বাঁকুড়া, মালদহ, পূর্ব মেদিনীপুরের পর এ বার কোচবিহার। দলের বিধি লঙ্ঘন করে সম্মেলন থেকে সম্পাদক নির্বাচন করল সিপিএম। আরও একটি জেলায় নিয়মভঙ্গকে ‘ব্যতিক্রম’ আখ্যা দিল সিপিএম।
সিপিএম নিয়ম করেছে, জেলা কমিটিতে ৭০ বছর বয়সের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না। গত দু’মেয়াদের সম্পাদক অনন্ত রায় কয়েক মাস আগেই ৭০ পেরিয়েছেন। কিন্তু ‘বিশেষ কারণে’ তাঁকেই ফের সম্পাদক করল দল। সোমবার থেকে কোচবিহার শহরে শুরু হয়েছিল সিপিএমের জেলা সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ক্ষেত্রে উচ্চতর কমিটির অনুমোদন লাগে। সেটা নিয়েছে কোচবিহার জেলা কমিটি।’’
সিপিএম সূত্রে খবর, নতুন সম্পাদক হিসাবে যিনি দৌড়ে ছিলেন, সেই মহানন্দ সাহার নামে আপত্তি ছিল অনন্ত এবং আর এক রাজ্য কমিটির সদস্য তমসের আলির। আবার রাজ্য সিপিএম চেয়েছিল, কোচবিহারের মতো জেলায় রাজবংশী অংশের কেউ সম্পাদক হোন। কিন্তু নতুন কোনও রাজবংশী ‘মুখ’ পাওয়া যায়নি। আবার অনন্ত নিজে রাজবংশী অংশের প্রতিনিধি। সব দিক রক্ষা করতে অনন্তকেই জেলা সম্পাদক করার বিষয়টি স্থির করা হয়। যার ফলে শিকেয় উঠেছে দলের বয়সবিধি।
আরও পড়ুন:
সিপিএমের দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, এক ব্যক্তি একটি স্তরে তিন মেয়াদের বেশি সম্পাদক থাকতে পারেন না। কিন্তু এর আগে দেখা গিয়েছে মালদহে অম্বর মিত্র চতুর্থ বারের জন্য সম্পাদক হয়েছেন। আবার গত রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন নিরঞ্জন সিহি। তিনিও তিন বারের মেয়াদ পূর্ণ করে চতুর্থ বারের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, মালদহ এবং পূর্ব মেদিনীপুর— দুই জেলার ক্ষেত্রেই বিকল্প নাম নিয়ে দলের মধ্যে একাধিক মত তৈরি হয়েছিল। ‘অশান্তি’ এড়াতেই ‘ব্যতিক্রমী’ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল সিপিএমকে।
বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক পদে জনজাতি অংশের মহিলা দেবলীনা হেমব্রমকে দায়িত্ব দিয়েছে সিপিএম। তার ফলে দেশে বঙ্গ সিপিএম ইতিহাস তৈরি করলেও দলীয় নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক ব্যক্তি কেন্দ্র, রাজ্য এবং জেলাস্তরে একসঙ্গে থাকতে পারেন না। দেবলীনা কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। তাঁকেই জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে দল। উল্লেখ্য, এই ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে দুই ২৪ পরগনা এবং নদিয়াতেও ঘটেছিল। সব ক্ষেত্রেই পলিটব্যুরো বিশেষ অনুমতি দিয়েছিল। দেবলীনার ক্ষেত্রেও তা-ই দেবে। তবে বদল অনিবার্য ছিল যে জেলাগুলিতে, তার মধ্যে অনেকগুলিতেই নিয়মে ‘ব্যতিক্রম’ করল সিপিএম।