Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Bardhaman

আমাদের ‘বছরের বেস্ট’ সুজিত চট্টোপাধ্যায় ভূষিত পদ্মশ্রী সম্মানে, আপ্ল‌ুত ‘সদাই ফকির’

আনন্দবাজার ডিজিটাল সুজিতবাবুকে পাঁচ জন ‘বছরের বেস্ট’-এর এক জন হিসাবে বেছে নিয়েছিল।

রামনগরের বাড়িতে সুজিত চট্টেপাধ্যায়।

রামনগরের বাড়িতে সুজিত চট্টেপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ২২:৫৫
Share: Save:

২০২১-এর পদ্মশ্রী পেলেন বর্ধমানের সুজিত চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাঁকে ওই সম্মান জানানো হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালের বিবেচনায় ‘বছরের বেস্ট’ হয়েছেন। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে আপ্লুত ‘মাস্টারমশাই’ বলেন, ‘‘প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি! গ্রামাঞ্চলের এক জন মাস্টারমশাইয়ের কথা ওঁরা ভেবেছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’’

বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগরে দীর্ঘ দিন ধরে ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ চালান সুজিত। প্রায় ৩০০ পড়ুয়া পড়ে সেই পাঠশালায়। পড়ুয়া পিছু ‘গুরুদক্ষিণা’ বছরে ২ টাকা। সঙ্গে চারটি ছোট চকোলেট। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত ৭৮ বছরের ‘মাস্টারমশাই’ সোমবার রাতে বলেন, ‘‘আমি সামান্য এক জন মাস্টারমশাই। গরিব ঘরের বাচ্চাদের পড়াই। ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি। আমি খুব খুশি।’’

সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ দিল্লির একটি নম্বর থেকে সুজিতের ভাইপো উৎসব চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে ফোন আসে। উৎসব বলেন, ‘‘ফোন করে জেঠুকে চাওয়া হয়। আমি জেঠুকে দিই ফোনটা।’’ এর পরেরটা যোগ করলেন ‘মাস্টারমশাই’। বললেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি সুজিত চট্টোপাধ্যায়? এ বারের পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় আপনি রয়েছেন। আজ তালিকা প্রকাশিত হবে। অনুষ্ঠান দিল্লিতে আগামী মার্চের শেষের দিকে। প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি। মেয়েকে বললাম। ও বলল, কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। তার পর আপনাদের ফোন। ভীষণ খুশি হয়েছি।’’

রামনগর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সুজিত। প্রায় ৪০ বছর স্কুলে পড়ানোর পর অবসর নেন। গত ১৮ বছর ধরে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের গরিব-দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের প্রাইভেট টিউশন দেন। নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের পড়ান। তাঁর পাঠশালার ৮০ শতাংশই ছাত্রী।

পড়ুয়াদের যাদের মোবাইল আছে, লকডাউনের সময়ে তাদের পড়িয়েছেন মাস্টারমশাই। লকডাউনে কর্মহীন আড়াইশো পরিবারের হাতে চার দফায় তুলে দিয়েছেন ৭৫ হাজার টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। গ্রামের ৭ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পাশেও আছেন সুজিত। বছরে এক বার তাদের হাতে তুলে দেন ৫ হাজার করে টাকা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কর্মকাণ্ডের সবটাই চলে ‘মাস্টারমশাই’য়ের পেনশনের টাকায়।

সুজিতদের যৌথ পরিবার। সংসারে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা রয়েছেন। সুজিতের একমাত্র ছেলে কালনায় এসডিও অফিসে কাজ করেন। সুজিতের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল ধানবাদে। জামাই মারা গিয়েছেন। নাতি-নাতনিদের পড়াশোনাও সুজিতের দায়িত্ব। তাঁর স্ত্রী শয্যাশায়ী। তাঁরও চিকিৎসা চলছে। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পাশাপাশি খুশি গোটা এলাকা। উৎসবের কথায়, ‘‘খবর পাওয়ার পর গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে আমাদের বাড়িতে। আমরা সকলে জেঠুর এই সম্মানে গর্বিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Padmashri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy