Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনা সন্দেহে বিতাড়িত বৃদ্ধ

এ দিন সকালে শোভাবাজারের ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বাসিন্দার কাছ থেকে ফোন পেয়ে বৃদ্ধের কথা জানতে পারেন সিসিএনের সদস্যেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৮
Share: Save:

দু’দিনের জ্বরের পাশাপাশি কাশি ছিল সত্তর বছরের বৃদ্ধের। পরিজনেরা বহুদিন আগেই ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। রবীন্দ্রসরণি এলাকায় একটি মন্দিরে ঘুমোতেন তিনি। কিন্তু কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় মন্দিরের আশ্রয়ও হাতছাড়া হয়। দু’দিন ধরে অসুস্থ শরীরে শোভাবাজারের ফুটপাতে পড়েছিলেন বৃদ্ধ। রবিবার এক স্থানীয় বাসিন্দার কাছ থেকে খবর পেয়ে করোনা সন্দেহভাজন বৃদ্ধকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করল কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক (সিসিএন)।

রোগীকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার যে প্রশ্ন নেই, গত সাড়ে চার মাস টানা সে কথা বলে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু শোনে কে? তাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কখনও রোগীর মৃত্যু হয়, তো কখনও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে রোগীকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। শোভাবাজারে বৃদ্ধের ক্ষেত্রেও অমানবিকতার ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কিন্তু তাঁদেরই মধ্যে এক জনের একটি ফোন তফাত গড়ে দিল। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা যাতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন না ভাবেন, সে জন্য টেলিফোনে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সংক্রমণ হলে কী করণীয়, তা নিয়ে পরামর্শ দেয় সিসিএন। এ দিন সকালে শোভাবাজারের ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বাসিন্দার কাছ থেকে ফোন পেয়ে বৃদ্ধের কথা জানতে পারেন সিসিএনের সদস্যেরা।

সিসিএন সূত্রের খবর, সেখানকার কন্ট্রোল রুমের নম্বরে ফোন করে ওই ব্যক্তি দাবি করেন, দীর্ঘদিন আগে ওই বৃদ্ধকে তাঁর পরিজনেরা বাড়ি থেকে বের করে দেন। এর পর স্থানীয় এক ডেকরেটরের দোকানে কাজ করতেন তিনি। মালিকই মন্দিরে বৃদ্ধের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শুক্রবার জ্বর, কাশি-সহ বয়স্ক মানুষটির করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাঁকে মন্দির ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। এই পরিস্থিতিতে শোভাবাজারের ফুটপাতের ধারে আশ্রয় নেন বৃদ্ধ। গত দু’দিন শরীরে আরও দুর্বল হয়ে এদিন একেবারে কাহিল হয়ে পড়েন তিনি। সিসিএন সূত্রের খবর, অসুস্থ মানুষটির ছবি তুলতে যখন বাসিন্দাদের একাংশ ব্যস্ত ছিলেন, তখন তাঁদেরই মধ্যে এক জন সিসিএনের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে ঘটনার কথা জানান।

খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন সিসিএনের সদস্য রূপশ্রী রায়। একই সঙ্গে বৃদ্ধের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড়ের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজনকে ভর্তি করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন সংগঠনের অন্য সদস্যেরা।

এ দিন দুপুরে যাদবপুর থেকে অ্যাম্বুল্যান্স আসার পরে বৃদ্ধকে এম আর বাঙুরে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী করোনা সন্দেহভাজন বৃদ্ধ সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একসময় নিজেও সমাজের বিরূপ আচরণের শিকার হয়েছিলেন চিকিৎসক সায়ন্তন চক্রবর্তী। সিসিএনের অন্যতম সদস্য বলেন, ‘‘কোভিড সন্দেহভাজন বা করোনা আক্রান্তদের ভর্তি করানোর কাজ সাধারণত আমরা করি না। কিন্তু বৃদ্ধের কথা জানার পরে সংগঠনের কেউই নিজেদের ঠিক রাখতে পারেনি। ওই বৃদ্ধ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy