ভক্ত: কালীঘাটে পুজো দিচ্ছেন অমিত শাহ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ঢোকার কথা ছিল বিকেল চারটে পাঁচ মিনিটে। প্রায় ঘণ্টাখানেক আগেই তিনি হাজির হলেন। রবিবার বিকেলে কালীঘাটে মায়ের গর্ভগৃহে ঢুকে অঞ্জলি দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তিটিকে নিয়েই দিনভর মেতে থাকল কালীঘাট মন্দির।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার কাছেই রবিবার দুপুরে কলকাতার কালীক্ষেত্রের স্বাভাবিক ছন্দ অবশ্য মোটামুটি অটুট থেকেছে। মন্দির লাগোয়া তল্লাট কিংবা কালীঘাট পাড়া—কোথাও দোকানপাট বন্ধ রাখা বা জনতার চলাফেরায় বিধিনিষেধ ছিল না। তবে এ দিন বেলা দেড়টা থেকেই মন্দিরের ‘দখল’ নিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা। শুধুমাত্র তিন জন সেবায়েতকে মন্দিরের ভিতরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। দুপুরবেলা মায়ের ভোগের সময়। এই ভোগ-পর্ব কিছুটা দ্রুত সেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেবায়েতরা।
রোজই বেলা দেড়টা থেকে খানিক ক্ষণ মা কালীর মন্দির বন্ধ রাখারই রীতি। পালাদারেরা নিজের মতো সাড়ে তিনটে কিংবা চারটে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ রাখেন। অমিত শাহের দর্শন-প্রক্রিয়া ঘিরে প্রস্তুতি ওই সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ দিন কালীঘাটের পুজোর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সেবায়েত সুভাষ চট্টোপাধ্যায়। তবে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে অমিত শাহ পৌঁছনর মিনিট দশেক আগে তাঁকেও মন্দির ছাড়তে হয়। মাকে ভোগ নিবেদনের পরে কালীঘাটের ভোগঘরও বন্ধ রাখা ছিল। ভোগঘরের সেবায়েতরাও এ দিন মন্দিরের ভিতরে থাকার অনুমতি পাননি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের বেঁধে দেওয়া সময়সুচী অনুযায়ী, কালীঘাটে বিকেল চারটে পাঁচ মিনিটে অমিত শাহের ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু বিকেল সওয়া তিনটেতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কনভয় মন্দিরের তিন নম্বর গেটে এসে যায়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন মন্ত্রীমশাই।
মা কালীকে ভোগ নিবেদনের কিছুক্ষণ পরই মন্দিরে এসে পৌঁছন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে ধীরে ধীরে সিড়ি দিয়ে গর্ভগৃহে নেমে যান অমিত শাহ। মায়ের মূর্তির সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে পুরোহিত জহর চট্টোপাধ্যায়ের হাতে একটি লাল বেনারসি শাড়ি তুলে দেন অমিত শাহ। পরে ওই শাড়ি স্বহস্তে মায়ের গায়ে জড়িয়ে দেন তিনি। কালীর গলায় পদ্মফুলের মালাও পরিয়েছেন বিজেপি-র শীর্ষনেতা। কালীর পায়ের নীচে রুপোর শিবকেও দই ও ডাবের জল দিয়ে ধুইয়ে দেন তিনি। পুরোহিত জহর চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সবটাই মায়ের পুজোর অঙ্গ। এ ভাবেই মা কালীর পাশাপাশি মহাদেবের পুজোও করা হয়।’’ পুরোহিতের মুখে শুনে-শুনে মা কালীর অঞ্জলির মন্ত্রও পড়েছেন অমিত শাহ। টানা সাত মিনিট চোখ বুজে অঞ্জলি দেন তিনি। এর পরে ফের মা কালী ও শিবের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে নমস্কার। অঞ্জলির পর অমিত শাহের হাতে প্রদীপ তুলে দিয়ে সংক্ষিপ্ত আরতিরও আয়োজন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাত পেতে মা কালীর চরণামৃতও খেয়েছেন। প্রসাদী পেঁড়ার টুকরোও একটু ভেঙে মুখে দেন তিনি। মাতৃমূর্তি কয়েক দফা প্রদক্ষিণের পরে পুরোহিতকে ১০০০ টাকা দক্ষিণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঠিক বিকেল তিনটে ৩৯ মিনিট নাগাদ মন্ত্রীপ্রবর মন্দিরের গর্ভগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
এর পরে আর কোনও কথা নয়। কালী কলকাত্তাওয়ালির দর্শন সেরে শুধু হাতজোড় করে হেসে গাড়িতে উঠে পড়েছেন অমিত শাহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy