Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Ministry of Home Affairs

পোর্টালে জন্ম, মৃত্যু নথিবদ্ধ করতে হবে, এনআরসি চর্চার মধ্যেই রাজ্যকে চিঠি কেন্দ্রের

২০১৪ সালে জন্ম-মৃত্যুর অনলাইন নথিবদ্ধ করার যে পদ্ধতি বা পোর্টাল কেন্দ্রে চালু হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যুক্ত হয়েছে। সেই তালিকায় নাম নেই পশ্চিমবঙ্গের।

Amit Shah and Mamata banerjee

রাজ্যকে জন্ম-মৃত্যু নথিবদ্ধ করার তাদের নিজস্ব পদ্ধতির বদলে কেন্দ্রীয় পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিল অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ০৭:০১
Share: Save:

লোকসভা ভোটের বছর খানেক আগেই রাজ্যের রাজনীতিতে ফের শুরু হয়েছে ‘এনআরসি’-র চর্চা। মালদহ-মুর্শিদাবাদের গত প্রশাসনিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহেই রাজ্যকে জন্ম-মৃত্যু নথিবদ্ধ করার তাদের নিজস্ব পদ্ধতির বদলে কেন্দ্রীয় পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিল অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খবর, ২০১৪ সালে জন্ম-মৃত্যুর অনলাইন নথিবদ্ধ করার যে পদ্ধতি বা পোর্টাল কেন্দ্রে চালু হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যুক্ত হয়েছে। সেই তালিকায় নাম নেই পশ্চিমবঙ্গের। এই পদ্ধতির ব্যবহারে রাজ্যগুলিকে কোনও খরচও দিতে হয় না।

প্রবীণ কর্তাদের অনেকের মতে, এখন সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতে উপভোক্তার নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। তাতেই সরকারি সুবিধা সরাসরি পৌঁছে যায়। ভুয়ো বা একই নামের একাধিক উপভোক্তার উপস্থিতি এড়াতে ভবিষ্যতে কেন্দ্রের ওই পোর্টালের পূর্ণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে রাজ্য তাতে যুক্ত না হলে বরাদ্দ সংক্রান্ত নানা জটিলতা হতে পারে।

মন্ত্রক সূত্রের খবর, আধার-নির্ভর জন্ম এবং মৃত্যু নথিবদ্ধ করার পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব অনেক আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিয়েছিল কেন্দ্র। তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি রাজ্য। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জন্ম-মৃত্যু নথিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অভিন্ন পোর্টাল ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্যকে। ১৯৬৯ সালের ‘রেজিস্ট্রেশন অব বার্থস অ্যান্ড ডেথ’ আইন অনুযায়ী, দেশের রেজিস্ট্রার জেনারেলের হাতে এই ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। তারই উল্লেখ করে রাজ্যকে দ্রুত কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে যোগ দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেন্সাস কমিশনারের কার্যালয়।

গত বছরই জন্ম-মৃত্যুর নিজস্ব অভিন্ন তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে রাজ্য। পুরসভা-পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসন থেকে বেসরকারি হাসপাতাল স্তর পর্যন্ত এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লিখিত বার্তায় কেন্দ্রের অভিযোগ, কেন্দ্রের পদ্ধতি না মেনে নিজেরাই জন্ম-মৃত্যু নথিবদ্ধ করছে রাজ্য। তাতে কেন্দ্রের তথ্যভান্ডার নিয়মিত পরিমার্জন করা যাচ্ছে না। আবার একই কাজে একাধিক পদ্ধতি জটিলতা বাড়াচ্ছে। আটকানো যাচ্ছে না নকল এবং ভুয়ো তথ্য নথিবদ্ধ করার প্রবণতা। তাই রাজ্যের পদ্ধতিটিকে কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করতে বলা হয়েছে। প্রবীণ এক আমলার কথায়, “এই বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত। ফলে কেন্দ্রের বার্তাটি তাৎপর্যপূর্ণ।”

প্রসঙ্গত, মালদহ-মুর্শিদাবাদের গত প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, “এনআরসি নিয়ে ফের চিঠি পাঠিয়েছে। সরাসরি এনআরসি না বলে... থেমে গিয়েছিল, নির্বাচন এলেই মনে পড়ে। আমি কথা দিচ্ছি, করব না এবং করতেও দেব না। তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, যাদের সব কিছু পাওয়া যাবে না (আধার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি) তাদের বিদেশি হিসাবে ঘোষণা করবে। যাতে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া যায়। ভোটার তালিকায় নাম তুলবেন। আধার কার্ডগুলো আবার করতে বলছে ১০ বছর পরে। সেটা শুরু হলে করে নেবেন।”

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গোটা দেশে নথিবদ্ধ হওয়া জন্ম এবং মৃত্যুর প্রতিটি হিসাব রাখতে চাইছে কেন্দ্র। সেখানে সংশ্লিষ্ট যে কোনও ধরনের শংসাপত্র এবং আধারের মতো পরিষেবাও থাকবে। ফলে জন্ম এবং মৃত্যুর সঙ্গে আধারের হিসাব রাখাও সহজ হবে কেন্দ্রের কাছে।

প্রবীণ আমলারা জানাচ্ছেন, জন্ম-মৃত্যুর পূর্ণ হিসাব এবং তার সঙ্গে আধারের তথ্য এক ছাতার তলায় থাকলে জনসংখ্যার নিখুঁত এবং সহজ হিসাব কষাও সম্ভব হতে পারে। ঘটনাচক্রে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ইউআইডিএআই) রাজ্যকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিল, আধার-যুক্ত জন্মের নথিবদ্ধ পদ্ধতি চালু করতে রাজ্যগুলিকে ১০ কোটি টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE