Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Amartya Sen

Amartya Sen: সরকারি প্রকল্পেই জনতার আস্থা, বলছে অমর্ত্য সেনের সংস্থার রিপোর্ট

১০০ দিনের কাজের শ্রম দিবস তৈরিতে শীর্ষে থাকা পশ্চিমবঙ্গ (৭৭ দিন) ২০২০-র সঙ্কট পর্বে গড়ে মোটে ২৩ দিন কাজ দিতে পেরেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২২ ০৬:৫৩
Share: Save:

অমর্ত্য সেনের ভাষায় এঁরা ‘ফ্রন্টলাইন ভিক্টিম’ বা প্রথম সারির ভুক্তভোগী। অর্থাৎ, কোভিড-কালে এঁদের জীবন ও জীবিকাই সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মতে, যে প্রচণ্ড দুর্দশার মুখে এই সমস্ত মানুষকে পড়তে হয়েছে, তাতে করোনা হয়ে উঠেছে আর্থ-সামাজিক অতিমারিও। এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে কোভিড ও তা যুঝতে সরকারি নীতির বিষয়ে প্রতীচী ট্রাস্টের রিপোর্টে। আজ, বৃহস্পতিবার ট্রাস্টের সভাপতি অমর্ত্যের উপস্থিতিতে যা প্রকাশ হওয়ার কথা।

‘স্টেয়িং অ্যালাইভ’ শীর্ষক রিপোর্টে উঠে এসেছে, এ দেশে অতিমারির প্রথম ঢেউ (২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর) চলাকালীন এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে (২০২১-এর গোড়ায়) পশ্চিমবঙ্গে নানা ভাবে ভুক্তভোগী দু’হাজার পরিবারের কথা। তাদের সমীক্ষা সমৃদ্ধ রিপোর্টে প্রকাশ, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্গতির উল্টোপিঠেই রয়েছে আশাকর্মী এবং সহযোগী স্বাস্থ্য-সেবিকাদের (এএনএম) ‘বীরগাথা’। ‘সামান্য স্বেচ্ছাসেবী’ বলে ধরা হলেও, পাকা স্বাস্থ্যকর্তাদের মতো করেই তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট নিভৃতবাস কেন্দ্র চালিয়েছিলেন।

এই স্বাস্থ্যকর্মীদের লকডাউনে ‘ছুটি’ ছিল না। তাঁরা কখনও ঝুঁকি নিয়ে কোভিড সংক্রমণ জরিপ করেছেন, কখনও বাড়ি-বাড়ি ঘুরে কোমর্বিডিটি (আনুষঙ্গিক রোগ) চিহ্নিত করেছেন। আবার লকডাউন মিটলে, টিকার লক্ষ্যপূরণে সচেষ্ট হয়েছেন। রিপোর্টে অনুযায়ী, এক-এক জন আশাকর্মী ১,৮৯৮ জন রাজ্যবাসীর দায়িত্বে ছিলেন। দিনে ১৩ ঘণ্টা কাজ করেছেন। আবার সমীক্ষায় তাঁদের ৭১ শতাংশই বলেছেন, দায়বদ্ধতার তাগিদেই এই অসাধ্যসাধনে শামিল হয়েছিলেন।

এই কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রতীচীর সমীক্ষায় মাত্র দু’টি ক্ষেত্রে বাড়িতে প্রসবের নমুনা মিলেছে। অর্থাৎ, সার্বিক ভাবে নারী ও সদ্যোজাতদের স্বাস্থ্যে বড়সড় ত্রুটি ঘটতে দেননি ‘নিচুতলার’ স্বাস্থ্যকর্মীরা। অমর্ত্যকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট বলছে, ‘‘এই সঙ্কট পর্ব সামাজিক সংহতির দলিল।’’

অতিমারির সঙ্কট পর্বে আর এক দিকে রয়েছে কেন্দ্রের হঠাৎ লকডাউন ঘোষণায় অবহেলার শিকার পরিযায়ী শ্রমিকদের কথাও। তাঁদের পরিস্থিতি সরকারি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার মাপকাঠিও বটে। সমীক্ষার নমুনায় অন্তর্ভুক্ত এ রাজ্যের শ্রমিকেরা ১৯টি রাজ্য থেকে ফিরেছেন। বেশিরভাগই রাজমিস্ত্রি। অর্ধেকের বেশি ১ মে শ্রমজীবী স্পেশ্যাল ট্রেন চালু হওয়া পর্যন্ত আটকে ছিলেন। দেশে পরিজন, ভিন্‌ রাজ্যে বন্দি, কিন্তু চাকরি নেই। বড় অংশের থাকা-খাওয়ার সংস্থানও ছিল না। ৯০ দিন ওই অবস্থায় বন্দি থেকেছেন কেউ-কেউ। ২৫০ কিলোমিটার হেঁটে বা ৭০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ফেরার অভিজ্ঞতাও রয়েছে কারও।

সমীক্ষাভুক্ত পরিবারগুলির মধ্যে ৮৭.৮ শতাংশের রোজগার কমেছে। ১০০ দিনের কাজের কার্ডধারী পরিবারগুলির ৪৫ শতাংশ কাজ পায়নি। ১০০ দিনের কাজের শ্রম দিবস তৈরিতে শীর্ষে থাকা পশ্চিমবঙ্গ (৭৭ দিন) ২০২০-র সঙ্কট পর্বে গড়ে মোটে ২৩ দিন কাজ দিতে পেরেছে। তবে কেন্দ্রের টাকা আসতে দেরিও এই কাজ দিতে না-পারার সম্ভাব্য কারণ। সঙ্কটকালে কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যের গণবণ্টন প্রকল্পও দরিদ্রতমদের চাল জুগিয়েছে। সব থেকে বেশি ভুগেছে রেশনকার্ড-বিহীন পরিবারগুলি। খাদ্যসঙ্কট বেশি জনজাতিভুক্তদের মধ্যে। বিশেষত পুরুলিয়া (৪৭.৫%), বাঁকুড়ায় (৩৫%)।

প্রতীচী রিপোর্টের অন্যতম সমীক্ষক সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘বিপদে সরকারি প্রকল্পে ভরসার কথাই মানুষ বলেছেন। সরকারি স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গণবণ্টন ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থান সুরক্ষা নীতিতে জনতার আস্থার ছবিই উঠে এসেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amartya Sen Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy