ছবি: পিটিআই।
পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়নি ঠিকই। তবে সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অশান্তির দাপট অনেকটাই কমেছে। তবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় এ দিনও কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর মিলেছে। ৩৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সৈয়দ জামিরুল হাসান নামে এক ব্যবসায়ীকে এ দিন বেনিয়াপুকুরে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, শুক্রবার পার্ক সার্কাসে বিক্ষোভের সময় জামিরুল পুলিশের কাজে বাধা দেন। বেআইনি জমায়েত, সরকারি কর্মীর কাজে বাধাদান, রাস্তা আটকানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি হায়দরাবাদ-ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের সংগঠক। রাজ্য প্রশাসনের খবর, বিভিন্ন জ়োনের আইজি এবং রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি-দের অশান্ত এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি যাচাই করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব তাঁদের নিতে হবে বলে নবান্নের নির্দেশ।
অভিযোগ, এ দিন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানির সামনেই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে তৃণমূলের একটি মিছিল থেকে কয়েকটি যাত্রিবাহী বাসে ঢিল ছোড়া হয়। তাতে কয়েক জন জখম হন। তবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘পথসভার পরেই আমি ওখান থেকে বেরিয়ে যাই। তৃণমূলের বদনাম করতেই বিরোধীরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’ এসপি সচিন মক্কার জানান, তদন্ত হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
আরও পড়ুন: অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা কেন বাদ, সরব মমতা
ক্ষিপ্ত জনতা এ দিন সামসি স্টেশনে ইট ছুড়ছিল। পুলিশ লাঠি চালিয়ে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাওড়া-আমতা রোডে অবরোধ ঘিরে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি, লরি ও বাসে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তবে এ দিন ইটপাটকেল ছোড়ার নিন্দা করেছেন মিছিলে যোগ দেওয়া বাঁকড়ায় বস্ত্র ব্যবসায় যুক্ত লোকজনও।
উত্তর ২৪ পরগনার ৩৪ এবং ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে এ দিনও অবরোধ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের বকুলতলায় পথ আটকে বিক্ষোভ দেখায় কয়েকটি সংগঠন। গড়বেতা ও গোয়ালতোড়ে পথে নামে তৃণমূল। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক আধ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল। পাঁশকুড়ায় সম্প্রীতি মিছিল করে তৃণমূল। বিকেলে চন্দ্রকোনা রোডে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে মিছিল করে বিজেপি।
মুর্শিদাবাদ এ দিন তুলনায় শান্ত ছিল। বড় ধরনের গোলমালের খবর মেলেনি। জেলা প্রশাসন ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের লাগাতার প্রচারেই হিংসা প্রশমিত হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানান। এ দিনও বিভিন্ন জেলার ইমামেরা শান্তির জন্য প্রচার করেছেন। এনআরসি-আতঙ্কে পরিচয়ের নথিপত্র খোঁজাখুঁজির মধ্যে সবুরা বিবি (৪৬) নামে রেজিনগর এলাকার এক মহিলা এ দিন সকালে মারা গিয়েছেন। তাঁর দেওরপো আলি মহম্মদ বলেন, ‘‘চাচি মুষড়ে পড়েছিলেন। তার মধ্যেই দলিল খোঁজাখুঁজি চলছিল। এ দিন সকালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ওঁর মৃত্যু হয়।’’
নলহাটি-আজিমগঞ্জ রুটে ট্রেন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আজিমগঞ্জ এলাকায় ভাল আনাজ হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আনাজ বাইরে পাঠাতে পারছেন না চাষিরা। ৪০ টাকার বেগুন বিকিয়েছে ১৫ টাকা কেজি দরে।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, রোজ ১১টি বাস সিউড়ি থেকে উত্তরবঙ্গে যায়। কিন্তু এ দিন সকালে প্রথমে দু’টি বাস গেলেও বাকি ন’টি মুর্শিদাবাদের ওমরপুর থেকে ফিরে আসে। ফলে ভুগতে হয় যাত্রীদের। দেরিতে চলেছে এসবিএসটিসি-র বাসও।
হাওড়া, দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় হয়রানির মুখে পড়েছেন বহু মানুষ। প্রথম বর্ষের পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড তুলতে পারছেন না ওই এলাকার পরীক্ষার্থীরা। বিঘ্নিত হচ্ছে ডাকঘরের পরিষেবাও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়েও ফিরে আসতে হচ্ছে অনেককে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকারি নির্দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজেরও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy