Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

কোভিড আবহ বাদ সাধছে সদ্যোজাতদের চিকিৎসায়

নিজেদের এবং অসংখ্য রেফার হওয়া সঙ্কটজনক শিশু নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এসএসকেএম।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ০১:৩৭
Share: Save:

সঙ্কটজনক সদ্যোজাতেরা জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা না পেলে ওদের বাঁচিয়ে রাখাই দায়। অথচ কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যে সেই চিকিৎসাই এখন ঘোর অনিশ্চিত।

কারণ, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হওয়ায় সে সব জায়গায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)। সেখানকার ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ওই সব হাসপাতালে আসা শিশুরা রেফার হয়ে ঘুরতে ঘুরতে আরও বেশি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এম আর বাঙুর, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ-এ সম্পূর্ণ এবং হাওড়া জেলা হাসপাতাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই বিভাগে কার্যত বন্ধ রোগী ভর্তি। এতে রোগীর প্রবল চাপ বেড়েছে কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে।

রাজ্যের পরিবার কল্যাণ অফিসার অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘এই জটিল সময়ে কয়েকটি হাসপাতালে এসএনসিইউ-এর পরিষেবা বন্ধ ও সীমিত হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

সমস্যা ঠিক কতটা, বোঝাতে শুরু করা যাক এম আর বাঙুর হাসপাতাল দিয়ে। কোভিড হাসপাতাল ঘোষিত হতেই বন্ধ হয়েছে এসএনসিইউ। অথচ ওই প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের যে সব হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে সেখানে তাঁরা অন্য কাজ করছেন। এ দিকে এম আর বাঙুর থেকে দক্ষিণ শহরতলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্কটজনক শিশুরা রেফার হচ্ছে মূলত এসএসকেএম বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অসীমবাবুর বক্তব্য, ‘‘কোভিড হাসপাতাল মেডিক্যাল। তাই এসএনসিইউ-তে ভর্তি সীমিত। শিশুদের আর জি করে রেফার করতে বলা হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: ট্রোজান হর্স’! বিদ্যুৎক্ষেত্রে চিনা সরঞ্জাম আমদানি নয়​

আরও পড়ুন: আবার ফিরল সেই টাকা ফেরানোর দৃশ্য, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে কি? ধন্দ তৃণমূলেই

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যেখানে গত বছর এপ্রিল, মে ও জুনে যথাক্রমে ৪৫০, ৪৬০ এবং ৪১০টি শিশু এসএনসিইউ-তে ভর্তি হয়েছিল সেখানে চলতি বছর এপ্রিল-জুনে ভর্তি হয়েছে ৮৫, ৪৯ ও ৬১ জন!

নিজেদের এবং অসংখ্য রেফার হওয়া সঙ্কটজনক শিশু নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এসএসকেএম। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর এপ্রিল-জুন এসএসকেএমের ১০০ শয্যার এসএনসিইউ-তে মাসে গড়ে ২৪০টি শিশু ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর মে-তে সেই সংখ্যা ৩১৪ এবং জুনে ৩০৬। মে ও জুনে মৃত্যু হয়েছে ২৯ ও ২১টি শিশুর।

এসএসকেএমের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘একাধিক হাসপাতাল ঘুরে শিশুরা আরও খারাপ অবস্থায় আসছে। এতেই মৃত্যুর হার বাড়ছে। অনেক প্রসূতিও ঘুরে এখানে ভর্তি হচ্ছেন। সেই সব সদ্যোজাতও এসএনসিইউ-তে ঢুকছে।

রেফার হওয়া অসুস্থ সদ্যোজাতদের চাপে নাভিশ্বাস উঠছে আর জি করের। সেখানে এসএনসিইউ-এ শয্যা ৯০টি। ভেন্টিলেটর ১৪টি। অথচ জুনেই এক-এক দিনে ১০৫- ১২৫টি রেফার হওয়া সদ্যোজাত ভর্তি হয়েছে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় এসএনসিইউ বন্ধ। ফলে অনেক সময়েই এক শয্যায় দু’জনকে ভর্তি করছি। এ ভাবে পরিষেবার মান ঠিক থাকবে কত দিন জানা নেই।”

এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ কোভিড হাসপাতাল নয়। কিন্তু এখানে কয়েক জন কোভিড রোগী মেলার পরে সদ্যোজাতদের আসা কমেছে। গত বছর প্রতি মাসে যেখানে হাসপাতালের এসএনসিইউ-তে ৩০০-৩৪০টি শিশু ভর্তি হয়েছিল, সেখানে চলতি বছর গত তিন মাসে ভর্তি হয়েছে যথাক্রমে ১৪৩, ১১২ ও ১২৩টি শিশু।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তাও মানছেন, সদ্যোজাতদের চিকিৎসার চাপ মূলত গিয়ে পড়েছে এসএসকেএম এবং আর জি করের উপরেই। এক বার স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এম আর বাঙুর থেকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেলে এসএনসিইউ স্থানান্তরিত করার। কিন্তু তাতে প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচ দেখে প্রস্তাব বাতিল হয়।

কোভিড আবহে সদ্যোজাতদের চিকিৎসার ঘাটতির অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি রাজ্যের এসএনসিইউ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy