। দুর্বিষহ করে দিয়েছে বেঁচে থাকা। টাকা আর গাড়ি ফেরত চাইলেই বলত, গাড়ি নিবি না গাঁজা কেস খাবি? আমাদের ব্যবসা এখন পুরোপুরি বন্ধ। তোর গাড়ি আমাদের কাছে আছে। গাঁজা ভরে কেস দিতে সময় লাগবে না।’’ কে বা কারা হুমকি দিয়েছিলেন? প্রবীরের কথায়, ‘‘সহগলের ফোন থেকেই কথা হয়েছিল।’’
পুরনো এই অভিযোগ নিয়ে অরূপ শুক্রবার বলেন, ‘‘এত দিন থানা কথাই শুনত না। উনি তো বীরভূমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওঁর নামেই আতঙ্ক। এখন পুলিশের কাছে যাওয়া যায় কি না, দেখি। সিবিআই ডাকলে অবশ্যই যাব। তদন্তে সহযোগিতা করতে বললে করব।’’
গত ১১ অগস্ট সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত। তার আগেই গ্রেফতার হয়েছেন সহগল। ফলে অরূপ-প্রবীরের এই অভিযোগ নিয়ে তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy