Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
RG Kar Medical College and Hospital Incident

আঙুল ভাঙার ‘হুমকি’র পরে হাত মুচড়ে দেওয়ার নিদান! আন্দোলনকারীদের তৃণমূল সাংসদের হুঁশিয়ারি

আরজি কর নিয়ে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনকারীদের পথে নামার ঘটনার নেপথ্যে পরোক্ষে সিপিএমকে দায়ী করে অরূপ বলেন, ‘‘যে দলের একটিও বিধায়ক নেই, সাংসদ নেই, জেলা পরিষদের সদস্য নেই, তারা এখন উঠেপড়ে লেগেছে।’’

বাঁকুড়ায় বক্তৃতায় বিতর্কিত মন্তব্য তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর।

বাঁকুড়ায় বক্তৃতায় বিতর্কিত মন্তব্য তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ১৩:২৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আঙুল তুললে সেই আঙুল ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। আর এ বার বিরোধীদের হাতটাই মুচড়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী। রবিবার আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের একটি প্রতিবাদ মিছিলে অরূপ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা হলে হাত মুচড়ে দেবে তৃণমূল কর্মীরা।’’ একই সঙ্গে আরজি কর আন্দোলনে পুলিশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্যও করতে শোনা গিয়েছে অরূপকে। অন্য দিকে, সোমবার একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসকেও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। যা দেখে বিরোধীরা বলছেন, এ সবই আসলে ভয় পাওয়া তৃণমূলের আস্ফালন।

বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ তথা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপের নেতৃত্বে রবিবার আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামে তৃণমূল। হিন্দু হাইস্কুল থেকে মিছিল করে মাচানতলা পর্যন্ত যান তৃণমূল কর্মীরা। তার পরে আকাশ মুক্ত মঞ্চে তৃণমূলের নেতা এবং কর্মীরা অবস্থান বিক্ষোভ করেন। সেই মঞ্চেই বক্তৃতা করার সময় ওই মন্তব্য করেন অরূপ। আরজি কর নিয়ে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনকারীদের পথে নামার ঘটনার নেপথ্যে পরোক্ষে সিপিএমকে দায়ী করে অরূপ বলেন, ‘‘যে দলের একটিও বিধায়ক নেই, সাংসদ নেই, জেলা পরিষদের সদস্য নেই, তারা এখন উঠেপড়ে লেগেছে। আন্দোলনের নামে নাইট শো-র সিনেমা দেখানোর মতো করে বাড়ির মা-বোনেদের প্রতি দিন রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে সিপিএম। এত দিন সিপিএম কোথায় ছিল?’’ এ প্রসঙ্গে মণিপুরে নারী নির্যাতনের কথাও টেনে এনে অরূপ বলেন, ‘‘তখন সিপিএম কেন রাস্তায় নামেনি? নির্বাচনের সময় এই সিপিএম তাদের কাস্তে-হাতুড়ি বেচে দেয় বিজেপির কাছে। আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করছে! তাঁর গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা করছে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারও দয়ায় ক্ষমতায় আসেননি। তাঁর গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা হলে তৃণমূল কর্মীরা হাত মুচড়ে দেবে।’’ এ দিকে, সোমবার ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকনও বলছেন, ‘‘আমরা জানি ওরা অশান্তি করতে চাইছে। তাই চুপ করে আছি। আমরা অশান্তি করলে ওরা থাকবে কোথায়?’’

রবিবারই রাজ্যের মন্ত্রী কিছুটা একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। উদয়ন বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনায় যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলে তাঁর পদত্যাগ চাইছেন, সেই আঙুলগুলোকে চিহ্নিত করে ভেঙে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। না হলে এরা বাংলাকে বাংলাদেশ তৈরি করবার চেষ্টা করবে।’’ মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরেই রাজ্যের শাসকদলের এক সাংসদের ওই হুঁশিয়ারিতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অবশ্য অরূপ শুধু হাত মুচড়ে দেওয়ার নিদান দিয়েই থামেননি। রবিবারের বক্তৃতায় অরূপকে বলতে শোনা যায়, ‘‘খবর আসছে, কিছু কিছু থানার পুলিশ সাপের মুখে চুমু ও ব্যঙের মুখে চুমু দিয়ে চলছেন। সিপিএম-বিজেপিকে মিটিং মিছিল করার জন্য ঢালাও অনুমতিও দিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের তৃণমূলকর্মীরা সব নজরে রেখেছে। আপনারা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করুন। মনে রাখবেন আপনাদের রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করতে হয়।’’ আবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদেরও কটাক্ষ করে অরূপ বলেন, ‘‘শোনা যাচ্ছে কর্মবিরতির নাম করে কেউ বেড়াতে চলে যাচ্ছেন, কেউ আবার বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা চিকিৎসা করতে এসেছেন, আপনারা মানুষের চিকিৎসা শুরু করুন।’’

অরূপের ওই মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়েছে রাজনৈতিক মহল। এ প্রসঙ্গে সিপিএম এর রাজ্য কমিটির সদস্য অভয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল সাংসদের কাছ থেকে এর বেশি আর কিছু আশা করা যায় না। আরজি কর নিয়ে সাধারণ মানুষ যে ভাবে আন্দোলনে নেমেছে, তাতে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে থাকা তৃণমূল বেকায়দায় পড়ে এখন সকলকেই শত্রু মনে করছে। তাই এই ধরনের এই মন্তব্য করে বসছেন সাংসদ-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Medical College and Hospital Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE