অমিতের নাম না করে ক়ড়া জবাব মমতার। ফাইল চিত্র
সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য আর দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাবে বাংলায় জমে উঠল প্রাক-বিধানসভা নির্বাচনী রাজনৈতিক উত্তাপ।
দু’দিনের সফরে রাজ্যে এসে অমিত অভিযোগ তুলেছেন, তৃণমূল সরকার বাংলায় ‘অপশাসন’ চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়ায় অমিত বলেন, ‘‘উখাড় কর ফেক দিজিয়ে (উপড়ে ফেলে দিন)!’’
পরে অমিতের নাম না করে তার কড়া জবাব দেন মমতা। নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ফেক দো মানে কী? ভদ্রতার সীমা রাখুন!’’ পাশাপাশিই মমতা বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছে, উঠাকে ফেক দো! আমিও হিন্দি বলতে পারি। আমিও যদি উঠাকে ফেক দো বলি, তা হলে ভাল হবে তো?’’
এদিন বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্রভবনে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত। তার আগে বিরসা মুণ্ডার মূর্তিতে মালা দিতে যান তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। বাংলায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিতে সরকার গড়বে বিজেপি।’’ অমিতের মুখে এই দাবি অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও বাংলায় ক্ষমতা দখলের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। অতীতেও বলেছেন রাজ্য বিধানসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন জয়ের কথা।
অমিতের ওই বক্তব্যকে ‘দিবাস্বপ্ন’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসবেন বলে যে দাবি অমিত শাহ করেছেন, সেটা তাঁর দিবাস্বপ্ন। ওঁর এই দিবাস্বপ্ন সফল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’’
অতীতের সফরগুলির মতো অমিত এদিনও অভিযোগ করেছেন, মমতা সরকারের অনিচ্ছার জন্য রাজ্যের মানুষ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়ে গিয়েছেন বলেই বাংলায় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দিচ্ছেন না।’’ অমিতের দাবি, কেন্দ্র কৃষকদের জন্য যে ৬ হাজার টাকা করে দিচ্ছে কিংবা গরিব পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা চালু করেছে, তার সুবিধা পাচ্ছেন না বাংলার মানুষ। রাজ্য সরকার অন্তত ৮০টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অমিত।
যার পাল্টা সৌগত বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন। এখানে বিজেপি–র কোনও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা হয়নি। অমিত শাহ যা বলেছেন তার কোনও রাজনৈতিক প্রভাবও পড়বে না। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার দলিত, আদিবাসী, গরিবদের স্বার্থ দেখছে এবং আগামীতেও দেখবে।’’
মমতা অবশ্য ওইসব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং তিনি অমিতের সফরের সময় বাঁকুড়ায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড় নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন। মমতা বলেন, ‘‘দু’একটা রাজনৈতিক দল মহামারির নিয়ম মানছে না দেখা যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশে বলব, কোভিড স্প্রে করবেন না প্লিজ!’’ যারা মহামারির নিয়ম মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যাতে ব্যবস্থা নেয়, সেই নির্দেশও তিনি দেবেন বলে জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বিনা কারণে বাংলাকে ছোট করা হচ্ছে। বদনাম করা হচ্ছে।’’
বাঁকুড়ায় অমিত শাহকে ঘিরে বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য সফরের মধ্যে সিবিআইয়ের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। এদিন অমিত যখন বাঁকুড়ায় দলীয় বৈঠক করছেন, তখনই গরু পাচার নিয়ে তদন্তে কলকাতার চার জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। অন্যদিকে, এ দিনই দুর্গাপুর, আসানসোল, জামুড়িয়া, অন্ডাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় কয়লাপাচারে যুক্ত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তির বাড়ি ও অফিসে হানা দেন আয়কর দফতরের অফিসাররা। অমিতের সফর ও দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘তৎপরতা’-র মধ্যে সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিমন্ত্রণ খেতে এসেছেন। আর আজই সামরিক বাহিনী নিয়ে তল্লাশি হচ্ছে শুনছি আসানসোল, পুরুলিয়া, দুর্গাপুরে। রাজ্য পুলিশকে কিচ্ছুটি না জানিয়েই। কী প্ল্যান রে বাবা!’’
আরও পড়ুন: সুতোয় ঝুলছে ট্রাম্প-বাইডেনের ভাগ্য! ৬ রাজ্যের গণনা শেষের অপেক্ষায় দু’পক্ষ
আরও পড়ুন: ফ্রান্স থেকে টানা উড়ানে ভারতে পৌঁছল ৩টি রাফাল, ঠাঁই হচ্ছে অম্বালায়
প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীনই মমতা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্রীয় এজেন্সি চলে এসেছে! সেন্ট্রাল থেকে পুলিশ নিয়ে চলে আসছে এখানে! কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে এভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’’ রাজ্যের পুলিশকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ অফিসারদের হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে, ওদের কথা না শুনলে ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে ধরিয়ে দেব, ভিজিল্যান্সে ধরিয়ে দেব।’’
বাঁকুড়ায় বিজেপি কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজ সারেন আমিত শাহ। নিজস্ব চিত্র।
এদিন বাঁকুড়া সফরের পর শুক্রবার সারাদিনই কলকাতায় থাকার কথা অমিতের। সকালে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে যাওয়ার কথা তাঁর। এর পরে সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা ও হাওড়া জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে অমিত বৈঠক করবেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। শুক্রবার রাতেই তাঁর দিল্লি ফেরার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy