কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে ফের এক বাঙালির মৃত্যুর খবর মিলল। রবিবার উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে গিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটের বাসিন্দা গায়ত্রী দে-র (৫৮) দেহ শনাক্ত করেন তাঁর ছেলে প্রতাপ। আগে কুম্ভে রাজ্যের আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল। এখনও অনেকে নিখোঁজ। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই নিখোঁজ মহিলা এ দিন সুস্থ ভাবে ঘরে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন রামপুরহাটের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গায়ত্রী। খুড়তুতো বোন প্রমীলা দাস-সহ কয়েক জনের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। বাকিরা ফিরলেও, গায়ত্রী ফেরেননি। প্রমীলা বলেন, “দিদির সঙ্গেই স্নানের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ হুড়োহুড়ি বাধে, ব্যারিকেড ভেঙে যায়। দিদি আলাদা হয়ে যায়। অনেক খুঁজেও পাইনি।”
বৃহস্পতিবার রামপুরহাট থানায় মায়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান প্রতাপ। শুক্রবার বিকেলে এলাকার এক বাসিন্দার কাছে কুম্ভমেলায় মৃতদের একটি ছবি দেখে প্রতাপ তাঁর মাকে শনাক্ত করতে পারার দাবি করেন। প্রশাসন ও পুরসভার সহযোগিতায় প্রতাপ ও আরও চার জন শনিবার প্রয়াগরাজ রওনা হন। রবিবার প্রতাপ ফোনে জানান, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ মোতীলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন। তাঁর কথায়, “মায়ের মুখ, শাড়ি ও সোয়েটার দেখে দেহ শনাক্ত করি। তার পরে ময়না তদন্তের জন্য বলা হলেও, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ওখানে তা করাতে চায়নি।”
কুম্ভে মৃত কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা বাসন্তী পোদ্দারের পরিজনেরাও অভিযোগ তুলেছিলেন, কোনও ডেথ সার্টিফিকেট না দিয়ে চিরকুটে ‘দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হল’ লিখে পাঠিয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঊর্মিলা ভুঁইয়া (৭৫) ও পশ্চিম বর্ধমানের বিনোদ রুইদাসেরও (৪২) মৃত্যুর খবর মিলেছিল। এখনও রাজ্যের অনেকে নিখোঁজ বলে জানা যাচ্ছে। খবর পেতে কন্ট্রোল রুম খুলেছে রাজ্য প্রশাসন।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রতাপ জানান, মায়ের দেহ নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দুই প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে আসছেন। তাঁরা রামপুরহাট থানার পুলিশের হাতে দেহ হস্তান্তর করবেন। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে দেহের ময়না তদন্ত হবে বলে জেলাশাসক বিধান রায় জানান। তিনি বলেন, “পরিবারটি যাতে ক্ষতিপূরণ পায়, সে জন্য প্রশাসনিক দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।”
নিখোঁজ পরিজন ফিরে আসায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’টি পরিবার। ক্যানিংয়ের জয়দেবপল্লির সবিতা দেবনাথ ও গোসাবার দয়াপুরের গীতা মণ্ডলের খোঁজ মিলছিল না দুর্ঘটনার পর থেকে। দু’জনেই শনিবার বাড়ি ফেরেন। পরিবার সূত্রের খবর, যাদবপুরের বাসিন্দা গার্গী ওঝা প্রয়াগরাজের ঝুন্সি স্টেশনে গীতাকে কাঁদতে দেখেন। তিনিই তাঁকে নিয়ে এসেছেন। গীতার ছেলে গৌরাঙ্গের অভিযোগ, “দু’দিন ধরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি।” সবিতা জানান, তিনি মেলায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ তাঁকে হাওড়ার ট্রেনে তুলে দেয়।
কুম্ভ মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছেন কোচবিহারের মাথাভাঙার ভবের হাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা তুলসী দাস। গত সোমবার ছেলে বিপ্লব দাসের সঙ্গে কুম্ভ মেলায় গিয়েছিলেন তিনি। মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বারনি স্টেশনে বিপ্লব নেমে দেখেন, সঙ্গে তাঁর মা নেই। অনেক খুঁজেও সন্ধান না পেয়ে শনিবার বাড়ি ফেরেন বিপ্লব। পরিবারের সদস্যেরা মাথাভাঙা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)