Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

Calcutta High Court: ছেলের অত্যাচারে ঘরছাড়া মা, কোর্টের নির্দেশে পুলিশ পাহরায় বাড়ি ফিরলেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধা

মা শেফালি দেবীকে পুলিশ বাড়িতে ফেরানোর পর তাঁদের বিরুদ্ধে মায়ের তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রবীর দত্ত ও পুত্রবধূ শম্পা দত্ত।

দীর্ঘ চার মাস ধরে ছেলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে অবশেষে জয়ী হলেন মা।

দীর্ঘ চার মাস ধরে ছেলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে অবশেষে জয়ী হলেন মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৪
Share: Save:

ছোট ছেলে ও পুত্রবধূ মারধর করে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিলেন বৃদ্ধা মাকে। কোনও ক্রমে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার পর দীর্ঘ চার মাস ধরে ছেলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে অবশেষে জয়ী হলেন মা । কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে বাঁকুড়া শহরের পালিতবাগান এলাকায় নিজের বাড়িতে ফিরলেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধা শেফালি দত্ত। হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি-কে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিয়ে ওই বৃদ্ধাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী রবিবার বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরে আনন্দিত অশীতিপর বৃদ্ধা শেফালি। বলেন, “অনেক কষ্ট করে দু’ছেলেকে বড় করেছিলাম। তাঁদের একজন আমাকে এই ভাবে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে ভাবিনি। আদালত সুবিচার করেছে। আমি নিজের বাড়িতে ফিরতে পারলাম। এখন শুধু একটাই ভয় যে ফের ছেলে ও বৌমা আমার উপর চড়াও না হয়।’’ বৃদ্ধার আইনজীবী সৌগত মিত্র বলেন, “আদালতের নির্দেশে বৃদ্ধার বাড়িতে রবিবার থেকে আগামী তিন দিন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পরবর্তীতে বৃদ্ধার উপর অত্যাচার হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি। আমরা অত্যন্ত খুশি বৃদ্ধা নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেফালির চার মেয়ে ও দু’ছেলে। স্বামী আগেই মারা গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ছোড়দার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন অবিবাহিত এক মেয়ে। এমন দাবি পরিবারের অন্য লোকেরাও করেন। এমন অবস্থায় শোকে পাথর হয়ে যাওয়া শেফালি ভেবেছিলেন বাকি জীবনটা কোনও মতে কাটিয়ে দেবেন নিজের বাড়িতেই। তাতেই বাধ সাধল বাড়ির অধিকার নিয়ে। ছোট ছেলে ও তাঁর বউ বাড়ি ও সম্পত্তি তাঁদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করেন মায়ের। অভিযোগ, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারও শুরু করেন তাঁরা। অবশেযে প্রাণের আশঙ্কায় আসানসোলে মেজো মেয়ে সুজাতা নাগের বাড়িতে আশ্রয় নেন ওই বৃদ্ধা। সেখান থেকেই নিজের বাড়িতে ফিরতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। তার পরই আদালতের এই নির্দেশে বাড়ি ফিরলেন তিনি।

মা শেফালি দেবীকে পুলিশ বাড়িতে ফেরানোর পর তাঁদের বিরুদ্ধে মায়ের তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রবীর দত্ত ও পুত্রবধূ শম্পা দত্ত। প্রবীর বলেন, “মা তাঁর নিজের বাড়িতে থাকবেন এতে আমাদের কী বলার আছে। তবে আমাদের বিরুদ্ধে তোলা মারধর ও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’ শম্পার দাবি, “মায়ের উপর অত্যাচারের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ যদিও মামলাকারীরা আদালতে যে সব ছবি দেখিয়েছেন, তাতে ওই বৃদ্ধার উপর আক্রমণ হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন বিচারপতি মান্থা।

এই প্রথম নয়, এর আগেও বিচারপতি মান্থা পুলিশ প্রহরা দিয়ে এক বৃদ্ধকে বাড়ি ফিরয়েছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘জীবনের সূর্যাস্তের সময় কোনও নাগরিককে আদালতে যেতে বাধ্য করা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যে জাতি নিজের বৃদ্ধ, অসুস্থ নাগরিকদের যত্ন নিতে পারে না, সে সম্পূর্ণ সভ্যতা অর্জন করেছে বলে গণ্য করা যায় না।’’ বিচারপতির পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, বয়স্ক বা প্রবীণ নাগরিকদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে নিজের বাড়িতে বসবাস করার। প্রয়োজনে তিনি নিজের পুত্র এবং পুত্রবধূকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে পারেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE