— ছবি সংগৃহীত
শেষ মিলেছিল গত জানুয়ারির বরাদ্দ। তার পর পাঁচ মাস হতে চলল রাজ্যের অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ির উপভোক্তাদের খাদ্যসামগ্রী বিলি বন্ধ রয়েছে। মাসে মাসে স্কুলগুলিতে অভিভাবকদের ডেকে মিড ডে মিলের সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল মা ও শিশুরা করোনাকালে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত।
অঙ্গনওয়াড়ি থেকে অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মা এবং ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সি শিশুদের খাবার দেওয়া হয়। জানুয়ারি পর্যন্ত মাসে মাথাপিছু ২ কেজি চাল, ২ কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম করে মুসুর ডাল মিলেছে। এখন সব বন্ধ। ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল অঙ্গনওয়াড়ি আশাকর্মী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর কনভেনার রুমু বক্সী, ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতি’-র তরফে চন্দনা বাউড়িরা মানছেন, ‘‘খাদ্যদ্রব্য বিলি বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়ছে শিশুরা।’’
মালদহের হবিবপুরের প্রবোধ মুন্ডা দিনমজুর। তাঁর শিশুপুত্র ‘চরম অপুষ্টি’র শিকার বলে সরকারি খাতায় চিহ্নিত। স্ত্রী-সহ তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। প্রবোধ বলছেন, “গত বছর লকডাউনে কাজ হারিয়েছিলাম। এখনও তেমন কাজ পাইনি। রেশনের চালই ভরসা।’’ জলপাইগুড়ি শহরের তেলট্যাঙ্কি এলাকায় অন্তত তিন জন অন্তঃসত্ত্বা অঙ্গনওয়াড়ির চাল পেতেন। এক মহিলার কথায়, “করোনা বেড়ে যাওয়ায় তিন মাস হল লোকের বাড়ির ছাড়িয়ে দিয়েছে। আধপেটা খেয়ে থাকছি।” বাঁকুড়ার ইন্দাসের সোমসারের আশালতা কুণ্ডু বলছেন, ‘‘ছেলে দিনমজুর। রোজ কাজ জোটে না। মা মরা দুই নাতিকে ভাল পুষ্টিকর খাবার দিতে পারছি কই?’’ ঝাড়গ্রামের লালগড় ব্লকের রাউতাড়া গ্রামের প্রসূতি সালমা মুর্মু, গঙ্গামণি হেমব্রমরা বলছেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ির খাবারে অনেকটা সুবিধা হত। অনেক মাস তা বন্ধ আছে।’’
কিন্তু কেন? রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানাচ্ছেন, কেন্দ্র বরাদ্দ চাল না দেওয়াতেই সমস্যা হয়েছে। শশীর কথায়, ‘‘ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল— এই তিন মাস রাজ্য চাল চাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের বরাদ্দ আসেনি। ইতিমধ্যে উপভোক্তার সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না বাড়ায় গত অর্থ বর্ষের ২৯ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন চালের ঘাটতি পূরণ করা যায়নি। কেন্দ্রকে দু’বার জানিয়েও সুরাহা হয়নি।’’ তবে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের বরাদ্দ এসেছে বলে জানাচ্ছেন মন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘৫৩ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন চাল চাওয়া হয়েছিল। পাওয়া গিয়েছে ৩১ হাজার ১৫৭ মেট্রিক টন। ফলে, ঘাটতি থাকছেই।’’ নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের একটি সূত্রের পাল্টা প্রশ্ন, এই তিন মাস রাজ্য কেন হাত গুটিয়ে বসেছিল! জানা যাচ্ছে, মাঝে ভোট পড়ে যাওয়াতেই দেরি হয়। যদিও শশী বলেন, ‘‘ভোটের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না ঠিকই। তবে আধিকারিকেরা ক্রমাগত কেন্দ্রের সাথে চিঠিচাপাটি করেছেন।’’
আপাতত ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বকেয়া খাদ্যসামগ্রী জুনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও রাজ্যের নির্দেশ জেলাগুলিতে পৌঁছয়নি। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, ‘‘শনিবার রাজ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে জানানো হয়েছে শীঘ্রই অঙ্গনওয়াড়ির উপভোক্তাদের খাদ্যসামগ্রী বিলির নির্দেশ দেওয়া হবে।’’
কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে খাদ্যসামগ্রী বিলি হচ্ছে। যেমন অঙ্গনওয়াড়ির বরাদ্দ চাল এসেছে দার্জিলিং জেলায়। তবে একমাত্র নকশালবাড়ি ব্লকে গত জানুয়ারিতে বিলির পরে উদ্বৃত্ত ডাল এবং নতুন পাওয়া চাল দেওয়া হচ্ছে। বীরভূমের অনেক কর্মী জানাচ্ছেন, বহু অঙ্গনওয়াড়িতে মজুত চাল-ডালে পোকা লেগেছে। বহু কেন্দ্রের ভবন বেহাল। বৃষ্টির জল ঢুকেও মজুত খাবার নষ্ট হচ্ছে। আর সর্ষের তেল বিলি না হওয়ায় অধিকাংশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে।
প্রতি জেলায় কয়েক লক্ষ করে অঙ্গনওয়াড়ির উপভোক্তা রয়েছে। বেশিরভাগই দরিদ্র। করোনা পরিস্থিতিতে যখন রুটিরুজিতে টান পড়েছে, তখন অঙ্গনওয়াড়ির খাদ্যসামগ্রী বিলি বন্ধ থাকায় সঙ্কটে পড়েছেন সেই প্রান্তিক মানুষজন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের ‘ইয়াস’ বিধ্বস্ত এলাকার ঘরহারাদেরও রেশনের বরাদ্দ ও ত্রাণ সামগ্রীই এখন ভরসা। আবার স্কুলগুলিতে মিড ডে মিলের খাবার মিলছে। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়িতে না মেলায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নদিয়ার করিমপুর এলাকার বাজিতপুর গ্রামের তিন বছরের সাথী হালদারের মা সীমা হালদার বলেন, ‘‘এ আবার কী রকম নিয়ম যে, বড়রা খাবার পায় আর ছোটরা বঞ্চিত হয়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy