Advertisement
E-Paper

নতুন মেয়াদের সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে ৩০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহের কর্মসূচি, ভোটে নজর রেখে ‘স্থিতাবস্থা’র ভাবনায় দিল্লি

রবিবার রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে এবং অমিত মালবীয়। জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, রাজ্য সভাপতি পদে কোনও সর্বোচ্চ স্তরের নেতার মনোনয়ন পত্র জমা করানোর কাজ রবিবারই সেরে ফেলা হচ্ছে।

বর্তমান রাজ্য কমিটির মেয়াদ শেষের আগে রবিবারই সম্ভবত শেষ সর্বোচ্চ স্তরের বৈঠক হল রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে।

বর্তমান রাজ্য কমিটির মেয়াদ শেষের আগে রবিবারই সম্ভবত শেষ সর্বোচ্চ স্তরের বৈঠক হল রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ২২:২২
Share
Save

মার্চের ৩০ তারিখ পরবর্তী মেয়াদের রাজ্য সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কর্মিসভা করতে চলেছেন অমিত শাহ। রবিবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বিজেপির রাজ্য দফতরে বৈঠক করলেন রাজ্য বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। হাজির ছিলেন তিন কেন্দ্রীয় নেতাও। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রকাশ্য সভা নয়, বড় কোনও প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত হবে শাহের কর্মসূচি। আর তার আগেই স্থির হয়ে যাবে, আগামী তিন বছরের জন্য রাজ্য বিজেপির রাশ কার হাতে থাকছে। সে লড়াইয়ে ‘স্থিতাবস্থা’ বহাল থাকার সম্ভাবনা এতটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে যে, বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব শাহি-কর্মসূচি আয়োজনেই আপাতত বেশি মনোনিবেশ করছেন।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৪৩। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি (২২টি) জেলায় সভাপতি নির্বাচন হয়ে গেলেই রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় বিজেপি নেতৃত্ব ঘোষণা করে দিয়েছেন ২৫টি জেলার সভাপতিদের নাম। সুতরাং রাজ্য সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতে আর কোনও বাধা নেই। এই আবহেই রবিবার রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল ও মঙ্গল পাণ্ডে এবং সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। ফলে জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, রাজ্য সভাপতি পদে কোনও সর্বোচ্চ স্তরের নেতার মনোনয়নপত্র জমা করানোর কাজ রবিবারই সেরে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দিতে হলে তাতে ‘প্রস্তাবক’ এবং ‘সমর্থক’দের স্বাক্ষর জরুরি। দলের ‘রাজ্য পরিষদে’র সদস্যেরা এই ‘প্রস্তাবক’ এবং ‘সমর্থক’ হন। নবনির্বাচিত জেলা সভাপতিরা নিজের নিজের জেলা থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্য পরিষদের জন্য সেই সব বিধানসভা ভিত্তিক প্রতিনিধিদের নাম পাঠিয়েছেন কি না স্পষ্ট নয়। যদি পাঠিয়েও থাকেন, তা হলেও তাঁদের কাউকেই প্রায় এ দিন দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায়নি। ফলে কারও মনোনয়নপত্রে তাঁদের স্বাক্ষর নেওয়ার কাজ হয়ে ওঠেনি বলেই বিজেপির একটি সূত্রের দাবি। কিন্তু আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্য পরিষদের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করে সভাপতিত্বের দাবিদারকে দিয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করানোর কাজ সেরে ফেলা হবে বলেই বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ নিয়ে তেমন রাখঢাক করেননি। রবিবারের বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আমরা জানিয়েছি যে, রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। নেতৃত্বের নির্দেশ এলেই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’’ সভাপতি পদে সুকান্তের প্রথম মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের শেষ দিকে তিনি সভাপতি হন। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের নভেম্বর নাগাদ তাঁর প্রথম মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরবর্তী মেয়াদে তিনি থাকুন বা অন্য কেউ, ‘সংগঠন পর্বে’র মধ্যে দিয়ে তা স্থির হওয়ার কথা। সেই ‘সংগঠন পর্বে’র প্রথম ধাপ ‘সদস্যতা অভিযানে’র সূচনা শাহ নিজে করে গিয়েছিলেন গত অক্টোবরের বঙ্গসফরে। সব ধাপ পেরিয়ে এ বার শুধু রাজ্য সভাপতি নির্বাচন বাকি। ২৯ মার্চ রাতে শাহ আবার বঙ্গে আসছেন। ৩০ তারিখে দিনভর দলীয় কর্মসূচিতে কাটাবেন। আসন্ন সেই শাহি সফরের আগেই রাজ্য সভাপতি নির্বাচন হয়ে যেতে চলেছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। রবিবারের বৈঠকে অমিত শাহের কর্মসূচির রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়েছে এবং তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েো দেওয়া হয়েছে।

২৫ জেলা সভাপতির যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সুকান্তের নিজের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে বিদায়ী সভাপতি তথা সুকান্তের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত স্বরূপ চৌধুরীকেই ফের সভাপতি পদে বসানো হয়েছে। শিলিগুড়ি, উত্তর নদিয়া, উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা এবং জয়নগরেও সভাপতিপদে বদল নেই। এমনকি বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে দিলীপ ঘোষের হারের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পূর্ব বর্ধমানের যে সভাপতি অভিজিৎ তা নিজেই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন, তাঁকেও ফের ওই পদে বহাল রাখা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় নতুন মুখ এসেছে। কিন্তু তালিকায় চোখ রাখলেই স্পষ্ট, কাঁথি-তমলুক বাদ দিলে, সর্বত্রই রাজ্য বিজেপির সংগঠনের বর্তমান নিয়ন্ত্রকদের ‘আস্থাভাজন’রা দায়িত্ব পেয়েছেন। এই তালিকাই রাজ্য নেতৃত্বে ‘স্থিতাবস্থা’ বহাল থাকার আভাস দিচ্ছে বলে বিজেপি সূত্র দাবি করছে। ঠিক এক বছরের মাথায় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও চাইছেন না রাজ্যে নেতৃত্বের স্তরকে পুরোপুরি ওলট-পালট করে দিতে। শীর্ষ স্তরে যতটা বেশি সম্ভব ‘স্থিতাবস্থা’ ধরে রাখার কথাই দিল্লি ভেবেছে। অন্য রকম ভাবনা থাকলে জেলা সভাপতিদের নতুন তালিকাতেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকত বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। কিন্তু যে ২৫টি নামের তালিকা সামনে এসেছে, তাতে ‘যুগ পরিবর্তনে’র চেষ্টার কোনও আভাস নেই।

‘যুগ পরিবর্তন’ যে এই মুহূর্তে কোনও বাধ্যবাধকতা নয়, সে আভাস বরং সুকান্তের মন্তব্যে মিলেছে। রবিবার তিনি বলেছেন, ‘‘ক্যাপ্টেন কে থাকলেন, সেটা বিজেপিতে বড় কথা নয়। বিজেপি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোয়। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা সবাই মিলে করা হয়। তাতে অনেক সময় ক্যাপ্টেন বদলে যায়। অনেক সময় একই ক্যাপ্টেন আবার দায়িত্ব পান। কিন্তু লক্ষ্যটা একই থাকে।’’ কিন্তু বিজেপিতে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিও গুরুত্বপূর্ণ। দলের ‘ক্যাপ্টেন’কে যদি অন্য কোনও দায়িত্বও সামলাতে হয়, তা হলে দায়িত্ব হস্তান্তর কি বাধ্যতামূলক? সুকান্তর জবাবে আভাস, ‘বেদবাক্যে’র মতো বাধ্যতা কোনও কিছুতেই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘সে বিষয়টা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখে নেবেন। তাঁদের টপকে আমাদের কারও ভাবতে যাওয়ার দরকার নেই।’’

Sukanta Majumdar BJP Bengal Amit Shah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}