বিজ্ঞাপনের আবডালেই উপস্থাপিত করা হয়েছে তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবাংলায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপড়েন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ একটি বিজ্ঞাপন। যার উপজীব্য জন্মাষ্টমী এবং কৃষ্ণের মাখন চুরি করে খাওয়ার কাহিনি। সঙ্গে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছাও। কিন্তু তার আবডালেই উপস্থাপিত করা হয়েছে তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবাংলায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপড়েন। দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুতকারক একটি সংস্থার ওই বিজ্ঞাপন ঘিরে প্রত্যাশিত ভাবেই আলোড়ন উঠেছে।
জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছার নীচে ওই বিজ্ঞাপনটিতে রয়েছে একটি মাখনের বাক্স। যার ঢাকনাটি আধখোলা। বাক্সের ভিতর থেকে খবলা মেরে মাখন তুলে নেওয়া হয়েছে। ঢাকনার উপর ওই সংস্থার বহুবিশ্রুত এবং বহুল পরিচিত বালিকার ছবি। যার একটি চোখ দেখা যাচ্ছে।
এই পর্যন্ত ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক হল বিজ্ঞাপনের ক্যাপশন— ‘কেষ্টা বেটাই চোর’।
আপাতদৃষ্টিতে এই লাইনটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতার বহুচর্চিত এবং বহুপঠিত লাইন। কিন্তু অধুনা এই ‘কেষ্টা’ নামের একটি রাজনৈতিক ব্যঞ্জনাও তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে ‘চোর’ জুড়লে তা বিতর্কিতও বটে। কারণ, সিবিআই সম্প্রতি তৃণমূল নেতা অনুব্রতকে গরু পাচার কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করেছে। তিনি আপাতত সিবিআই হেফাজতে। শনিবার তাঁকে আবার আদালতে হাজির করানোর কথা তদন্তকারী সংস্থার।
অনুব্রতের ডাক নাম ‘কেষ্ট’। যে নামে তাঁকে সবসময়েই সম্বোধন করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে অনুব্রতের ‘কেষ্ট’ (বা ‘কেষ্টা’) নামটিও সমধিক প্রসিদ্ধ। রবি ঠাকুরের কবিতার আবডালে সেই কেষ্টাকে ‘চোর’ বলা হয়েছে ওই বিজ্ঞাপন বা শুভেচ্ছাবার্তাটিতে। প্রসঙ্গত, অনুব্রতের কন্যা যখন বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিয়ে এসেছিলেন, তখন সর্বসমক্ষেই তাঁকে ‘গরুচোর’ এবং ‘গরুচোরের মেয়ে’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল। আইনজীবীদের একাংশও অনুব্রতকে ‘গরুচোর’ বলে তাঁদের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতেই বিজ্ঞাপনের ‘কেষ্টা বেটাই চোর’ বাক্যটি অন্য ‘তাৎপর্য’ পেয়ে গিয়েছে।
বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গে জড়িত লোকজন এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে একান্ত আলোচনায় তাঁরা জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপনটির মধ্যে বুদ্ধির ছাপ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে খানিক ‘দুষ্টুমি’ও। এক পেশাদারের কথায়, ‘‘বিজ্ঞাপনটা এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে আপাতদৃষ্টিতে কিছু বলার নেই। জন্মাষ্টমীর দিন হল শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। এবং শিশু কৃষ্ণ ননীচোরা বলেই খ্যাত। আর শিশুকে কৃষ্ণের বদলে আদর করে ‘কেষ্টা’ বা ‘কেষ্ট’ তো বলা যেতেই পারে।’’
কিন্তু পাশাপাশিই ওই পেশাদার বলছেন, ‘‘বিজ্ঞাপনটিতে আরও একটি বিষয় আছে, যাকে পরিভাষায় আমরা বলি ‘ব্র্যান্ড রি-কল’। অর্থাৎ, একটি বিষয় দেখলে অন্য একটির সঙ্গে তার সাযুজ্য বা যোগাযোগ আপনা থেকেই স্থাপিত হয়ে যায়। এই বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও সেটা হতে বাধ্য। যতই মাখনের ডিব্বা থাক না কেন, কেষ্ট এবং চোর— এই দু’টি শব্দে অনুব্রতের বিষয়ে ‘ব্র্যান্ড রি-কল’ হতে বাধ্য!’’
তবে বিজ্ঞাপন জগতের একাধিক পেশাদার মেনে নিচ্ছেন যে, বিষয়টিতে ভাবনার অভিনবত্ব রয়েছে। রয়েছে নির্মাতার রসিকতাবোধ এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের ছোঁয়াও। একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধারের কথায়, ‘‘সঠিক দিনের সঠিক ব্যবহার বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যদি ওই সংস্থার জন্মাষ্টমীর জন্য অপেক্ষা করে থেকে এই দিনে বিজ্ঞাপনটি প্রচার করে থাকে, তা হলেও খুব অবাক হব না।’’
বিজ্ঞাপনটি নিয়ে কটাক্ষ মেশানো রসিকতা করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘যাঁরা বিজ্ঞাপনটি বানিয়েছেন, তাঁরা রবীন্দ্রনাথের কবিতাটি গোটাটা পড়েননি মনে হয়। কবি কেষ্টার আনুগত্যের পরিচয়ও তুলে ধরেছেন কবিতায়। ‘যত পায় বেত না পায় বেতন, তবু না চেতন মানে।’ লাইনটাও লিখেছেন কবি। দেখিয়েছেন, কেষ্টার এতটাই আনুগত্য যে তিনি কখনও সরে যান না। কঠিন অসুখের সময়েও পাশে থাকেন।’’ তবে কুণাল বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও ভাবেই কবিতা বা বিজ্ঞাপনের ‘কেষ্টা’-র সঙ্গে বাস্তবের কারও তুলনা টানতে চাইছেন না। কারও পক্ষও নিচ্ছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy