দূরত্ব-বিধি নেই। নারায়ণ শিলা নিয়ে যাওয়া হল জগন্নাথের মাসির বাড়িতে। সোমবার মাহেশে। ছবি: প্রকাশ পাল
মেলা প্রায় কোথাও বসেনি। রাজ্যের কিছু ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা এ বারেও স্থগিত ছিল। তবে, সোমবার নিয়মরক্ষায় কিছু এলাকায় রথটান হল করোনার বিধিনিষেধ মেনে।
মাহেশ-সহ দু’একটি ক্ষেত্র ছাড়া রথযাত্রা উপলক্ষে ভিড় প্রায় ছিল না বললেই চলে।
ঐতিহ্যে পুরীর পরেই নাম আসে হুগলির মাহেশের রথযাত্রার। এই রথযাত্রার এ বার ৬২৫তম বর্ষ। এখানে এ বারেও রথটান হল না। সকাল থেকে জগন্নাথ মন্দিরে ভক্তেরা পুজো দিতে আসেন। অতিরিক্ত ভিড় হয়নি। পুলিশ ছিল। গত বারের মতোই বিকেলে তিন দেবতার প্রতিভূ হিসেবে নারায়ণ শিলা পদব্রজে জিটি রোড ধরে নিয়ে যাওয়া হল মাসির বাড়িতে। কীর্তনের দল ছিল। এ ক্ষেত্রে কোভিড-বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমে। পদব্রজে অংশগ্রহণকারী সকলের মুখে মাস্ক ছিল না। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নারায়ণ শিলা নিয়ে যান। প্রথম থেকে তিনি মাস্ক পরে ছিলেন। শেষ দিকে তাঁর মুখেও মাস্ক ছিল না। ২৮১ বছরের গুপ্তিপাড়ার রথও রাস্তায় নামেনি।
মায়াপুরের ইসকনে নিয়মরক্ষার রথযাত্রা হয়। উৎসব আগেই বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। এ দিন মন্দির চত্বরে কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে গদাভবন থেকে দেড়শো মিটার দূরের পঞ্চতত্ত্ব মন্দিরে রথযাত্রা সমাপ্ত
হয়। মন্দিরের সব গেট বন্ধ ছিল। কাউকে মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রাস্তায় ছিল কড়া
পুলিশ পাহারা।
দুর্গাপুরে ইসকন ও জগন্নাথ মন্দির থেকেও রথ বেরোয়নি। নিয়মরক্ষায় টানা হয়েছে আসানসোলের গাড়ুই ইসকন মন্দিরের রথ। এখানে রথ টানেন মন্ত্রী মলয় ঘটকও। সামান্য জমায়েত হয়েছিল। করোনা-বিধিও অনেকাংশে উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমান শহরের রাজবাড়ি, রাধাবল্লভ ঠাকুরবাড়ি, কালনার লালজি মন্দির বা রামসীতা রথ টানা হয়েছে নিয়মরক্ষায়। শহরের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের রথ বার হয়নি। কাটোয়ার মাধাইতলার রথ টানতে অনেকে জড়ো হন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ভিড় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
কোচবিহারের মদনমোহন এ বারে গাড়ি-রথে চেপে গঞ্জবাড়িতে মাসির বাড়ি যান। কোথাও ভিড় জমতে দেওয়া হয়নি। মালদহে ইসকনের রথ গাড়ি করেই বের হয়। এই জেলারই মকদমপুরের রথে কিছুটা ভিড় হয়।
পুরুলিয়ার বলরামপুরে রথ পথে নেমেছিল। মন্দির কমিটি আগে থেকে প্রচার করায় ভক্তসমাগম হয়নি। পুরুলিয়া শহরের মণি বাইজির রথ রাস্তায় নামেনি। রঘুনাথপুরে ভারত সেবাশ্রম মন্দির চত্বরে রথযাত্রা হয়েছে। মানবাজারের পাথমহরড়া রাজবাড়ির রথ চলেনি। লালগোলার রাজবাড়ির দধিবামনদেবকে রথে তুলে সামান্য এগিয়ে এনে যাত্রা শেষ করা হয়। কান্দির রাজবাড়িতে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার সঙ্গে রাধাবল্লভকে রথে তুলে পুজো করে নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। দু’একটি দোকান বসেছিল।
রথ জমেনি বীরভূমেও। বাঁকুড়া শহরেও রথযাত্রা হয়নি। তবে, বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জের রথে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। মাস্ক ছাড়া দেখা গিয়েছে প্রচুর লোককে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান বলেন, “ কেন ভিড় সামলানো গেল না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার হামাদামা বাজারে মাস্ক ছাড়াই বহু মানুষ রথযাত্রায় শামিল হন। যাত্রাপথে ছিল না দূরত্ববিধিও। পুলিশ অবশ্য এ কথা মানেনি। এই রথযাত্রা উপলক্ষে মেলাও বসে। হাড়োয়ার গোবেরিয়াতেও রথ ঘিরে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। যোগেশগঞ্জে পালকি চড়ে আসেন জগন্নাথ। দেখতে বিধি ভেঙে ভিড় জমে। রথযাত্রা বন্ধ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর, জয়নগর এবং ক্যানিংয়ে। পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহ্যবাহী মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রায় এ বার পালকিতে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে এক কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। অল্প-বিস্তর ভিড়ও হয়েছে। তমলুকের প্রাচীন মহাপ্রভু মন্দিরের ভিতরেই করোনা বিধি মেনে রথ টানা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ছিল দরজা। রামনগরের ডেমুরিয়া মাত্র ৫০ মিটার রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরেও জগন্নাথ মন্দিরে ভক্তহীন রথযাত্রা হয়েছে। গোপীবল্লভপুর ও লালগড়েও নিয়মরক্ষাটুকু হয়েছে। মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে অনলাইন রথযাত্রার পুজো সম্প্রচারের বন্দোবস্ত ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy