এক জন পঞ্চায়েত সদস্যা। সরকারি কর্মীর স্ত্রী। তিন তলা বাড়ির মালকিন। অন্য জন একেবারেই নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ। এতটাই গরিব যে, এ পর্যন্ত বাড়ির দেওয়ালে চুনকামও করতে পারেননি। দু’জনেই সকাল থেকে হেঁসেলে ঢুকেছিলেন তাঁর জন্য ভালমন্দ রান্না করতে। তিনি গেলেন দু’টি বাড়িতেই। তবে তিন তলা বাড়ির গৃহিণীর হাতে শুধু জলই পান করলেন। আর টিফিন করলেন সেই চুনকামহীন দেওয়ালের বাড়ির গৃহিণীর তৈরি লুচি, আলুর দম, পায়েস দিয়ে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারহাটের গৌরাঙ্গনগরের সুকান্তপল্লীতে এসেছিলেন বুথকর্মীদের নিয়ে দলীয় বৈঠক করতে। বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া (২) পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যা দীপা রায়ের বা়ড়িতে। অমিতকে নিজের মার্বেল বসানো বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়ানোর খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর। ৭ দিন ধরে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ দিন পঞ্চব্যঞ্জন রান্নাও করেছিলেন। কিন্তু বিকেল ৩টের পরে সেখানে গিয়ে অমিত সাফ জানালেন, জল ছাড়া কিছুই খাবেন না!
দীপার কথায়, ‘‘খুব ইচ্ছে ছিল ওঁকে একটু খাওয়াব। কিন্তু উনি একটু জল ছাড়া আর কিছুই খেলেন না। কী আর করা যাবে!’’
পূর্বনির্ধারিত সূচি মতোই এলাকার কয়েকটি একেবারে গরিব পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন অমিত। তেমনই একটি বাড়ির গৃহিণী গীতা মণ্ডল। যিনি বিকেলবেলা কাচের প্লেট আর বাটি কোলে নিয়ে বেশ গদগদ। ওই কাচের প্লেট-বাটি থেকেই ফুলকো লুচি, আলুর দম, মোচার চপ, পায়েস, শসা, আঙুর তুলে খেয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। আপ্লুত গীতা বললেন, ‘‘গায়ে কাঁটা দিচ্ছে! আমাদের ঘরে বসে উনি লুচি-পায়েস খেলেন। এই থালা-বাটি তুলে রেখে দেব!’’
গীতা মণ্ডলের উল্টো দিকের টালির বাড়িতে থাকেন শর্মিষ্ঠা মণ্ডল। বিজেপির পুরনো কর্মী। অমিত তাঁর বাড়িতে আসছেন, তা আগেই জেনেছিলেন দলের নেতাদের থেকে। তাঁর জন্য রেখেছিলেন বাড়ির পুজোর ভোগের ভাত, ছোলার তরকারি আর নানা ফল। বাড়ির ঠাকুর ঘরটাও ফুলে ফুলে সাজিয়েছিলেন। অমিত ঠাকুর ঘরে ঢোকেননি। ভোগপ্রসাদ থেকে শুধু কলাটা তুলে খেয়েছেন।
খাওয়ার ফাঁকেই অমিতকে শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘এলাকার তরুণরা বেকার। দিনভর নেশা করে। বাড়িতে ফিরে উৎপাত করে। এদের কাজের ব্যবস্থা করুন।’’ অমিত অবশ্য কিছু বলেননি।
উত্তরবঙ্গে অমিতের পাত কোন বাড়িতে পড়বে, তা ঝাড়াই-বাছাই করতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। বড়লোকের ঘর ছেড়ে খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি সচেতন ভাবেই রাখা হয়েছিল এক গরিব আদিবাসীর বাড়িতে। গৌরাঙ্গনগরেও এ দিন সেই তুলনাটা চলেই এল। অমিত অল্প করে হলেও খাওয়াদাওয়া সারলেন একেবারে নিম্নবিত্তের বাড়িতেই। অবস্থাপন্ন পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy