—ফাইল চিত্র
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দাওয়াইকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে কেন্দ্রকে চিঠি দিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বাজেটের পরামর্শ হিসেবে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখে অমিত মিত্রের দাবি, অতিমারির গ্রাস থেকে অর্থনীতিকে বের করে আনতে আমজনতার হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া হোক। যাতে বাজারে চাহিদা তৈরি হয়।
অমিতবাবুর যুক্তি, রাজ্যগুলির হাতেও বেশি করে টাকা দেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গকে তার প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া হোক। বিনা শর্তে রাজ্যগুলিকে বাড়তি ঋণ নিতে দেওয়া হোক। কারণ রাজ্যগুলিকেই কোভিডের মোকাবিলায় অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। এক কথায়, বাজেট হোক ‘যুক্তরাষ্ট্রীয়’।
লকডাউনে তলানিতে চলে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সীতারামন বাজারে জোগান বাড়ানোর জন্য একের পর এক দাওয়াই ঘোষণা করেছেন। কর্পোরেট করের হার কমানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থার জন্য ঋণের বন্দোবস্ত ক রা হয়েছে। আজ নির্মলাকে চিঠি লিখে অমিত বলেছেন, এই নীতিতে ভুল রয়েছে। তাই অর্থনীতির সঙ্কোচন আটকানো সম্ভব হয়নি। গত এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র ২৩.৯% সঙ্কোচন হয়েছিল। অর্থ বছরের প্রথম ছ’মাসে জিডিপি-র ১৫.৮% সঙ্কোচন হয়েছে। গোটা অর্থ বছরে জিডিপি ৭.৭% সঙ্কোচনের দিকে এগোচ্ছে।
অমিত চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘অর্থনীতির সে’র তত্ত্বে ভরসা করার বদলে অন্যান্য দেশের মতো কেইনসের নীতি নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।’’ অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনসের নীতি ছিল, বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে মন্দা কাটানো। উল্টো দিকে ফরাসি অর্থনীতিবিদ জঁ বাপতিস্ত সে-র তত্ত্ব ছিল, জোগান বাড়ালে চাহিদা আপনিই তৈরি হবে। তাতেই অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অমিতের যুক্তি, ব্যবসার স্বাভাবিক ওঠানামায় এই নিয়ম খাটে। অতিমারি বা বিশ্ব জুড়ে মন্দার সময় এই নিয়ম কাজ করে না।
গত সোমবারই সীতারামন বাজেটের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। অমিতবাবু কেন্দ্রের দাওয়াইয়ের সঙ্গে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তিনি কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের হাতে আরও টাকা তুলে দেওয়ার দাবি তোলায় অন্য অর্থমন্ত্রীরাও সমর্থন করেন। সূত্রের খবর, বিরোধীদের পাশাপাশি বিজেপি শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাও তাঁকে সমর্থন করেন। তখনই সীতারামন বলেন, অমিত চাইলে চিঠি লিখে তাঁর মতামত জানাতে পারেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে বৃহস্পতিবার লেখা চিঠিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, কোভিডের মোকাবিলায় কেন্দ্রের থেকে যথেষ্ট সাহায্য মিলছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। কেন্দ্রের থেকে মিলেছে মাত্র ২৭৯ কোটি টাকা। রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিলে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। আমফান-এর মোকাবিলায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চাইলেও মিলেছে মাত্র ২,২৫০ কোটি টাকা। সর্বোপরি, কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসেবে চলতি অর্থ বছরে রাজ্যের ৫৮,৯৫২ কোটি টাকা প্রাপ্য। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিলেছে ২৮ হাজার কোটি টাকার মতো। বকেয়া থেকে গিয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। সর্ব শিক্ষা, মিড-ডে মিল, একশো দিনের কাজের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজ্যের পাওনা বকেয়া রয়েছে। এই প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার দাবির সঙ্গেই অমিতবাবুর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় করের ভাগ আগে মাস পয়লাতেই মিলত। এখন তা ২০ তারিখে মেলে। ফলে মাসের শুরুতে রাজ্যের উপরে প্রবল আর্থিক চাপ পড়ে। মাসের প্রথম দিনেই রাজ্যের প্রাপ্য মেটানো হোক। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মোদী সরকার দায় কমিয়ে ফেলায় রাজ্যের উপরে চাপ তৈরি হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। জিএসটি ক্ষতিপূরণের পুরো অঙ্কই কেন্দ্র ধার করে রাজ্যকে ধার দিক বলেও ফের দাবি তুলেছেন অমিতবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy